Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেও লুটপাট

| প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কলারোয়ায় প্রায় ২ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে টেন্ডার ছাড়াই অখ্যাত ব্যবসায়ীকে দিয়ে সোলার ক্রয় ও সরবরাহ
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা : কলারোয়ায় সোলার সরবরাহে গুরুতর অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও সীমাহীন দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে টেন্ডার ছাড়াই এক অখ্যাত ব্যবসায়ীকে দিয়ে সোলার ক্রয় ও সরবরাহ করা হয়েছে। আর কম ক্ষমতার ও নিম্মানের সোলার সরবরাহ করে সিংহভাগ টাকা লোপাট করা হয়েছে। ত্রাণ দপ্তর জানায়, গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের সাধারন কোটায় ও সংসদ সদস্যের বিশেষ কোটায় টিআর ও কাবিটা প্রকল্পে সর্বমোট বরাদ্ধের অর্ধেক ১ কোটি ৯৩ লাখ ৯৫ হাজার ৪’শ ৯৮ টাকা সোলার স্থাপনে বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায় সোলারে বরাদ্দের প্রথম পর্যায়ের সমুদয় টাকা গত এপ্রিল মাসের ২য় সপ্তাহে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের সমুদয় টাকা জুন মাসের শেষে অগ্রিম উত্তোলন করেন। বিপুল অংকের এই ক্রয়ের জন্য কোনো টেন্ডার আহবান করা হয়নি। গোপন ভাগ বাটোয়ারার চুক্তিতে অগ্রিম নেয়া টাকায় জনৈক প্রকাশ নামে অখ্যাত ব্যবসায়ীকে দিয়ে নিম্মাননের ও কম ক্ষমতার সোলার ক্রয় ও সরবরাহ করা হয়েছে। ৫৬ হাজার ৫’শ টাকার সোলার ষ্ট্রীট লাইটে লোহার পাইপ রং করে তার ওপর ৪,২৫০ টাকার ৮৫ ওয়াটের প্যানেল, ৪ হাজার টাকার ৩০ এম্পিয়ারের ব্যাটারী দেয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরবরাহ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়। স্থাপনের দু’মাসের মাথায় শাকদা মিশন মোড়, চিতলা ভাটার মোড়, খোর্দ্দ বাজার, মাদরা বাজার এবং সরসকাটি বাজারে নিম্নমানের এই সোলার ষ্ট্রীট লাইট মাঝে মাঝে জ্বলে নেভে এবং কিছু দেখা যায় না। আর মেঘলা আবহাওয়ায় আলোর উজ্জলতা কম হয় এবং রাত ১০ টার পরে আলো নিভে যায় বলে স্থানীয়রা জানায়। এদিকে ৩৭ হাজার টাকা করে বরাদ্দে ধানঘোরা ও খাসপুর প্রাইমারী স্কুলে দেয়া ১’শ ওয়াটের সোলারে মাত্র চারটা করে লাইট জ্বলে বলে প্রধান শিক্ষকদ্বয় জানান। কিন্তু ১’শ ওয়াটের সোলারে ৫টা ফ্যান ৭ লাইট জ্বালানো সম্ভব যার বাজার মূল্য ১৮ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দে পাচপোতার মেম¦র বেলাল ও রাজপুরের ইয়াদ আলীর বাড়িতে ৪০ ওয়াটের সোলার প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারের একটি সুত্র জানায়, ৪০ ওয়াটের সোলার স্থাপনে (প্যানেলের দাম ২০০০ টাকা, ব্যাটারী ৪০০০ টাকা, কণ্ট্রোলার ৫’শ টাকা, তার, বাল্ব, ফিটিং) সর্বোচ্চ খরচ ৮ হাজার টাকা। সোনাবাড়িয়া ইউপি মেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজামান জানান, মাদরা সরদার পাড়া জামে মসজিদে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২৫৫ ওয়াটের সোলার দিয়ে বরাদ্দ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং তার নিজ বাড়িতে ১৫ হাজার টাকার ৮০ ওয়াটের সোলার দিয়ে বরাদ্দ ৪১ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। এভাবে সর্বত্র বরাদ্দের প্রায় এক তৃতীয়াংশ টাকার সোলার দিয়ে লাখ লাখ টাকা লোপাট হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। নীতিমালা লঙ্ঘন করে পল্লী বিদ্যুতায়িত ধনাঢ্য উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দলুইপুরের সেলিনা ময়নার বাড়ি ৪৫ হাজার টাকার, বালিয়াডাঙ্গার আজাদ মাষ্টারের বাড়ি ৫০ হাজার টাকার, শাকদা গ্রামে একই ছাদের নীচে বসবাবরত ইব্রাহিম খানের ৩০ হাজার টাকার ও তার সহোদর ভ্রাতা ফারুক খানের ৩০ হাজার টাকার সোলারসহ ধনাঢ্য ও বিদ্যুতায়িত অর্ধশতাধিক বাড়িতে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সোলার দেয়া হয়েছে। হিজলদী ঘোজের বটতলা মাদ্রাসায়, আলাইপুর শেখপাড়া জামে মসজিদ, আলাইপুর দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ, খোর্দ্দ নজিবর রহমান পিং খোদা বকস একই গ্রামের আজাহারুল পিতা আমিন দফাদার, পাচনল ঢালী পাড়া মসজিদসহ বহু স্থানে পৃথকভাবে দুই দফা বিল তুলে নেয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা একটি করে সোলার পেয়েছেন বলে জানান। প্রথম অগ্রিম গ্রহণের সাড়ে ৬ মাস এবং দ্বিতীয় অগ্রিম নেয়ার ৪ মাস পরে এ সংবাদ লেখার সময় যুগিখালী ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, বুঝতলা বাজারে, রামকৃষœপুর মোড়, কাকডাঙ্গা বিওপি এলাকায় চোরাচালান দমন, নারী ও শিশু পাচার রোধে অন্ধকার এলাকা আলোকিত করতে বরাদ্দ ১৫টি সোলারসহ অর্ধশতাধিক সোলারের হদিস নেই বলে এলাকাবাসি জানায়। বিগত ২০১৪-২০১৫ সালে সাড়ে ৫ টন করে চাল বরাদ্দে রামকৃষপুর কামাল বখত সাকি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে, শহিদ স্মৃতি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রদত্ত সোলার ২ বছর পরে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পৌছায়নি বলে প্রধান শিক্ষকদ্বয় জানান। সোলার ষ্ট্রীট লাইট বরাদ্দ ‘পাকুড়িয়া যুজ্জ সরদারের মোড়’ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপরে কথা বলার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে টেলিফোন করা হলে স্যার অফিসে নেই বলে জানানো হয়। কলারোয়া-তালার এমপি এ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্যাহ বলেন, সুষ্ঠভাবে প্রকল্প ব্স্তবায়নের দায়িত্ব পিআইও এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। এতে দূর্ণীতি হলে তার দায় তাদের বহণ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ