Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাগামহীন পেঁয়াজের দাম

পাইকারীতে কেজিতে ৭৫ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে পেঁয়াজের দাম। গেলো তিন থেকে চার মাসের ব্যবধানে নিত্যপণ্যটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। পাইকারী পর্যায়ে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭৫ টাকা পর্যন্ত, যেটি মুদির দোকানে গিয়ে ঠেকছে প্রায় ৯০ টাকায়। পাইকারী ব্যবসায়িরা বলছেন, এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদনে ঘাটতি এবং ভারতীয় রপ্তানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দেয়ায় বাজারে এমন অস্থিরতা। এ অবস্থায় হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
পেঁজারের ঝাঁজ খাবারের স্বাদ বাড়ালেও, আতঙ্ক বাড়িয়ে চলেছে বাজারে। লাগামহীন দামে জনজীবনে অস্থিরতার নতুন মাত্রা যোগ করে চলছে এই ঝাঁজ। আর বাজারে দাম বাড়ার প্রতিযোগীতায়ও এখন শীর্ষে রয়েছে পণ্যটি। গেল তিন থেকে চার মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আর গেলো এক সপ্তাহে তৈরি হয়েছে যেন ভৌতিক অবস্থা।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় আড়ৎ, শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এই পরিস্থিতির জন্য ব্যবসায়ীরা দায় চাপালেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ভারতীয় রপ্তানিকারদের উপর।
শ্যামবাজার থেকে পণ্যটি যখন অন্যান্য বাজারে আসছে তখন কেজিতে বাড়ছে আরো প্রায় ৫ টাকা। কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭৫-৮০ আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকায়।
আর ভোক্তা পর্যায়ে অর্থাৎ মুদি দোকানে পেয়াঁজের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। শ্যামবাজারের সাথে মুদি দোকোনের পেঁয়াজের দামের পার্থক্য কেজিতে প্রায় ১৫-২০ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকানগুলোতে দেশী পেঁয়াজ ৮০-৯০ আর ভারতীয় পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়।
সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা যায়নি। বাজারে পাইকারি আড়তে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের বস্তা দেখা গেছে। আর খুচরা বাজারেও কোনো ধরনের সংকট লক্ষ করা যায়নি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের পেঁয়াজের বাজার ভারত থেকে আমদানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়েছে, তাই দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও কমে গেছে। এ কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তি। অন্যদিকে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে দেশি পেঁয়াজ আছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই, তাই দাম একটু বাড়তির দিকে।
টনপ্রতি ২০০ ডলার বাড়িয়েছে ভারতের ব্যবসায়ীরা
হঠাৎ করেই এ সপ্তাহের শুরু থেকে পেঁয়াজের এলসি মূল্য টনপ্রতি ২০০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কমেছে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি। এ অবস্থায় হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে দু’দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১২ থেকে ১৪ টাকা।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবলুর রহমান বাবলু জানান, দফায় দফায় পেঁয়াজের এলসি মূল্য বাড়িয়ে এক সপ্তাহ আগে টনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারে উন্নীত করে ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকরা। গত রোববার হঠাৎ করেই ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের এলসি মূল্য ৫০০ ডলার থেকে ৭০০ ডলারে উন্নীত করে।
আমদানিকারক বাবলুর রহমান জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন বন্যার কারণে সে দেশের পাটনা, বিহার, কানপুর, ইন্দর, গুজরাট, রাজস্থান রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রয়েছে। শুধু নাসিক ও বেঙ্গালোর থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তবে আমদানি না বাড়ালে দাম আরও বাড়তে পারে। এলসি মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পেঁয়াজ আমদানি। চাহিদার তুলনায় কম পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় এর প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে জানান আমদানিকারকরা।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম কোনো সময় কমতে পারে আবার বাড়তেও পারে। যখন কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, তখনই জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তাই এটা দূর করতে সরকারকেই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে চাহিদা নিরূপণ করে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে পণ্যের দাম কমতে বাধ্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেঁয়াজ

১৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ