Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হেমন্তের অকাল বর্ষণে ফিকে চাষীদের নবান্নের স্বপ্ন

বগুড়ায় চালের বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনও অনিশ্চিত!

মহসিন রাজু , বগুড়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 বগুড়ায় সাম্প্রতিক হেমন্তের অকাল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ব্যাপক বৃষ্টির ফলে ধানকে ঘিরে চাষীদের নবান্নের স্বপ্ন ও ফিকে হয়ে গেছে। আগাম জাতের পাকা ও আধা পাকা ধান গাছ জমিতে নেতিয়ে পড়ায় ব্যাপক হারে ফলন কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া নতুন আমন ধান বাজারে আসলে চালের বজারে যে ইতিবাচক প্রভাবের আশা করা হচ্ছিল সেটাও এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
বগুড়ার গাবতলী, ধুনট, সারিয়াকান্দি, নন্দীগ্রাম আদমদিঘী সহ পুরো জেলায় হেমন্তের অকাল বর্ষণ এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে ধান গাছ জমিতে নেতিয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে পানি জমায় ওইসব ধান গাছ পচে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। বিশেষ করে নন্দীগ্রাম, কাহালু, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া এসব এলাকায় আগাম জাতের ধান গাছ বৃষ্টি আর ঝড়ের কারনে জমিতে পড়ে গেছে।
ধুনটের চিকাশী গ্রামের আব্দুস সামাদ, ছোট দিয়ার গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ এবং ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগও বাড়তে থাকে। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শনিবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সেই বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় তাদের জমির রোপা আমন জমিতে পড়ে গেছে। কোথাও কোথাও পানিতে ডুবে গেছে। ওই এলাকার চিথুলিয়া গ্রামের বাদশা মিয়া জানান, তার তিন বিঘা জমির সবগুলোই জমিতে পড়ে গেছে। তিনি আরো জানান, এতে ফলন অনেক কমে যাবে। উৎপাদন খরচ উঠবে না।
নন্দীগ্রাম দক্ষিণপাড়া গ্রামের কৃষক হাচেন আলী বলেন, ক্ষেতের ধানগুলো পাকতে শুরু করেছে। আর ৮/১০দিন পরেই তার ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু ঝড়ো হাওয়ায় ধানের গাছগুলো যেভাবে হেলে পড়েছে তাতে ফলন পাওয়া নিয়ে রীতিমত সংশয় দেখা দিয়েছে। একই উপজেলার ইসবপুর গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ আলী জানান, তিনি পাইজাম এবং ৪৯ জাতের ধানের আবাদ করেছিলেন। শীষগুলোতে কেবল ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে গেল দু’দিনের ঝড়ো হাওয়ায় গাছগুলো হেলে পড়েছে। অবিরাম বর্ষণে জমিতে আটকে থাকা পানিতে সেই ধান তলিয়েও গেছে। তিনি ফলন হ্রাসের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এসব গাছ আর খাড়া হওয়ার সম্ভবনা নেই। ফলে ধানের ফলনও আর ভাল পাওয়া যাবে না।’
বগুড়া কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রতুল কুমার বিশ্বাস জানান, জেলার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমি। অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর। এর মধ্যে আগাম জাতের ধানও রয়েছে। তিনি বলেন, ঝড় আর বৃষ্টিতে ধানের সামান্য ক্ষতি হতে পারে। তবে দু একদিন রোদ থাকলে ওইসব ধান গাছের তেমন ক্ষতি হবেনা। তিনি আরো বলেন, যে সব ক্ষেতের ধান ৮০ শতাংশ পেকেছে সেগুলো কাটার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুপচাঁচিয়ায় টানা বৃষ্টিতে আমন ক্ষেতেরব্যাপক ক্ষতি : দুশ্চিন্তায় কৃষক
দুপচাঁচিয়া থেকে মোঃ গোলাম ফারুক জানান, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বৈরি আবহাওয়ার কারনে গত ২ দিনে টানা বৃষ্টিতে আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে আমন ধানের ফলন নিয়ে অনিশ্চয়তায় কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বগুড়ার তথা উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিতি দুপচাঁচিয়া উপজেলা। দুপচাঁচিয়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৬ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে মোট ১২ হাজার ৩শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধারন করা হয়েছে। এর মধ্যে উফসী ১১ হাজার ৯শ’ ৫০ হেক্টর এবং স্থানীয় ৪শ’ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়। মোট ৫৪ হাজার ৮শ’ ৬৪ মেঃ টন, আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। আমন মৌসুমে শুরুতেই এবার বন্যার প্রকৃতির ধরনে কিছুটা ভিন্নতা ছিলো। দুই দফা বন্যায় বেছে বেছে যেন আমন ধানের মাঠেই আঘাত হানে। মাঠ পানিতে ডুবে গেলেও স্বল্প সময়ে তা সরে যাওয়ার পরপরই আমনের টার্গেট পুরণের প্রচেষ্ঠায় কৃষকরা মাঠে নেমে পড়ে। মাঠের আমন ধানের চারাগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করে। মাঠের ফলন দেখে হতাশ কৃষকক‚ল অনেকটা আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। অনেক আমন ক্ষেতের ধানের গোমরও আসে। আবার অনেক ধান গাছ থেকে শীষ বের হয়ে এবং তা পূর্ণাঙ্গ ধানে রূপ নেয়। ঠিক তেমনি মুহুর্তে গত দুই দিনে টানা বর্ষণের সাথে বাতাসে আমন ক্ষেতের ধানগুলো ন্যুইয়ে পড়ে গেছে। ফলে ফলন নিয়ে আবারো কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদরের মন্ডলপাড়ার কৃষক আইয়ুব আলী মন্ডল, বোরাইয়ের হাফেজ আব্দুল হালিম, সরদারপাড়ার মোবারক আলী, জিয়ানগরের কায়ছার আলী সহ অনেকেই জানান, গত দুই দিনের টানা বর্ষণ সহ বাতাসে তাদের আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে মুহুর্তে ধানের গোমর বের হওয়ার কথা সে মুহুর্তে বৃষ্টি ও বাতাসে ধানগাছগুলো ন্যুইয়ে পড়েছে। অধিকাংশ জমির ধান শুয়ে পড়েছে, আবার অনেক জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারা আরো জানান, এ ক্ষতি হয়ত আর কেটে উঠা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে রোববার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি “দৈনিক ইনকিলাব” কে জানান, গত ২ দিনে টানা বৃষ্টি ও বাতাসে প্রায় আমন ধান ক্ষেত ডুবে গেছে, অনেক জমির ধানও পড়ে গেছে। আবার যে সব ধান গাছের ফুল এসেছিলো তা পড়ে গেছে। ফলে চলতি মৌসুমে আমন ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। একই সাথে তিনি জানান, আবহাওয়া ভালো হলে হয়ত ক্ষতির পরিমান কিছুটা কমিয়েও আসতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ