পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে উৎপাদিত এবং বাজারজাতকৃত জুস ও ফ্রুট ড্রিংকসে মেশানো হচ্ছে ভেজাল। ভেজালমিশ্রিত, নিম্নমানের এবং মাত্রাতিরিক্ত এসিটিক এসিড থাকায় এগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। গত ১৭ অক্টোবর বুয়েটের রাসায়নিক পরীক্ষায় প্রমান মিলেছে প্রাণের ফ্রুটিক্স, আকিজের আফি, হাশেম ফুডের সেজান এবং এএসটি লিমিটেডের ম্যংগো কিং জুসে আম নেই। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ফ্রুড ড্রিংকসে কমপক্ষে ১০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ফলের রস থাকা বাধ্যতামূলক। বুয়েটের পরীক্ষায় তার অর্ধেকও পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু এই চারটি ফ্রুড ড্রিংকস নয়, দেশে বাজারজাতকৃত প্রায় সবগুলো ফ্রুট ডিংকসের একই অবস্থা। এসব ফ্রুট ড্রিংকস পান করে শিশুসহ নানা বয়সি মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওধুষ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আ ব ম ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, ম্যাংগো জুসে ম্যাংগো নাই-এটাতো সবারই জানার কথা। মনিটরিং না থাকায় বড় বড় কোম্পানী বিজ্ঞাপন দিয়ে শিশু তথা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব জুস দেদারছে বিক্রি করছে। তিনি বলেন, এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এসোসিয়েশন (এফডিএ) গঠন করতে হবে। সেক্ষেত্রে একই ল্যাবরেটরীতে সব ধরনের খাদ্য ও পানীয় পরীক্ষা করা যাবে। এ ছাড়া বিএসটিআইকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যাতে তারা নিয়মিত মনিটরিং করতে পারে। এর আগে ২০১২ সালে জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিতে দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর উৎপাদিত ৭২টি জুস ও ফ্রুট ড্রিংকসের নমুনা পরীক্ষা করে শতভাগ নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত এসিটিক এসিড ধরা পড়েছিল। ২০১৪ সালে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পরীক্ষায় প্রাণ গ্রুপের পণ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল পাওয়া গিয়েছিল। বিএসটিআই এর একজন কর্মকর্তা জানান, শুধুমাত্র ভেজালের কারনে ২০১৩ সালে প্রাণের ৮টি পণ্যের লাইসেন্স বাতিল করেছিল মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই)। ওই কর্মকর্তা বলেন, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগেও প্রাণ কোম্পানীর ছোটদের খাবারেও পাওয়া গেছে ভেজাল। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক চৌধুরী কামরুজ্জামান কামাল। গতকাল ইনকিলাবকে তিনি বলেন, প্রাণের ম্যাংগো জুস নিয়ে কারা পরীক্ষা করলো, কি পাওয়া গেছে- না গেছে- সে বিষয়ে আমাদেরকে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতেও প্রাণ গুপের পণ্য নিয়ে নানা রকম রিউমার ছড়ানো হয়েছে। একবার ফরমালিনের অভিযোগ তোলা হলো। পরে দেখা গেল, যে মেশিনে ফরমালিনের পরীক্ষা করা হয়েছিল সেই মেশিনই ছিল নষ্ট। এবারও তেমন কিছু হয়েছে কিনা কে জানে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে চার প্রকার ম্যাংগো জুসের নমুনা সংগ্রহ করে বুয়েটে পাঠায়। এগুলো হলো, প্রাণের ফ্রুটিক্স, আকিজের আফি, হাশেম ফুডের সেজান এবং এএসটি লিমিটেডের ম্যংগো কিং জুস। গত ১৭ অক্টোবর বুয়েট ওই সব জুসের রাসায়নিক পরীক্ষার পর যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে দেখা যায়, প্রতিটি ফ্রুট ড্রিংকসে ১০ শতাংশ ফলের রস থাকার নিয়ম থাকলেও তার অর্ধৈক পাওয়া গেছে। বুয়েটের পরীক্ষায় প্রাণ কোম্পানীর ফ্রুটিক্স জুসে পাল্পের পরিমাণ পাওয়া গেছে শতকরা ৪ দশমিক ৮। আকিজ গ্রুপের আফিতে এর পরিমাণ শতকরা ৬ দশমিক ২। হাশেম ফুডের সেজানে ৫ দশমিক ৪ এবং এএসটি লিমিটেড নামক কোম্পানীর ম্যাংগো কিং-এ পাল্পের পরিমাণ শতকরা ৪ দশমিক ৪। বুয়েটে রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রাণ, আকিজ, হাশেম ফুড ও এএসটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিএসটিআইকে গত ১৮ অক্টোবর চিঠি দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্ম সচিব) মো: মাহবুব কবীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ( স্মারক নং- ১৩.০২.০০০০.৫০২.৩২.০১.১৭(৪৮) বলা হয়, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরীক্ষায় নিম্নলিখিত চারটি ব্র্যান্ডের মাংগো ড্রিংকসে বিডিএস মানের চেয়ে (সর্বনিম্ন ১০%) নিম্ন মাত্রায় ম্যাংগো পাল্প পাওয়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল। ফ্রুটিক্স (প্রাণ)-পাল্পের পরিমাণ : ৪.৮%, আফি (আকিজ)- পাল্পের পরিমাণ ৬.২%, সেজান (হাশেম ফুড লি.)-পাল্পের পরিমাণ ৫.৪%, ম্যাংগো কিং (এএসটি লি.)-পাল্পের পরিমাণ ৪/৪%।” চিঠিতে বুয়েটের পরীক্ষার ফলাফলের কপি সংযুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে ১২দিন অতিবাহিত হয়েছে। বিএসটিআই গতকাল রোববার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে বিএসটিআই-এর একটি সূত্র জানায়, ওই চিঠি নিয়ে গতকালও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিএসটিআই’র পরিচালক (সিএম) এর সাথে কথা বলেছেন। জানতে চাইলে বিএসটিআই’র একজন সহকারী পরিচালক বলেন, বুয়েটের পরীক্ষাটি কিভাবে করা হয়েছে বা যারা পরীক্ষাটি করেছে তাদের এমন পরীক্ষার করার সক্ষমতা আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে সেগুলো আবার পরীক্ষা করা হতে পারে।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রাজধানীর বিভিন্ন কোম্পানির ৯ ধরনের জুসের গুণগত মান পরীক্ষা করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট। এতে দেখা যায়, জুসে দ্রবণীয় কঠিন বস্তু রয়েছে ৯ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা ২-৫ শতাংশ। শিশুদের প্রিয় এসব পণ্যে ক্ষতিকর মাত্রায় সালফার ডাইঅক্সাইড বা সোডিয়াম বেনজয়েটেরও উপস্থিতি পাওয়া যায়। ২০০৭ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বাজার থেকে সাত ধরনের জুস ও ফ্রুট ড্রিংকস সংগ্রহ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নমুনাগুলোয় ৪০-৫০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) সালফার ডাইঅক্সাইড বা সোডিয়াম বেনজয়েট ছিল। অথচ জনস্বাস্থ্যের জন্য এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা সর্বোচ্চ ১০ পিপিএম। এ ছাড়া নমুনাগুলোয় এসিটিক এসিড পাওয়া যায় ২ দশমিক ৩৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ক্ষতিকর এসব উপাদানের পাশাপাশি উচ্চমাত্রার প্রিজারভেটিভও রয়েছে। অন্যদিকে, জুস ও ফ্রুট ড্রিংকসে ভেজাল থাকার অভিযোগে ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর ৩১ কোম্পানীর বিভিন্ন সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স বাতিল করে দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআই। লাইসেন্স বাতিল হওয়া কোম্পানির ফ্রুট ড্রিংকসগুলো ছিল প্রাণ ফ্রুুট ড্রিংকস (ম্যাংগো, অরেঞ্জ, লেমন, স্ট্রবেরি, লিচি, আপেল, পাইনঅ্যাপেল, ফ্রুটককটেল), প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেডের ফ্রুট ড্রিংকস (লিচি, অরেঞ্জ), মডার্ন ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের মডার্ন ফ্রুট ড্রিংকস, নিউট্রি এগ্রো ফুডসেরনিউট্রি ফ্রুট ড্রিংকস (অরেঞ্জ), সাফা কনজিউমার প্রডাক্টস লিমিটেডের ফ্রুট ড্রিংকস (রকস্টার, মিক্সড ফ্রুট), আরএমপি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাইভেট লিমিটেডের আরএমপি ফ্রুট ড্রিংকস ও আরা ফুডস লিমিটেডের ফ্রুট ড্রিংকস। বাজারে এসব প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুস যারা বিক্রি করেন তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিশুসহ ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য এসব জুসের চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়া হয় বিভিন্ন মিডিয়ায়। বিজ্ঞাপন দেখে শিশুরা দোকানে এসে জুসের নাম উল্লেখ করেই কিনতে চায়। অনেক সময় দেখা যায়, অবিভাবকরা তাদের সন্তানদের জুস কিনে দিতে চান না। কিন্তু শিশুরা তা মানতে চায় না। জানতে চাইলে কমলাপুরের দোকানদার হায়দার আলী বলেন, ফ্রুট ড্রিংকস বা জুসে কি আছে তা আমাদের জানার কথা নয়। তবে প্যাকেটের গায়ে যা লেখা আছে তা-ই থাকার কথা। আমরা তো শুধু বিক্রি করি। তবে শুনেছি বেশিরভাগ জুসই মানসম্মত নয়। যাত্রাবাড়ীর দোকানদার দিদার বলেন, আমি সব ধরনের ফ্রুট ড্রিংকস বা জুস বিক্রি করি। তার মধ্যে সেজানের ম্যাংগো জুস বেশি চলে। সেজানের ম্যাংগো জুসে আম নেই-বুয়েটের পরীক্ষার ফলাফলের কথা শুনে ওই দোকানদার বলেন, তাই যদি হয় তবে বাকীগুলোতে কি আছে তা সহজেই বোঝা যায়। দনিয়ার দোকানদার গোলাম রব্বানী বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ পিস ম্যাংগো জুস বিক্রি করি। কিন্তু এগুলোতে আম না থাকলে তাহলে কী আছে? সরকার এগুলো বাজারজাত করতে দিচ্ছে কেন? বিএসটিআই তাহলে কি করে? খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোমল পানীয় ও জুসের নামে শিশুসহ আমরা যা পান করছে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। জুসে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ সোডিয়াম সাইক্লামেট, কাপড়ের রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ ( সোডিয়াম বেনজোয়িক ও পটাশিয়াম)। অম্লতা বাড়াতে ফসফরিক এসিড এবং ঠান্ডা রাখতে ইথিলিন গ্লাইকলও মেশানো হচ্ছে। জুসের নামে এসব পানীয় দীর্ঘদিন পানের ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, দাঁতের ক্ষয়, কিডনির সমস্যাসহ নানা রোগ হতে পারে। শিশু ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পানীয় মানবদেহের জন্য ভয়াবহ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ১০ বছর আগেও দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ। এখন এ সংখ্যা দুই কোটির বেশি এবং তাদের অর্ধেকই শিশু। এ ছাড়া দেশে বছরে অন্তত ৮৪ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। কৃত্রিম সুগন্ধি মেশানো এসব পানীয় গর্ভবতী ও বৃদ্ধদের জন্যও ক্ষতিকর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।