Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাধারণ মানুষের আনন্দ-উল্লাস

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উদ্বোধনের আগের দিন একজন ফোন করে জানালেন, ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো একেবারে ঝকঝকে। সবগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে মালিবাগ আবুল হোটেলের কাছে একটু বাকী আছে। ওয়াসা সেখানে ড্রেনেজের কাজ শেষ করতে পারেনি বলেই রাস্তার কাজ বাকী আছে। ওই ব্যক্তি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, পুরো ফ্লাইওভার এলাকা ঘুরে যা দেখলাম তা সত্যিই অভূতপূর্ব। না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। মৌচাক আনারকলি মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, তিন বছরের বেশি সময় ধরে ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। এই তিন বছরে বিক্রি কমতে থাকায় ব্যবসার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কয়েক দিন ধরে আবার সেই ব্যবসা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। মানুষ এখন আগ্রহ নিয়ে আসছে। সদরঘাট থেকে গাজীপুর রুটের বাস চালক মোবারক হোসেন বলেন, মৌচাক-মালিবাগ হয়ে রামপুরার দিকে যাওয়া বা একই পথে আসা মানে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা সময়। খানাখন্দের রাস্তায় কতো ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়েছে। একাধারে তিন বছর। এখন প্রতিদিন তিন ঘণ্টা সময় বাঁচবে। এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের খবর। শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা তৌফিক এলাহী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, দুর্দিনের পর সুদিন আসে-এটা সত্যি প্রমাণিত হলো। এখন আর এই এলাকায় যানজট হবে না। আর ধূলোবালিতে পথ চলতে হবে না। এখন মনে হচ্ছে আমরা রাজধানীতে বসবাস করছি। রামপুরা এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে যতো গাড়ি দেখছি সবই যাচ্ছে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে। নিচের রাস্তা একদম ফাঁকা। তবে ফ্লাইওভার থেকে নামতে গিয়ে কিছুটা যানজট হচ্ছে। অনেকেই গাড়ি নিয়ে নতুন ফ্লাইওভার দেখতে এসেছে। বাংলামোটরে কর্তব্যরত এক পুলিশ সার্জেন্ট জানান, এ এলাকায় যানজট নতুন কিছু নয়, ফ্লাইওভার থেকে নামার পর যানজট হলেও তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হবে না। তবে যানজট কমাতে হলে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ বন্ধ করতে হবে।
মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ দেখা গেছে। বিশেষ করে মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, রাজারবাগ, শাজাহানপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের আনন্দের যেনো শেষ নেই। তারা বহুদিন ধরে যানজটসহ নানা ধরনের ভোগান্তি ও ধকল সহ্য করে আসছে। এমনকি জরুরী প্রয়োজনে এসব এলাকার মানুষ হাসপাতালে যাওয়ার মতো যানবাহনও খুঁজে পায়নি। মালিবাগের কাছে একটি হাসপাতাল আছে। সেখানেও রোগি নিয়ে সময়মতো পৌঁছতে পারেন নি অনেকেই। আর সকালে যারা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতেন তাদের যে কতো কষ্ট হয়েছে তা একমাত্র ভুক্তভোগিরাই জানেন। মীরবাগ এলাকার এক গৃহিনী বলেন, একটুখানি বৃষ্টি হলেই মালিবাগ এলাকার রাস্তায় অথৈ পানি জমতো। তখন রিকশা যেতো চাইতো না। রিকশাযোগে যাওয়ার সময় দুই দিন দুর্ঘটনায় পড়েছেন জানিয়ে ওই গৃহিনী বলেন, একবার তো বাচ্চার হাতই ভেঙ্গে গেলো। সেই হাত ভালো হতে চার মাস সময় লেগেছে। ভাঙ্গা হাত নিয়ে আমার ছেলে স্কুলে গেছে। খিলগাঁও এলাকার আরেক গৃহবধূ বলেন, এক সময় মনে হয়েছে এই এলাকা ছেড়ে অন্য কোনো এলাকায় ভাড়া থাকবো তাও ভালো। কিন্তু নিজের বাড়ী ফেলে যেতে পারিনি। সীমাহীন কষ্ট করেছি আমরা। তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, উন্নয়ন করতে হবে ভালো কথা। কিন্তু এরকম উন্নয়ন যাতে আর না হয়। উন্নয়নের ধকল আমরা সহ্য করতে রাজি আছি। তাই বলে এতোদিন? রাস্তাগুলোর দিকে খেয়াল রাখলে এতোটা কষ্ট হতো না মানুষের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আনন্দ-উল্লাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ