Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কওমী স্বীকৃতির অগ্রগতি আশানুরূপ বিভ্রান্তিতে কান দিবেন না-বেফাকের বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গতকাল বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ ইনকিলাবে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বলেন, কওমী সনদের স্বীকৃতি ও মান অর্জনে যে কার্যক্রম চলছে তা বেফাকুল মাদারিস বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের বিগত আমেলা বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদপত্র ও অন্যান্য মিডিয়ায় একশ্রেণীর কওমী বিদ্বেষী কর্তৃক যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এরও নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়। সকলের অবগতির জন্য স্বীকৃতি বাস্তবায়নের জন্য বেফাকের কার্যক্রম সবিস্তারে তুলে ধরা হল।
গত ২৩/১১/২০১৬ ঈ. তারিখে আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা. বা.) কর্তৃক প্রেরিত একটি চিঠি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের কওমী মাদরাসার সবকটি বোর্ড আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেবের নেতৃত্বে এক হয়ে এলে আমি এবং আমার সরকার কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান দিতে প্রস্তুত। কোন সনদ মাস্টার্সের সমমানের হতে হলে তা কোন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া আবশ্যক। এ ব্যাপারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা. বা.) হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আরও একটি চিঠি প্ররণ করেন। এখানে মাওলানা আশরাফ আলী সাহেবের নেতৃত্বে মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ ও মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদসহ সকল বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রেরিত ১৩ জন উলামা উপস্থিত ছিলেন। পত্রটি গ্রহণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্শাআল্লাহ আমি আমার সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সনদের মান জাতীয় সংসদে পাশ করিয়ে তার আইনগত ভিত্তি রচনা করে দিব। বলা বাহুল্য সনদের মানের আইনগত ভিত্তি কিভাবে রচিত হলে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় থাকবে, দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহ অক্ষুণœ থাকবে তার একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা উক্ত পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া দাওরায়ে হাদীসের নেসাবে তালীম ও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ধারাসমূহের ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে। অতঃপর ১৭/০৮/২০১৭ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে হযরতের ব্যাখ্যাত পত্রসহ শিক্ষামন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে (স. বি. মাদরাসাকে) আবেদনের বিষয়ে অতিসত্তর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে কার্যালয়কে অবহিত করার আদেশ জারী করা হয়। আদেশের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রনালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে গত ২৭/০৮/২০১৭ ঈ. তারিখে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান এর বরাবরে প্রজ্ঞাপনটিকে আইনি ভিত্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় আইনের খসড়া প্রণয়ন করে মন্ত্রনালয়ে প্রেরণের অনুরোধ করা হয়। তারপর গত ২৪/০৯/২০১৭ ঈ. তারিখে অফিস আদেশ রূপে আইনের খসড়া তৈরী করার জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে ১৬/১০/২০১৭ ঈ. তারিখে উক্ত কমিটির প্রথম সভা করে।
বলা বাহুল্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি জনাব সামীম মোহাম্মদ আফজল সাহেব মঞ্জুরি কমিশনের সভার নোটিশসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তাকে ফরিদাবাদ মাদরাসায় পাঠিয়ে কওমী মাদরাসার সনদের মান নেওয়ার ধরন সম্পর্কে অবহিত করার জন্য যেতে বলেন। হাইআতুল উলয়ার কো চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ সাহেব ও মুফতী নূরুল আমীন সাহেবকে নিয়ে ডিজির সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে সনদের মান গ্রহণ করার ধরন সম্পর্কে অবহিত করেন। ডিজি সাহেব হাইআর গঠনতন্ত্র ও নেসাবে তালীম চাইলে মাওলান আশরাফ আলী সাহেব এ দুটো তাকে দেন। মঞ্জুরি কমিশন থেকে বলা হয়েছিল যে, আইনগত ভিত্তির খসড়া তৈরীর গঠনতন্ত্র ও নেসাবে তালীম প্রয়োজন। হাইআতুল উলয়ার গঠনতন্ত্রের খসড়া কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব হাইয়াতুল উলয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা ইসমাঈল সাহেবের মাধ্যমে তৈরী করিয়ে ছিলেন। অতঃপর তার নেতৃত্বে তা প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়। উক্ত পর্যালোচনায় মাওলানা আনোয়ার শাহ সাহেব, মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ সাহেব, মাওলানা নুরুল ইসলাম সাহেব, মাওলানা সাজেদুর রহমান সাহেব, মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেব, মুফতী নূরুল আমীন সাহেব ও মাওলানা ইসমাঈল সাহেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই হাইআতুল উলয়ার সদস্য। গত ০২/১০/২০১৭ ঈ. তারিখের মিটিংয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে উক্ত গঠনতন্ত্র অক্ষরে অক্ষরে পাঠ করে সংশোধন, সংযোজন সহ অনুমোদন করা হয়। এ সভায় সকল বোর্ডের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সর্বসম্মতিক্রমে গঠনতন্ত্র অনুমোদন লাভ করে।
মরহুম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদী রহ. এর ইন্তেকালের পূর্ব থেকে বেফাকে বেশ কিছু অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এ সমস্যা নিরসনকল্পে এবং বেফাককে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি খাস কমিটি গঠন করা হয়। খাস কমিটি বিগত এক বছরে ৭টি মিটিং করে। কমিটি অনিয়ম দূর করা ও নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সকল অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার কারণ চিহ্নিত না হওয়ায় তদন্ত কার্য সমাপ্ত করা সম্ভবপর হয়নি। তদন্ত যথানিয়মে চলমান। কারণসমূহ চিহ্নিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউ,জি,সি) আল হাইআতুল’উলইয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর সম্মানিত চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা:বা:)-এর বরাবরে এ মর্মে একটি পত্র প্রেরণ করেছেন যে, তিনি যেন মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য হিসাবে পাঁচজন বিশিষ্ট আলেমের মনোনীত তালিকা মঞ্জুরী কমিশনে প্রেরণ করেন এবং মঞ্জুরী কমিশনের স্বীকৃতির ধরণ এবং স্বীকৃতির আইন সম্বলিত খসড়া আগামী ১৫ই নভেম্বর ২০১৭ইং তারিখের মধ্যে জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ অতিশীঘ্রই তিনি উক্ত ৫ জন মনোনীত সদস্যের তালিকাসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। প্রসঙ্গত: কওমী সনদের হিতাকাঙ্খী দাবীদার এক শ্রেণীর বিবৃতিদাতা গত ২৩ অক্টোবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কওমী শিক্ষা রক্ষা ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে মুরুব্বীদের দৃষ্টি আকর্ষণের নামে বেফাকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জড়িয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য স্পস্ট, বেফাক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। সুতরাং তার গ্রহণযোগ্যতা ও আমানতদারিতার ব্যাপারে এর বর্তমান জিম্মাদারগণ সম্পূর্ণ সজাগ ও সতর্ক। একক কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাব থেকে বেফাক মুক্ত আছে এবং সব সময় থাকবে। বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. এর সাহেবজাদা মাওলানা আনাছ মাদানী এবং মুফতী নুরুল আমীন এর নাম জড়িয়ে যে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কওমী সনদের মান ঘোষিত হওয়ার পর তার বাস্তব রূপদানের পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ হিসাবে দায়িত্বশীলগণ যে সকল কার্যাবলী সম্পাদন করেছেন এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যে কয়টি বৈঠক করেছেন তা সকলের জ্ঞাতসারে, সম্মতিতে এবং আলোচনার ভিত্তিতেই হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এককভাবে কাউকে দায়ী করার বা কোন পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ন্যূনতম সুযোগ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কওমী স্বীকৃতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ