Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেজুর রস আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন দামুড়হুদার গাছিরা

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে ঃ | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় ক’দিন ধরে ভারি বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরমের পর কয়েকদিন থেকে শুরু হয়েছে ভোরের দিকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা। সেইসাথে রাতের ভাগে অনুভুত হচ্ছে হালকা শীতের আমেজ। দিনের বেলায় এখনও মাঝে মধ্যে আকাশে দেখা মিলছে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের আনাগোনা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ খেজুরগাছ থেকে রস আহরনের প্রস্তুতি। এরই অংশ হিসেবে গাছিরা বর্তমানে খেজুর গাছের ডেগো পরিস্কার, দা তৈরী, দড়ি কেনা ও ভাড় (কলস) কেনা, রস জ্বালানোর তাওয়া কেনা, চুলা তৈরির স্থান নির্বাচন করাসহ রস সংগ্রহ ও খেজুরগুড় তৈরির নানা আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই গ্রামবাংলার গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। মধুবৃক্ষ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করবে। এ সুমিষ্ট খেজুর রস জ্বালিয়ে তৈরী হবে গুড় ও পাটালি। আর হেমন্তের নতুন ধান ওঠার সাথে সাথে উপজেলার প্রতিটি গ্রামীন জনপদে শুরু হবে চালের আটা আর নলেন গুড় ও রসের তৈরি নানারকম পিঠা-পায়েসের উৎসব। আর গ্রামবাংলায় এ উৎসবের আমেজ চলবে পুরো হেমন্ত ও শীতকাল জুড়ে।
জানা যায়, এক সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে জেলায় প্রসিদ্ধ ছিল। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলতো বটেই তাছাড়াও দেশের বাইরে এর বেশ কদর রয়েছে। তবে বর্তমানে নানা প্রতিকুলতায় খেজুর গুড়ের এ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারি কোন পৃষ্টপোষকতা না থাকায় বর্তামানে আগের মত আর রস, গুড় উৎপাদন হয় না। উপজেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রাম ছাড়া সুঘ্রাণ নলেন গুড় পাওয়া যায় না। তা আবার চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। ফলে শীত মৌসুমে যে রস, গুড় ও পাটালী তৈরী হয় তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয়। ইতোমধ্যেই শহরের লোকজন গ্রামের গাছিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ গাছিদের নিকট অগ্রিম টাকা তুলে দিচ্ছেন ভাল রস, গুড় ও পাটালী পাওয়ার আশায়। অগ্রিম টাকা পেয়ে অনেক গাছি কিনছেন রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির জন্য নানা উপকরণ।
গত কয়েক বছর বাজারে গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম থাকায় বেশি লাভের আসায় অনেক অসাধু গাছি খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির সময় তাতে চিনি মিশিয়ে ভেজাল করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে। ফলে অনেকেই এ ভেজাল গুড় কিনে আসল গুড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সেইসাথে বেশি দামে এসব ভেজাল গুড় কিনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আর্থিকভাবেও। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চিনির দাম বেশি থাকায় হয়ত ভেজালমুক্ত গুড় পাওয়া যাবে এমন অভিমত অনেকের।
উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের গাছি ডাবুল বিশ্বাস বলেন, আমি ১৫/১৬ বছর যাবৎ খেজুর গাছ কাটছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গ্রামের বিভিন্ন্ মাঠে প্রায় ২শ’ খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। চলছে খেজুর গাছ ঝোড়া ও চাছা-ছোলার কাজ। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আশা করি আর দিন দশেক পর থেকেই এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করা যাবে। তবে এ কাজে আগের মতো এখন আর ভাল লাভ হয় না। আগে এলাকার সব মাঠে ও গ্রামের আনাচে কানাচে খেজুর গাছ ছিল। বর্তমানে খেজুর গাছ দিয়ে ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ নিধন হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় খেজুরগাছ লাগানো হচ্ছে না। তাই খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় এখন বেশি রস পাওয়া যায় না। গাছের অভাবে অনেক গাছিই এ কাজ ছেড়ে দিয়েছে। শ্যামপুর গ্রামের গাছি আঃ লতিফ ও তারিনীপুরের আশাদুল বলেন, এলাকায় আগের মতো আর খেজুরগাছ তেমন নেই। তাই খেজুর গুড় তৈরি করে আগের মত আর লাভ হয় না। তবুও বাড়তি উপার্জনের আশায় অন্যান্য কাজের ফাঁকে একাজ করি।
অনেকেই জানান, খেজুর গাছ আবাদি জমির তেমন কোনো ক্ষতি করে না। তাই আবাদি জমির চারি আইলে খেজুরগাছ রোপন করা যায়। বিভিন্ন স্থানের অধিকাংশ খেজুর গাছই অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠে। আবাদি জমি ছাড়া সড়ক পথ, রেল পথ, পুকুরপাড়, বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের ফাঁকা জায়গায় প্রচুর খেজুর গাছ লাগানোর সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা একটু উদ্যোগী হলেই বিপুল সংখ্যক খেজুরগাছ রোপনের মাধ্যমে দেশে গুড়ের চাহিদা পুরণ করে এ গুড় বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
দামুড়হুদা উপজেলার সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকইে আবাদি জমির আইলে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমার আহŸানে সাড়া দিয়ে অনেকেই তাদের কৃষি জমির আইলে খেজুরগাছ রোপন করতে শুরু করেছেন। আশা করা যায় আগামী দশ বারো বছর পর থেকে এসব গাছ হতে প্রচুর রস, গুড় ও পাটালি পাওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ