Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলোচনা ও সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আলোচনা ও সমঝোতা ছাড়া কখনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই সমঝোতা করতে চায় না, তারা সবসময় হেনতেন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু অতীতে ইতিহাস আছে জনগণের দাবির মুখে অবশ্যই তাদেরকে আলোচনায় আসতে হবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সাথে যৌথসভা শেষে সভার সিদ্ধান্তগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিএনপির সাথে কোন সমঝোতা হবে না আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই সমঝোতা করতে চায়নি। কিন্তু করতে হয়েছে, বাধ্য হয়েছে। সমঝোতা ও আলোচনা ছাড়া কখনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কথা থেকে বোঝা যায় আওয়ামী লীগ আসলে চায় না গণতন্ত্র থাকুক।
গণতন্ত্র চাইলে তারা বিরোধীদলগুলোর সাথে আলোচনায় বসতো। তিনি বলেন, বিএনপি সংঘাতে যেতে চায় না। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক যার মাধ্যমে জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে। জনগণের প্রত্যাশিত ও ভোটের সরকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হোক বিএনপি সেটাই চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ চায় না দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। কারণ জাতির কাছে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। হেনতেন ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকাই হলো তাদের লক্ষ্য। যেখানে সমগ্র জাতি চাইছে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) জানেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আর ক্ষমতায় যেতে পারবেনা। এজন্য তারা সমস্ত প্রতাবগুলো নাকচ করে দিচ্ছে। ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারা হামলা করেছে গণমাধ্যমে তাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় সবই প্রকাশিত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম এই ঘটনায় সরকার দুঃখ প্রকাশ করে নিন্দা জানাবে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনবে। কিন্তু তারা সেটা না করে চিরাচরিত অন্ধকার পথেই হাটছে। সেই অন্ধকার ও মিথ্যা থেকে তারা বের হতে পারেনি। মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটি ছিল ৭ নভেম্বর। এই দিনে বাংলাদেশের সৈনিক ও জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং তা সফল হয়। এজন্য ৭ নভেম্বরকে দেশবাসী জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুসংহত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যখন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেশপ্রেমিক সৈনিক ও মানুষের ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে সুসংহত করা হয়েছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সূচনা হয়েছিল এর মাধ্যমে। তিনি বলেন, সেই চেতনাকে সব সময় আমরা ধারণ করতে সক্ষম হয়নি। আজকে এমনই একটা শাসন ব্যবস্থার মধ্যে পড়েছি যার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। গণতন্ত্র ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। জনগণ যে আশা আকাক্সক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে ফেলা হয়েছে। এক দলীয় শাসনকে ভিন্নভাবে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা প্রিয়, কখনই একদলীয় শাসন মেনে নেবে না। যারা এটা করতে চান তাদের সেই অপচেষ্টা ও অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ জনগণ পরাজিত করবে। তিনি এই দিবসের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য শপথ গ্রহণ এবং গণতন্ত্র, বহুদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহŸান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দলের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন দলের সিনিয়র যুগ্ম
মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস
উপলক্ষে ঐ দিন সকাল ৬ টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় প্রতাকা উত্তোলন করা হবে। একই দিন সকাল ১০ টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে পোষ্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। অনুরুপভাবে বিএনপি’র উদ্যোগে সারাদেশে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যথাযোগ্য মর্যাদায় আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিসাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আব্দুস সালাম, কুমিল্লা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল আউয়াল খানসহ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ