বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিকিকোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত চাঁদপুরে ব্যাপক সচেতনা সৃষ্টির পরও বাল্যবিয়ের ঘটনা থেমে নেই। ৮টি উপজেলায় কম-বেশি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেই চলছে। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা ঘনবসতিপূর্ণ। ৩টি উপজেলায় বাস করছে প্রায় সাড়ে ১০ লাখের (হালনাগাদ) অধিক মানুষ। জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে সেখানে বাড়ছে বাল্য বিয়ের ঘটনা। সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উল্লেখিত দুটি উপজেলায় বাল্য বিয়ে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কতিপয় লোভী পিতা-মাতা তাদের কিশোর ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন অহরহ। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বিয়ের নেপথ্যে কাজ করছে এলাকার কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা এবং হুজুর ও কাজীদের সহায়তা। সেই সাথে জনপ্রতিনিধি তথা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের যোগসাজশ। জনপ্রতিনিধিরা অনেক সময় বিয়ে পড়াতে এবং রেজিস্ট্রি করাতে বাধ্য করছেন অনেক হুজুর ও কাজীদের। তাদের অপতৎপরতায় এক মাসেই ফরিদগঞ্জের বালিথুবার একটি গ্রামে ৫টি বাল্য বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে মতলব উত্তর উপজেলার ৩৯টি বিদ্যালয়ে এক অনুসন্ধ্যানে ওঠে এসেছে ভীতিকর খবর। গত দু’বছরে ৩৯টি বিদ্যালয়ের ৬শ’ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে পড়া-লেখা বন্ধ করেছে। এ সব কারনে সচেতন পরিবারগুলো তাদের কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ও শহরতলীর কিছু অশিক্ষিত লোভী পরিবার ঘটকের প্ররোচনায় পড়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে- মেয়েকে বাধ্য করছে বাল্যবিবাহে। তাতে নেপথ্যে কাজ করে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। অর্থলোভী পরিবারগুলো বিয়ে ঠিক করে প্রথমত চেয়ারম্যান, মেম্বার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে যায়। তারা যদি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দেখবে বলে আশ্বাস দেয় তখনই বিয়ের আয়োজন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে হুজুর এবং কাজীরা বিয়ে পড়াতে না চাইলেও স্থানীয় নেতাদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত রাজি হয় বলে একাধিক সূত্র জানায়। কোনো কোনো বিয়ে নিজের বাড়িতে পড়ানো সম্ভব না হলে আত্মীয়ের বাড়িতে অথবা স্থানীয় কোনো নেতার বাড়িতে কিংবা গভীর রাতে পাশের কোনো বাড়িতে নিয়ে পড়ানো হয়।
শহর ও গ্রামাঞ্চলের কোথাও পুলিশ প্রশাসন অথবা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বাল্য বিবাহ বন্ধ করা হলেও দু’-একদিন পরে ঐ বিয়ে আবার নেতাদের মাধ্যমে অন্য কোথাও হয়ে যায়। গোপন অনুষ্ঠিত বিয়েগুলোতে কোনো হলুদ সন্ধ্যা, জামাইবরণ করা হয় না। হয় না (খানপিনার) মেহমানদারির আয়োজন। এসব কাজে যা খরচ হওয়ার কথা তা এলাকার নেতা ও পাতিনেতাদের পেছনে খরচ করা হয়। তাদের পেছনে খরচ করলেই সব বৈধ হয়ে যায়।
এভাবে কম বয়সের ছেলে-মেয়েদের বিয়ের কথা শুনে সচেতন ও শিক্ষিত পরিবারের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও বিয়ের বিষয়টিকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। এ কারণে তাদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। আকাশ সংস্কৃতি ও সোস্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতা এবং নিকটস্থ বাল্যবিয়ের ঘটনায় তাদের কচি মনে অনুসন্ধিস্যু মনোভাব তৈরী করে। অজানা কামনা-বাসনায় তাদেরকে অপরাধ প্রবণতার দিকে ধাবিত করে।
অপ্রাপ্ত বয়সে বাল্যবিয়ে এবং পরবর্তীতে গর্ভধারণের কারণে প্রাণহানি ঘটছে অহরহ। বাল্যবিয়ের কিছুদিন পর সংসারে নানাহ টানাপোড়নে বিয়ে ভেঙ্গে সমাজে বাড়ছে অপরাধের চাপ। কম বয়সে মাথায় সংসারের চাপ তুলে দেয়ায় ক্ষোভ ও হতাশার কারণে বাড়ছে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর ঘটনা।
চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, নারীদের জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে, মেলামেশা এবং সন্তানধারণ। শারীরিক ও মানুষিকভাবে পরিপূর্ণতা অর্জনের আগেই কিশোর-কিশোরীদের বাল্যবিয়ে হয়। এ কারনে পুষ্টিজ্ঞান না থাকায় বেশিরভাগ সময় প্রসূতি ও তার সন্তান মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
চাঁদপুর জেলা রেজিষ্ট্রার মুশতাক আহমেদ বলেন, বিয়ে ও নিবন্ধন দুটি আলাদা বিষয়। বিয়ে পড়ান মৌলভী বা অন্য কেউ। আর পাত্র-পাত্রীর জন্মনিবন্ধন দেখে কাজীদের বিয়ে রেজিষ্ট্রী করতে হয়। পাত্রের বয়স ২১ এবং পাত্রীর বয়স ১৮ নীচে হলে ঐ বিয়ের নিবন্ধন করা হয় না। চেহারা দেখে বয়স যাচাই-বাছাই করার এখতিয়ার কাজীদের নেই। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন,বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে। এরপরও গোপনে বাল্যবিয়ের ঘটনায় নতুন আদেশ দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতি জেলায় যে সব ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তাদের তালিকা তৈরী করে বয়স যাচাই-বাছাই করা হবে। কাজটি একটু ‘অড’ হলেও তা আমরা করবো এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।