Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

সবজির চাহিদা পূরণে চাষিদের প্রাণান্ত চেষ্টা

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আর ক’টা দিন অপেক্ষা করলেই বাজারে পাওয়া যাবে প্রচুর শীতকালীন সবজি। সারাদেশের বেশির ভাগ সবজির যোগানদাতা ভেজিটেবল জোন যশোরের মাঠে মাঠে শীতকালীন সবজির আবাদ ও উৎপাদন চলছে পুরোদমে। শর্ট টাইম জাতের প্রচুর সবজি উৎপাদনের পথে। এবার অকাল বর্ষণে আগাম শীতকালীন সবজি আবাদের সর্বনাশ ঘটে। সবজির ঘাটতি হয় বিরাট। মূল্যবৃদ্ধি পায় অস্বাভাবিক। বর্ষণের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবজি চাষিরা কোমর বেঁধে মাঠে নামেন। সবজি আবাদ ও উৎপাদনে সফলও হচ্ছেন তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও নানামুখী কার্যক্রম হাতে নেয়। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, এক মাসের মধ্যেই সবজির ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ হবে। মূল্যও চলে আসবে সহনীয় পর্যায়ে। চাষি, মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও সবজি ব্যবসায়ীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, বর্ষণের পরবর্তী আবাদের সবজির সাথে ক্ষতি হয়নি সেসব আগাম আবাদের শীতকালীন সবজি তাও ওঠে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। ফলে সবজি নিয়ে দুশ্চিন্তা কেটে যাচ্ছে সহসাই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুনীল কুমার রায় গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বর্ষণে যশোর অঞ্চলে ক্ষতি ৪৬৫ হেক্টর জমির সবজি। মধ্য অক্টোবরে তিন দিনের অকাল অবিরাম ভারি বর্ষণে শুধু সবজি নয়, কৃষিকে কিছুটা পিছিয়ে দেয়। তার পরমুহূর্তে কৃষক মাঠে নামেন কোমর বেঁধে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিতে মাঠে নামেন। যশোর অঞ্চল থেকে সারাদেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ সবজি সরবরাহ হয়। বর্ষণের পর ইতোমধ্যে ১২-১৩ দিন পার হয়ে গেছে। নরম মাটিতে সিডিং সিস্টেমে শর্ট টাইমের জাতের মুলা, পালং শাক, লাল শাক, সবুজ শাক, বাঁধাকপি ও মরিচ আবাদ হয়েছে। যেগুলো বাজারে ওঠার পথে। আর এমনিতেই তো আপল্যান্ডে সবজি আবাদ হয়। শীতকালীন অন্যান্য সবজি বড়জোর এক মাসের মধ্যেই প্রচুর সবজি বাজারে সরবরাহ হয়ে যাবে। বর্ষণের কারণে এবার এত সবজির আবাদ হচ্ছে যে, সবজি উৎপাদন হবে অতিরিক্ত। তা ছাড়া বর্ষণে ক্ষতির বাইরের শীতকালীন সবজি তো একই সাথে খুব দ্রæত বাজারে উঠতে শুরু করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ চÐিদাস কুÐুু যশোরের বারীনগর, খাজুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ভেজিটেবিল জোনের চিত্র বর্ণনা করে জানান, মাঠে মাঠে সবজি আবাদ চলছে পুরোদমে। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও বাড়ির আঙিনায় এক ইঞ্চি জমিও কেউ ফেলে রাখছেন না। আবাদ হচ্ছে রকমারি সবজির। বেগুন, শিম, বাঁধাকপি, লাউ, কচুরমুখী, পেঁপে, পটল, করলা, ঢ়েঁড়স, কাকরল, বরবটি ও টমেটোসহ সব সবজি উৎপাদনের রীতিমতো উৎসব শুরু হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের দেয়া তথ্যানুযায়ী চলতি মৌসুমে গোটা অঞ্চলে ৪৫ হাজার ৬৮ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ ও উৎপাদন হয় যশোরে। সবজির ভাÐার খ্যাত যশোরের বারীনগর, হৈবতপুর, খাজুরা, চুড়ামনকাঠি ও আমবটতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সবজি আবাদ হচ্ছে মাটিতে নয়, জমির থেকে তিন-চার ফুট উঁচুতে মাঁচা করে। প্রবল বর্ষণেও সহজে ক্ষতি হয় না সবজি। তা ছাড়া পোকামাকড়ের উপদ্রবও হয় কম। বর্ষণে গোটা অঞ্চলে মাত্র সাড়ে ৪০০ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের প্রত্যাশা, এটি পুষিয়ে নেয়া যাবে। তা ছাড়া যেসব জমির সবজি ক্ষতি হয়নি, তা তো বাজারে ওঠতে শুরু করবে খুব দ্রæত। মাঠপর্যায়ের একজন কৃষি কর্মকর্তা বললেন, এই এলাকায় সবজিকে ঘিরে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে বহুদিন ধরে। সবজি চাষি, মাঠ শ্রমিক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, রফতানিকারক, পরিবহন ও ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাঠের দিকে দৃষ্টি রেখেছেন। তারাও তদারকি করছেন। সবমিলিয়ে সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে জোরেশোরে। সমস্যা একটা হচ্ছে, তা হলো বেগুনে এবার নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তা হলোÑ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক ক্ষেতের বেগুন। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ তৎপর। এ অঞ্চলে মধ্যে যশোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসারের বিরুদ্ধে চাষিরা অভিযোগ করেছেন, তিনি সহসা মাঠে নামেন না। সার নিয়ে করেন নানামুখী দুর্নীতি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সবজি

৪ এপ্রিল, ২০২২
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৯ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ