Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশিউর বাহিনী প্রধান গ্রেফতার ১৬টি অস্ত্র উদ্ধার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রম চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে র‌্যাবের অভিযান
ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রম খ্যাত সন্ত্রাসের ভয়াল জনপদ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান কাজি মশিউর রহমানকে (৫৫) পাকড়াও করেছে র‌্যাব। তার আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৬টি দেশি-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। গতকাল (সোমবার) ভোরে র‌্যাবের এ সাঁড়াশি অভিযানের শেষ পর্যায়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মশিউর। খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ নানা অভিযোগে ৩০ মামলার আসামী মশিউর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। অভিযানে তার এক সহযোগী ৮ মামলার আসামী মোঃ রফিককেও (২৫) গ্রেফতার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর অদূরে সীতাকুন্ড উপজেলার পাহাড়ঘেরা জনপদ জঙ্গল সলিমপুর। দুর্গম জঙ্গল সলিমপুর রূপ নিয়েছে ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসের জনপদে। সরকারি বনভূমি দখল, খুন, ধর্ষন, হানাহানি, আধিপত্য বিস্তার, অপহরণসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চলছে সেখানে। জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি পাহাড় কেটে গত এক যুগে প্রায় ১৬ হাজার অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। সেখানে বাস করে প্রায় ৪০ হাজার পরিবার। ছিন্নমূল মানুষদের নামে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলে একটি চক্র পাহাড়ে ছোট ছোট প্লট বানিয়ে তা বেচাকেনা করছে। ইচ্ছেমতো পাহাড় কেটে সেখানে রাস্তা তৈরি করছে এবং জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় আড়াই হাজার একর সরকারি বনভূমির অলিখিত মালিক বনে গেছেন সন্ত্রাসী মশিউর বাহিনীর প্রধান কাজী মশিউর রহমান। পাহাড় বিক্রির অর্জিত অর্থ দিয়ে গত কয়েক বছরে দেশের নানা প্রান্তের সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রম হিসেবে জঙ্গল সলিমপুরে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন মশিউর।
এই বাহিনীর বিরুদ্ধে গতকাল ভোরে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এএসপি মিমতানুর রহমান জানান, ভোরে জঙ্গল সলিমপুরে অভিযান কালে মশিউরের বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ মোট ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। মিমতানুর বলেন, র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে মশিউর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গ্রেফতারের পর তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছে মশিউর এখন শঙ্কামুক্ত। মশিউরের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩০টি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ বসতি গড়ে তোলার পেছনে ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের যে সংগঠন রয়েছে, তার সাধারণ সম্পাদক এই মশিউর। র‌্যাব বলছে, মশিউর জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় নিজের একটি বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন। জঙ্গল সলিমপুরের কয়েকশ একর এলাকায় গত এক যুগ ধরে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা এলাকাকে ১১টি ‘সমাজে’ ভাগ করে ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ সেখানে গড়ে তুলেছে ‘দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্য’। সমিতিকে টাকা দিলে তবেই সেখানে বসবাসের অনুমতি মেলে। সেখানে বসবাসকারীরা সমিতির নেতা নামধারী সস¿াসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। তাদের কথা মতোই তাদের চলতে হয়। মহানগরীর বাইরে দুর্গম ওই এলাকায় থানা পুলিশ বা প্রশাসনের খুব একটা প্রভাব নেই। আর এই কারণে পুরো এলাকাটি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় বড় সন্ত্রাসীরাও সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়রা জানায়, সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে পুরো এলাকায় নিñিদ্র পাহারা বসায়। অপরিচিত কোন লোক দেখলে তারা তার পিছু নেয় এবং তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জঙ্গল সলিমপুর নিয়ন্ত্রকারী সন্ত্রাসীরা যখন যে সরকার আসে তখন সে সরকারী দলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। পাহাড়ে ওই অবৈধ বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০০৪ সালে একাধিক পক্ষের মধ্যে দ্ব›দ্ব দেখা দেয়। এর জের ধরে ২০১০ সালে স্থানীয় লাল বাদশা ও আলী আক্কাসের গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। ২০১০ সালের ২৩ মে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান আলী আক্কাস। পরে ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে আসেন বর্তমান সভাপতি গাজী সাদেকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মশিউর রহমান। আলী আক্কাস বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। মশিউর আওয়ামী লীগের নেতা বলে জানান স্থানীয়রা।
কাজী মশিউর রহমান খুলনার ফুলতলা উপজেলার পাইগ্রামের মৃত কাজী হাসান আলীর পুত্র। তার সহযোগী মোঃ রফিক চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বরদোনা মৌলভীপাড়ার মোঃ শফিকের পুত্র। তাদের কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ মিঃ মিঃ বিদেশী পিস্তল, ১০ টি ওয়ান শুটারগান, ৫ টি এসবিবিএল, ১ টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২২ রাউন্ড গুলি, কার্তুজ এবং ৪ রাউন্ড খালি খোসা উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। এদিকে র‌্যাবের অভিযানে চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত ২৩৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, ৩৭টি ম্যাগাজিন এবং ২ হাজার ১৭৪ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ