Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খ্যাতির শিখরে ‘১ টাকার মোড়’

নাটোর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় একটি মোড়ের নাম এক টাকার মোড়। এই নামকরনের কারণ এখানে ১ টাকা দিয়ে পাওয়া যায় চা আর পান। যেখানে অন্যান্য জায়গায় এক কাপ রং চায়ের দাম ৪ টাকা এবং একটি পানের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা। সেখানে এই মোড়ে এক কাপ চা ১ টাকা আবার একটি পানও ১ টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। যা এই দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে একেবারেই অসম্ভব বলা যায়। তবু এটাই সম্ভব করে দেখিয়েছেন বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের চা বিক্রেতা রজব বেপারী লালন। উপজেলার নওপাড়া গ্রামে ঈদগাহ সংলগ্ন এই মোড়টির নাম এক সময় নওপাড়া ঈদগাহ মোড় হিসেবে সকলের জানা থাকলেও এখন ওই মোড়টি সকলের কাছে ‘১ টাকার মোড়’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এলাকার মানুষ ছাড়াও সেখানে নাটোর সদরসহ আশপাশের উপজেলা থেকেও চা খেতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। নওপাড়া গ্রামের সোবাহান বেপারীর ছেলে চা বিক্রেতা রজব বেপারী লালন বর্তমান বয়স তার প্রায় ৩৯ বছর। মুদি দোকানদার বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় অষ্টম শ্রেণী পাশ লালন সেই ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। তখন থেকে তার ব্যবসার দিকেই ঝোঁক। ১৯৯১ সালে প্রথমে তিনি মাত্র ৫ শ’ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় দু’যুগ ধরে এই চায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসা করে লালনের পুঁজি এখন প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। প্রথম দু’বছর পঞ্চাশ পয়সা করে এক কাপ চা ও একটি পান বিক্রি করেছেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি ১ টাকা করে চা ও পান বিক্রি করে আসছেন। তার দোকানে প্রতিদিন প্রায় ১৫শ’ কাপ চা ও ১২/১৩শ’ টি পান বিক্রি হয়। অতি সামান্য লাভ করেই তিনি এখন নিজেকে সাবলম্বি মনে করেন। ২০১৪ সালে লালন একই গ্রামের সুবর্ণা আক্তার শিমাকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তাদের আড়াই বছরের আল-লাম নামে একমাত্র পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী শিমা বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। লালন তার স্ত্রীকে আরো উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। লালনের স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার শিমা বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ী একই গ্রামে। আমি আমার স্বামীর উদ্যোগকে শ্রদ্ধা জানাই। সংসার জীবনে আমি খুবই সুখি। সে আমার পড়ালেখার বিষয়ে যথেষ্ট সহযোগিতা করে।’ ১ টাকার মোড়ের চা বিক্রেতা রজব বেপারী লালন দাবী করেন, শুধু টাকা রোজগার করাই আমার মূখ্য উদ্দেশ্য নয় । আমি মানুষের খেদমতের উদ্দেশ্যে ১ টাকা করে চা ও পান বিক্রি করি। আমার ২৪ বছরের ব্যবসায় প্রথম দু’বছর পঞ্চাশ পয়সা করে বিক্রি করি তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ১ টাকা করে বিক্রি করি, এটা আর বাড়বে না।’ তবে সর্বস্তরের জনসাধারণের সুবিধার জন্য ১ টাকার মোড়ে দুটি সোলার লাইট দেয়ার প্রত্যাশা করেছেন সরকারের কাছে।
১ টাকার মোড়ের জমির মালিক মনিরুল ইসলাম দাবী করেন, আমাদের এখানে মানুষের বসার জন্য প্রথমে লালনকে একটি চায়ের দোকান বসানোর সুযোগ দেই। বর্তমানে ছোট-বড় ৫ টি দোকান রয়েছে। আমি কোন দোকান থেকে ভাড়া নেইনা। ৫ নং ফাগুয়াড় দিয়াড় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বর খলিলুর রহমান জানান, ১ টাকার মোড় আমার ওয়ার্ড এলাকা সেখানে সকালে এবং বিকালে অনেক লোকজন আসে এবং দীর্ঘদিন যাবত লালন ১ টাকা করে চা-পান বিক্রি করে আসছে।
এব্যপারে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিরিন বানু বলেন, ‘এ যুগে এক টাকায় কিছু পাওয়াটা দূরহ। লালন নিজেকে স্বাবলম্বি করেছে এবং স্ত্রীকে পড়ালেখা করাচ্ছে এটা খুবই গর্বের বিষয়। একজন ভাল মনের মানুষ বলেই তিনি এমন উদ্দ্যোগ নিয়েছেন। তবে তিনি সর্বসাধারেণের জন্য সোলার লাইট প্রত্যাশা করেছেন তা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।’ এমন উদ্যেগী মানুষের পাশে সবসময় থাকবেন বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ