Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারের পতন ঘটাতে গণআন্দোলনের বিকল্প নেই : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের পতন ঘটাতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গণঅভ্যুত্থানের কোন বিকল্প নাই। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রুখো আগ্রাসন-হটাও দুঃশাসন শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া সমাজের সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব নয়। ভোট ও গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষা করতে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। কারো দয়ায় আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিনি। আন্দোলন সংগ্রাম করে এটিকে রক্ষা করতে হবে। সরকার আমাদের দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলছে। তাই আজকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি এত সহজে সবকিছু হওয়ার কথা নয়। সেই কাজটাকে ঠিক জায়গায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজকে কোনো বিভেদ নয়। আজকে একটা ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, জনতার ঐক্য। জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠলে তাহলেই আমরা গণতন্ত্রের জন্য সফল হবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালের আগে সেই ঐক্যের দিকে প্রায় আমরা এগিয়ে গিয়েছিলাম। একেবারে সমস্ত দল মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। রীতিমত বিপ্লব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা সফল হতে পারিনি, এই ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন যেটা ঢাকার মধ্যে হয়েছে। এ জন্য সফল হতে পারিনি। হতে পারিনি বলেই যে আমরা পারব না তা নয়। নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের কাজ করতে হবে। লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে। দলকে সংগঠিত করতে হবে। আমরা বিএনপিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি এবং জনগণও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সময় বলে আসছি বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, এরইমধ্যে ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে গেছে। যেহেতু এখানে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলা হয়েছে সুতরাং এখানে কোনোকিছু আশা করা, সুন্দর কিছু আশা করা বাতুলতা ছাড়া কিছু নয়।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল, বিএনপি সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করেছে, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় গণতন্ত্র থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন, শুধু তাই নয় ৯৬-এ আওয়ামী লীগের যে আন্দোলন ছিল, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলাম একসঙ্গে মিলে যে তত্ত¡াবধায়ক সরকার দিতে হবে; সেই আন্দোলনের ফলে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছিল, যে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বেগম খালেদা জিয়া তত্ত¡াবধায়কের ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি সবসময় চেষ্টা করেছে। নিজের অবস্থান থেকে প্রয়োজনে সরে গিয়েও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন। বিএনপির লক্ষ্যটি হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া একটি রাষ্ট্রের সুষ্ঠু ও সুন্দর যে বিকাশ তা সম্ভব নয়। যেখানে গণতন্ত্র নেই সেখানে কী হবে। গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হবে। সেই লড়াই সংগ্রামে থেকে কখনো বিএনপি পিছিয়ে থাকেনি। বিএনপি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রাম করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় খালেদা জিয়া সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ১/১১ যে অবৈধ সরকার এসেছে সে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধেও তিনি নীরবে আন্দোলন করেছেন। জেলে গেছেন, তৎকালীন সরকারের যে প্রস্তাবগুলো ছিল সেই প্রস্তাবগুলোর কাছে তিনি মাথা নত করেননি। আজকে দীর্ঘ ৯ বছর আ লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। এই ৯টি বছর সংগ্রাম করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম, খুন করা হচ্ছে মন্তব্য করে এই নেতা বলেন, বিএনপির রক্ত গেছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, বিএনপির নেতা গুম হয়ে গেছে, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে। সারাদেশে বহু যুব নেতা, ছাত্র নেতা নেতা গুম হয়েছে। ক্রসফায়ারে আমাদের বহু লোকের প্রাণ গেছে। লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে বিএনপি কিন্তু কখনো পিছপা হয়নি। এখনো কিন্তু বিএনপি পিছুপা নয়। গণতন্ত্রকে সুযোগ দেয়ার জন্য আমরা বিষয়ে আমাদের মতামত দিয়েছি।
তিনি জানান, আমরা ২০৩০ সালের ভিশন দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠন করা যায় তার কথা বলেছি। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আমাদের কথাগুলো পরিস্কারভাবে বলে এসেছি। আমি মনে করি গণতান্ত্রিক কাজ করতে যতগুলো সুযোগ থাকে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। গণআন্দোলন অবশ্যই প্রয়োজন। গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন। এজন্য আমরা সবসময় তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে বলছি। প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াতে বলছি। এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
জনগণের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। মানুষের প্রতিদিনের জীবন যাপন দুঃসহ হয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আজকে কোনো হতাশার কথা নয়, আজকে কোনো দ্বিমত নয়। আজকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আমার অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য। সংবিধান, এই দেশের রাষ্ট্র আমাকে যেটা দিয়েছে ভোট দেয়ার জন্য, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অধিকার। সেই অধিকার আমাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা আমার সম্মান-স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। কারো দয়ায় আমরা স্বাধীনতা পাইনি। কারো দয়ায় আমরা স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে চাই না। আমরা আমাদের নিজেদের শক্তি দিয়ে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে চাই। সার্বভৌম অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।
রোহিঙ্গা ইস্যু আজকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার সম্পূর্ণভাবে নতজানু ভূমিকা পালন করছে। সরকার কোনোভাবেই এ কথা বলতে পারবে না যে, তারা যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল তা নিতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোকে এখন পর্যন্ত তারা কনভিন্স করতে পারেনি। রাশিয়া-চীন এখনো মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান করছে। সেজন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারলে সমস্ত অপশক্তিকে আমরা পরাজিত করতে পারব।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ