পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উপকূলের নড়বড়ে বেড়িবাঁধ এখন কোটি মানুষের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। মাসে মাসে নানা দুর্যোগ ও নিম্নচাপে নড়বড়ে বেড়িবাঁধগুলো ভাঙছেই। গত সপ্তাহব্যাপী ভারী বৃষ্টিপাতে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো ভেঙে আবারও চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে উপেক্ষিত গোটা উপকূলীয় অঞ্চল। গত ৭ দিনে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা তথা গোটা উপকূলীয় অঞ্চলের অন্তত দুই শতাধিক স্পটে নীচু বাঁধ উপচে জোয়ারের প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। বাঁধ ভেঙেছে বেশ কয়েকটি স্থানে। তলিয়ে গেছে শতাধিক গ্রাম। ভেসে গেছে কোটি কোটি চিংড়ি ও সাদা মাছ। মৎস্য ঘেরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চরমভাবে। বিভিন্ন স্থানে মাটির দেয়ালের ঘরগুলো ধ্বসে পড়েছে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রায় ৭-৮টি উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে যাওয়ার প্রহর গুনছে। অথচ সরকার বাস্তবমুখী টেকসই প্রকল্প গ্রহণ করছে না। পাউবো’র প্রকল্পগুলো গতানুগতিক এবং তাতে লুটপাট ওপেন সিক্রেট।
সূত্রমতে, খুলনার দাকোপের নলিয়ান বেড়িবাঁধের ২শ’ গজ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় প্রায় ২-৩ হাজার নারী পুরুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। সহস্রাধিক মৎস্য ঘের পানির তোড়ে ভেসে গেছে। উপজেলার পৃথক ৩টি পোল্ডারের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ১৩টি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক লোক চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ৩১, ৩২ ও ৩৩নং পোল্ডারে যে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে এ পর্যন্ত স্কুল কলেজ মসজিদ ফেরীঘাট ঘর বাড়ি রাস্তা ঘাট বিলীন হয়ে মানচিত্রই পাল্টে যাচ্ছে। মোস্তফা শফিক, কয়রার (খুলনা) থেকে জানান, সমুদ্র নিকটবর্তী উপকূলীয় উপজেলা কয়রার সুন্দরবনের কোল ঘেষা দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৬টি স্থানের বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে জোড়শিং লক্ষীর বাড়ির পাশে, বাজারের পাশে, সন্তোষ মন্ডলের বাড়ির সামনে, আরওপি ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে, ছোট আংটিহারার মাথায় ও চরামুখা মেদের চর, উত্তর বেদকাশীর ভোমরা, গাজীপাড়া, গাববুনিয়া, রত্মাঘেরী, পাথরখালি একই অবস্থা কয়রা সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালী ও হরিনখোলা এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকার বেড়িবাঁধের। এর মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালী ও হরিনখোলার যেকোন একটি স্থানের বেড়ীবাঁধ ভেঙে গেলে কয়রা উপজেলা সদরের রাস্তাঘাটসহ উপজেলা পরিষদ লোনা পানিতে নিমজ্জিত হতে পারে এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে কয়রা সদরের উত্তর এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী এলাকায় গত ২০ অক্টোবর দুপুরের জোয়ারে বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করে। এ স্পর্শকাতর স্থানগুলোর আনুমানিক ২৫ কি.মি এলাকায় বেড়িবাঁধ একেবারে নেই বললেই চলে। যদিও স্বেচ্ছাশ্রমে ওই দিন দুই শতাধিক শ্রমিক বেড়িবাঁধে মাটি দেওয়ার কাজ করেছে, কিন্তু তা আশানুরূপ নয়। যেকোন সময় স্থানগুলো ভেঙে জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ করতে পারে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি.এম. কবি শামছুর রহমান বলেন, ‘স্থানগুলো দিয়ে গত ২০ অক্টোবর লোনা পানি ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। পাউবো কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ বাঁধতে বলেন এবং পরে দেখবেন বলে জানান।
অপরদিকে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির চাপ বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় বটিয়াঘাটার বারোভ‚ঁইয়া গ্রামের একমাত্র জনগুরুত্বপূর্ণ বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে সুরখালী ইউনিয়নের বারোভ‚ঁইয়া, সাপা, বুনুরাবাদ, নাইনখালী, গাওঘরা, গরিয়াডাঙ্গা, পার্শ্বেমারী, রায়পুর, ভগবতীপুর, খড়িয়াল, কল্যাণশ্রী ও সুরখালীসহ প্রায় দশটি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। হাজার হাজার বিঘা আমন ফসলের জমি ও মৎস্য ঘের তলিয়ে যেতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছে। এতে ধ্বংস হবে এলাকার শত শত মাটির ঘরবাড়ি। এলাকার মানুষ সর্বশান্ত হয়ে পড়বে। বাঁধটির বর্তমানে প্রায় দুই/তিন হাত অবশিষ্ট আছে। এরই মধ্যে বাকিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দ্রুত সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা না নিলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাওনিয়া এলাকায় প্রবল জোয়ারের চাপে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩টি গ্রাম প্লাাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলী জমি। গত দু’দিনে ৭/২নং প্লোডারের কাছে ভেড়িবাঁধটি বিলীন হয়। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডে-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। এদিকে, তালার কপতোক্ষ নদের পুরাতন নদী জেঠুয়া ভাটা হতে জেঠুয়া বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার বাঁধ এখন হুমকির মুখে। এখানে সৃষ্টি হয়েছে চরম পানিবদ্ধতা। বৃষ্টিতে আশেপাশের গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে। শ্যামনগরের বেশ কয়েকটি গ্রাম জোয়ারের পানির নিচে তলিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেড়িবাঁধের ঝুঁকি ছাড়াও খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূল এলাকার ১০ উপজেলা ২ থেকে ৩ ফুট লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনি একটি বিপদাপন্ন অবস্থায় উপক‚লের চিরচেনা হাজার হাজার কৃষি, পরিবেশ, অবকাঠামো এবং জীবন-জীবিকাসহ ৩ কোটি মানুষের টিকে থাকার অবলম্বনই এখন ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল প্রণীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ইমপ্যাক্ট এবং ভালনারেবেলিটি শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।