পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অনেক ঝড় ঝাপটা সয়ে ধীরে ধীরে সোনালী রংয়ে ভরে উঠেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের আমন ক্ষেতগুলো। রাজশাহী থেকে কমিউটার ট্রেনে চেপে রহনপুর স্টেশন পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘন্টার যাত্রায় দুপারের দিগন্ত বিস্তৃত আমন ক্ষেত গুলোয় কৃষকের সোনালী স্বপ্নের দুলনী দেখা যায়। কাচা পাকা ধানে ভরা ক্ষেত তাতে বাতাসের দুলানীতে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। কোথাও কোথাও ঝড় ঝাপটায় নুয়ে পড়া ধানের ক্ষেতও নজর এড়ায়না। এগুলো কেটে ঘরে নেবার দৃশ্য চোখে পড়ে। শেষ সময়ে এসে ভারী বর্ষণের সাথে ঝড়ো হাওয়া বেশ খানিকটা ক্ষতি করে দিয়েছে। তারপরও আবাদ মন্দ নয়। আগাম লাগানো আমন কাটাই মাড়াই চলছে স্বল্প পরিসরে। আর কটাদিন পর অগ্রহায়ন। আর অগ্রহায়ন মাসে ভরা ক্ষেতে দেখা যায় কৃষকের মধুর হাসি। কষ্ট আর ক্ষতি যতই হোক ঘাম ঝরানো ফসল ফলানোর আনন্দই আলাদা। ধানের সোঁদা গন্ধ মন মাতাল করে। ভুলিয়ে দেয় কৃষকের সব কষ্ট অভিমান। ললিত নগর স্টেশনে নেমে ভ্যান গাড়িতে চেপে ভূষনা গ্রামে দেখা মেলে এলাকার ভুস্বামী সদিদ সদরুল্লার। থাকেন শহরে। ধানের ক্ষেতের খোঁজ খবর নিতে এসেছেন। জানালেন এবার আমন আবাদ নিয়ে প্রকৃতি ভাল মন্দ দু’রকম আচরনই করেছে। যেমন বৃষ্টিপাত সহায়ক হয়েছে। আবার শেষ মুহুর্তে ভারী বর্ষণ আর ঝড়ো হাওয়া বেশ ক্ষতি করেছে। কাকনের নওশাদ আলী বলেন, এবার আবাদের শুরু থেকে রোগবালাই এর প্রকোপ বেশী দেখা যায়। এনিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ছিল কপালে। আবাদের মাঝামাঝি সময় পাতা মরা রোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমনের মুখে পড়ে আমন আবাদ। বৈরী আবহাওয়া আর পোকা মাকড়ের আক্রমনে ফলন একটু কম হলেও সার্বিক আবাদ ভালই হবে এমন আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। রহনপুর স্টেশন থেকে ভ্যানে চেপে বরেন্দ্র এলাকা ঘোরার সময় মাঠ জুড়ে শুধু ধান আর ধানের ক্ষেত। অবশ্য মাঝে মধ্যে ধান ক্ষেতের মধ্যে বিশাল বিশাল পেয়ারা আর আম বাগান গড়ে উঠেছে। ধান আবাদের জন্য বরেন্দ্রের সরবরাহ করা সেচের পানি ব্যবহার করে ধানের জমিকে বাগানে রুপান্তর করা হচ্ছে। বিষয়টা সার্বিক অর্থে সুখকর নয়। ধান উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে খ্যাত নওগার নিয়ামতপুর পোরসাতে ধানের জমিতে আম বাগানের বিস্তৃতি ঘটেছে সাংঘাতিক রকমের। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ধানের জমি রুপান্তর হচ্ছে পেয়ারার বাগানে। সব মিলিয়ে তিন ফসলী ধানের জমিতে ফলের বাগান গড়ে ওঠা খুব একটা সুখবর নয়। এমনটি বলছিলেন ট্রেনের যাত্রী আমিরুল করিম নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা। আলমগীর আরেফিন নামে আরেকজন বলেন, ফল আমাদের মূলখাদ্য নয়। তাই ধানের জমিতে কোন রকমেই ফলের জমিতে রুপান্তর করা ভাল লক্ষন নয়। মালিকদের ক্ষনিকের লাভ হলেও খাদ্যের উপর বিরুপ প্রভাব সুদুর প্রসারী। এখনি এর নিয়ন্ত্রন করা দরকার। কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের হিসাবে এবার রাজশাহী নওগা চাপাইনবাবগঞ্জ নাটোর জেলায় সাড়ে তিনলাখ হেক্টরের বেশী জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে যেসব ক্ষেতের আমনে পাক ধরেছে সল্প পরিসরে তা কেটে ঘরে নেয়া হচ্ছে। পুরোদমে কাটাই মাড়াই শুরু হবে নভেম্বর মাসের শেষ দিক হতে। নওগা মান্দার এলাকার চাষী শরিফুল শংকা প্রকাশ করে বলেন এখনো প্রকৃতি বিরুপ হবার সময় শেষ হয়নি। নভেম্বরে তো ঝড় বৃষ্টি হয়। রাজশাহী কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মওসুমে রাজশাহী জেলায় সত্তর হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে আমনে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। বান বর্ষনে আর ঝড়ে কিছু জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এবার পোকা মাকড় দমনের জন্য পার্চিং লগ লাইন এবং ধনচে গাছ লাগিয়ে বেশ উপকার হয়েছে। এবার খুব শক্ত হাতে কৃষক আমন আবাদের প্রতিকুলতা মোকাবেলা করেছে। ফলে বিরুপ আবহাওয়ার কারনে ক্ষতির মাত্রা কমবে। বর্তমানে ধানের বাজার দর মনপ্রতি আটশো টাকা। এমন দাম পুরো কাটাই মাড়াই মওসুমে প্রত্যাশা করছেন আবাদকারীরা। কেননা তাদের আমন আবাদ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়ে গেছে নয় হাজার টাকা। এখনো কাটাই মাড়াই পরিবহন খরচ আছে। এমনটি থাকলে লাভের মুখ দেখবে কৃষক। অন্যদিকে চলমান চড়া চালের বাজারে চিড়ে চ্যাপটা হওয়া ক্রেতারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নতুন ধান উঠলে চালের দাম কিছুটা হলেও সহনীয় হবার। তাছাড়া বরাবরের মত আমনকে ঘিরে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে নবান্নের উৎসবের নানা আয়োজনের প্রস্তুতিতো রয়েছে। সব মিলিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের দিগন্ত বিস্তৃত আমনের সোনালী ক্ষেতের সাথে বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। নতুন ধান ঘরে তোলার অপেক্ষার প্রহর গোনা। স্বপ্নের কথা সোনা যায় কৃষকের কন্ঠে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।