Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অভিযোগ প্রমাণিত হবার পরও তদন্ত প্রতিবেদন ৩ মাস ধরে ফাইলচাপা

নরসিংদীতে ৩৭ প্রকল্পের মধ্যে ১৮টিতে দুর্নীতি প্রমাণিত

| প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : অভিযোগ দায়েরের দেড় বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হবার পরও ৩ মাস ধরে তদন্ত প্রতিবেদনটি ফাইলচাপা পড়ে রয়েছে। এরপর ১৫টি ভুয়া প্রকল্পের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৫ মাস আগে। অভিযোগের প্রথম শুনানী হয়েছে ২ মাস পূর্বে। এরপর আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। চেয়ারম্যান অপসারনের দাবী জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৪ মাস পূর্বে। শোকজ’র জবাব দেয়া হয়েছে প্রায় একই সময়ে। এরপর আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অভিযোগগুলো দায়ের করা হয়েছে হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ্ইউসুফ খান পিন্টুর বিরুদ্ধে। ফাইলগুলো চাপা পড়ে রয়েছে নরসিংদী স্থানীয় সরকার অধিশাখায়। এসব অভিযোগদায়েরকারী হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সুজিত সুত্রধর নরসিংদী প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এলজিএসপি ও ওয়ান পার্সেন্ট’র টাকার ভিত্তিতে হাজীপুর ইউনিয়নে ৫২টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী সবগুলো প্রকল্পই ছিল ভূয়া। হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কমিটি সমূহ কোন কাজ না করেই এসব প্রকল্পসমূহের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। এ ব্যপারে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সুজিত সূত্রধর বাদী হয়ে প্রথমে ৩৭টি ভূয়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসক এই অভিযোগের তদন্তভার অর্পণ করেন স্থানীয় সরকার অধিশাখার উপ-পরিচালকের উপর। উপ-পরিচালক তদন্তভার অর্পণ করেন নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর। নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্তভার অর্পণ করেন উপজেলা প্রকৌশলীর উপর। উপজেলা প্রকৌশলী গড়িমসি করতে করতে দেড় বছর পর ৩৭টি প্রকল্পের মধ্য ১৮টি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার অধিশাখায় জমি দিয়েছেন। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার তার তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্য কলামে লিখেছেন ‘প্রকল্প সমূহে কোন কাজ দেখিতে পাওয়া যায় নাই, ইহাতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় নাই, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না করিয়া টাকা উত্তোলন করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি দায়ী। ইউপি চেয়ারম্যানও তাহার দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।’ এ তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরও স্থানীয় সরকার অধিশাখার উপ-পরিচালক ড. এটিএম মাহবুবুল করিম অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না। একইভাবে ১৫টি ভূয়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর গত ৪ জুন উপ-পরিচালক ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পিন্টু উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও ইউপি সচিব লোকমানকে চিঠি দিয়ে শুনানী করেছেন। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় উপ-পরিচালক ইউপি সচিব লোকমানকে তাৎক্ষনিকভাবে বদলি করেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এছাড়া নরসিংদী সদর উপজেলার ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের ২ নং টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির ৩টি প্রকল্পের প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে সুজিত সূত্রধর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগও দুই মাস যাবত ফাইলচাপা পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সরকার অধিশাখার উপ-পরিচালক অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না। এব্যপারে অভিযোগ দায়েরকারী সুজিত সুত্রধর উপ-পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পূনরায় তদন্ত দাবী করেছেন। ব্যাপারটি অধিশাখার বিবেচনাধীন রয়েছে। যার ফলে পরবর্তী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এব্যাপারে স্থানীয় সরকার অধিশাখার উপ-পরিচালক ড. এটিএম মাহবুবুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ৩৭টি প্রকল্পের ব্যাপারে আবারো তদন্ত হবে। বাদী ও আসামী পক্ষ দুজনই পূনরায় তদন্ত দাবী করেছেন। এব্যাপারে বাদী সুজিত সুত্রধর জানিয়েছেন, তিনি পূনরায় তদন্ত দাবী করেননি। তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হবার পরও আসামী পক্ষের পূনরায় তদন্ত দাবী আইন ও যৌক্তিক ভিত্তি কতটুকু তা তিনি জানেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ