Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সিজারিয়ানে ভর করে বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতাল

বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসবের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আয় হওয়ায় চাঁদপুরে প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মানহীন প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে আনাড়ি চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় প্রায়শই প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিক্ষুদ্ধ কেউ কেউ জেদ মেটাতে হাসপাতাল ভাংচুর করলেও শেষতক প্রসূতির লাশ নিয়েই বাড়ি ফিরছে।
চাঁদপুরে সিকিকোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও ৭ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যর্থ হওয়ার সুযোগে এক শ্রেনীর অসাধু চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকের নামে এ ফাঁদ তৈরী করেছে। এ সুবাদে একদল ভুয়া চিকিৎসক ঐসব কিèনিকে নিয়মিত রোগী দেখে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ২টি প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে ৩ জন ভুয়া ডাক্তারকে আটক করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিতদের অভিযোগ সাঁড়াশি অভিযান করলে আরো অনেক ভুয়া ডাক্তারের সন্ধ্যান পাওয়া যাবে।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায় শুধু অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক ৬২টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার-প্যাথলজি রয়েছে ১৭৫টি। এর মধ্যে জেলা শহরেই রয়েছে ২৪টি প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ৬৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার-প্যাথলজি। অনুমোদনের বাইরে কতগুলো প্রতিষ্ঠান সে পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। চাঁদপুরে অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রাংশের অভাব, অদক্ষ জনবল তথা সেবক-সেবিকা সংকট এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সার্জারী চিকিৎসক ছাড়াই সাধারণ এমবিবিএস ডাক্তার দিয়েই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। ২/৪টি সিজারিয়ানে তারা সফল হলেও প্রসূতি মাকে অনেক সময় জীবন দিতে হয়। কিংবা চিরজীবনের জন্য জটিল সমস্যা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
শহরের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবকালে প্রায় প্রতি মাসেই ২/১জন প্রসূতি মায়ের অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা (প্রসূতির উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অবস্থা, রক্ত পরীক্ষা কিংবা আল্ট্রাসনোগ্রাম না করেই) ছাড়াই রোগী ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই সিজার করা হয়। ফলে অনেক সময় প্রসূতির জ্ঞান না ফিরে অপারেশন টেবিলেই মৃত্যু ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর পরিবার একটু উত্তেজিত হলেই অবস্থা বেগতিক ভেবে প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এধরনের ঘটনা এখন শহরবাসীর কাছে যেনো গা সওয়া হয়ে গেছে। সেই সাথে প্রতি শুক্রবার প্রাইভেট হাসপাতাল ও প্যাথলজিতে রোগীদের আকৃষ্ট করতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজধানী ঢাকা থেকে আনা হয়। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি রোগীরা ওইসব প্যাথলজিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে কুমিল্লা কিংবা ঢাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখালে তারা ঐ সব রিপোর্টে আস্থা রাখতে না পেরে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন। আর এভাবেই রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যায় চিকিৎসা শুরুর আগেই।
শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মানিক লাল মজুমদার জানান, তদারকির দায়িত্ব সিভিল সার্জনের। প্যাথলজিগুলোতে অনিয়ম হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কিছু করার থাকে না। তিনি আরো জানান, বেসরকারি প্যাথলজিগুলোতে সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা টেকনিশিয়ান থাকতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্যাথলজিতে টেকনিশিয়ান নেই। সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে তিনি সহসাই সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন চাঁদপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের জানামতে জেলায় ২৪৮টি প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। কিন্তু তাদের এসোসিয়েশনের মেম্বার হয়েছে মাত্র ৯৯ টি। এ কারনে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে তারা পুরোপুরি ভূমিকা রাখতে পারছেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ