Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসা বাণিজ্যে কুমিল্লায় স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে

| প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স না পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করা সম্পূর্ণ অবৈধ-বেআইনি। কুমিল্লায় অনেকেই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে এধরণের প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে এসে কখনো রোগী মরছে, কখনো রোগী ক্ষতির মুখে পড়ছে। সম্প্রতি দাউদকান্দির গৌরিপুরে লাইসেন্সবিহীন একটি হাসপাতালে যমজ সন্তানের একটিকে গর্ভে রেখে অপারেশন সম্পন্নের ঘটনা উচ্চ আদালত পর্যন্ত নাড়া দিয়েছে। কুমিল্লায় লাইসেন্সবিহীন দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মুখে নিয়ে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা জেলায় চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৭৫টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, বøাডব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক রয়েছে। এরমধ্যে কুমিল্লা মহানগরসহ সদর উপজেলায় রয়েছে ১০৩টি। অথচ নগরীসহ সদর উপজেলার গ্রামগঞ্জে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টির বেশি হবে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের বৈধ তালিকার (লাইসেন্সপ্রাপ্ত) বাইরে বেশকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে হাউজিং এষ্ট্রেটের ২নম্বর সেকশনে রয়েছে কুমিল্লা গ্যাষ্ট্রোলিভার এন্ড জেনারেল হসপিটাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে কুচাইতলি সিটি স্ক্যান এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস, ফাষ্টফেয়ার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডিজিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উপশম প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরী, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের বিপরীতে রয়েছে জয়ন্ত ডেন্টাল ক্লিনিক, মোগলটুলিতে রয়েছে এমালীম ডেন্টাল ডিজিটাল, লাকসাম রোড কাসেমুল উলুম মাদারাসা গলিতে ইকো ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, চকবাজারে এ.ওয়ান মেডিকেল সেন্টার, আশ্রাফপুরে পুনর্জীবন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, বাদুরতলায় আজাদ আলট্রাসনোগ্রাফীসহ বেশকটি প্রতিষ্ঠান। এদিকে কুমিল্লা সদর উপজেলা ছাড়া বাকি ১৫টি উপজেলার মধ্যে চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, বরুড়া, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, তিতাস, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দিতে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়া চলছে। এমনিভাবে প্রতিটি উপজেলা মিলে গোটা জেলায় দুই শতাধিক অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চূড়ান্ত অনুমোদন (লাইসেন্স) না পাওয়া পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নার্সিংহোম চালু করা যাবেনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কেবল আবেদন করে প্রতিষ্ঠান খুলে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বিধিপরিপন্থি। আমরা ইতিপূর্বে কুমিল্লা নগরীসহ কয়েকটি উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে এধরণের কিছু অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। লাইসেন্সবিহীন অবৈধগুলোর তালিকা করে সহসা অভিযান চালানো হবে।
কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের চিকিৎসাসেবা ও ভুল চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত রোগী ঝুঁকি বাড়ছে। রোগীর পাশাপাশি তাদের স্বজনদের মাঝেও আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুরে লাইসেন্সবিহীন লাইফ হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের খাদিজা আক্তারের গর্ভে থাকা দুই সন্তানের একটিকে সিজারিয়ান অপারেশন করে আরেক সন্তান পেটে রেখেই সিজার সমাপ্ত করার ঘটনা সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানের এসবের বিরুদ্ধে লাগাম টেনে না ধরলে চিকিৎসাসেবার মান অনেক নিচে নেমে যেতে পারে বলেও কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ