পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের পক্ষে জনমত গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর যে সংলাপ চলছে সেখানে আওয়ামী মহাজোটের দু’তিনটি দল ছাড়া সকলেই জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সহায়ক ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন কী করে সে বিষয়ে জনগণ তীর্যক দৃষ্টি রেখেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অতীতে যাই করুন না কেন, এখন জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করতে পারলে ইতিহাসে তাঁর স্থান ইতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত হবে বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা। গতকাল (রোববার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার রঙ্গিন স্বপ্ন দেখছে, সিইসি’র বক্তব্যে বিএনপি নেতারা মহা খুশী হয়েছেন’। তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দুর্বোধ্য ধাঁধায় ফেলতে এর চাবিকাঠি কী ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিজেদের হাতে রেখেছেন? দখল, দুর্নীতি, গুম, অপহরণসহ হরণের নীতি গ্রহণ করে আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই আপনারা নির্বাচন কমিশনকে আওয়ামী মার্কা নির্বাচন করার প্রচেষ্টায় মশগুল আছেন। আপনার বক্তব্যেই প্রমাণিত হয় আপনারা নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার নীলনকশা আঁটছেন। কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি ঐতিহাসিক সত্য উচ্চারণ করতেই আপনারা বিচলিত হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেছেন-বিএনপি লন্ডনে বসে ক্ষমতায় যাওয়া কখনো সফল হবে না। এসব বাড়তি অপলাপ ও থিতানো বক্তব্য জনগণের কাছে হাস্যস্পদই মনে হয়। একদলীয় শাসনের ছাইপাঁশের সঙ্গে একত্র করে আর তারা ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে পারবেন না।
জাতিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবেই সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করছে। দলীয়করণ করে শিক্ষার মান ধ্বংস করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবীদের রেখে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আবার পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিতে বোর্ড থেকে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষকদের। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের অস্ত্রবাজি ও দখলবাজিতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ধ্বংস করার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ভোটারবিহীন সরকার। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এখন মরণ ব্যাধির নাম প্রশ্নপত্রফাঁস। এটা যেন এখন ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য হয়ে পড়েছে। এর পিছনে সরকারি দলের রাঘব বোয়ালরা জড়িত থাকায় কোনোভাবেই প্রশ্নফাঁস বন্ধ হচ্ছে না। এই শিক্ষামন্ত্রীর আমলেই প্রশ্নফাঁসের মতো অনৈতিক কর্মকান্ডের ক্রমবিস্তার আরো প্রসারিত হচ্ছে দিনকে দিন। বিগত ১০ বছরে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন, বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন, এসএসসি, এইচএসসি, জেএসসি, পিইসি, এমনকি নার্সিং পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। কোন কোন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও শিক্ষামন্ত্রী নির্লজ্জের মতো তা অস্বীকার করে পরে জনমতের চাপে সেই পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির মূল হোতারা ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় আজ পর্যন্ত এসব ঘটনার বিচার হয়নি। বিগত ১০টি বছর ধরে ধারাবহিকভাবে সকল ধরনের প্রশ্নফাঁসে যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত তার উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো গত শুক্রবার ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক রানা, হল শাখার নাট্য সম্পাদক মামুনসহ ১৫ জন গ্রেফতার। প্রামণিত হলো-দেশজুড়ে সকল প্রশ্নপত্রফাঁস ও জালিয়াতির মুল হোতা আওয়ামী লীগ ও তার দলের লোকেরা। এরা দেশকে পরনির্ভরশীল করতেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেশের একজন প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী বলেছেন, রাষ্ট্রকে ক্রিমিনাল স্টেটে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘উন্নয়নের জোয়ারে দেখেন দেশ কোথায় চলে গেছে। আজ আমরা বিশ্বের জন্য এক বিস্ময়। আগামী ১০/১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আমাদের দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে যুক্ত হবে।’ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের লাগামহীন বক্তব্য দিতে জুড়ি নেই। মনে হয়-তারা আকস্মিকভাবে আসমানী বক্তব্য রাখছেন। বিনাভোটে আরও ক্ষমতায় থাকার লালসা থেকে তারা এসব কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রীর তনয় ছাড়া অন্য উপদেষ্টাদের তো মাছিমারা কেরানীর চেয়ে বেশী কিছু করার নেই। একটি দেশে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকলে সাধারণ মানুষের যে কী দু:সহ জীবন হয় তা দেখেই বিশ্ববাসী বিস্মিত ও হতবাক।
রুহুল কবির রিজভী বলেণ, যে সময় উন্নয়নের জোয়ারের কথা বললেন সে সময় মানুষ উন্নয়নের জোয়ারে ঢাকা শহরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ঢাকা তলিয়ে গিয়ে সেখানে এখন ফায়ার সার্র্ভিসের নৌযান চলছে। অলিগলির সড়কগুলো যেন নালা খালে পরিণত হয়েছে। গত দু’দিনে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েসহ অফিসগামীরা পানিতে ডুবে কিভাবে হাবুডুবু খেয়েছে তা মানুষ বিস্ময়েই তাকিয়ে দেখেছে। সারাদেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলো খানাখন্দ আর বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে। যানজট ও জলজটে মহাসড়কগুলোতে মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। আওয়ামী লীগের গত ৯ বছরে দেশের ৯০ভাগ সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেছে। আগামী ১০/১৫ বছর যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে স্থলপথের নিশানা থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। দেশ তখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা হয়তো জানেন না যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশে। বাংলাদেশে দারিদ্র হ্রাসের হার কমতে শুরু করেছে। যার কারণে চালের কেজি এখন ৭০ টাকা। এই সিজনে খাদ্য ঘাটতির সময় সবসময় প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টন খাদ্য মজুদ থাকে, সেখানে এখন আছে মাত্র দুই থেকে আড়াই লাখ টন। উন্নয়ন মানে তো শুধু রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা। সন্ত্রাস, দখল, মহাদুর্নীতিনির্ভর শেখ হাসিনার শাসন আইনের শাসনকে মহাশুণ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেটি যাতে ফিরে না আসে সেইজন্য সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রীম কোর্টের ওপর আওয়ামী দু:শাসনের আঘাত প্রসারিত হয়েছে। সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রীম কোর্ট ও সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে হেনস্তা করা হয়েছে তা শুধু বাংলাদেশিরাই নয় বিশ্ববাসী বিস্ময়ের সঙ্গেই তাকিয়ে দেখেছে। আওয়ামী সরকার নিজেদের বেআইনী দুর্বৃত্তপনাকে জায়েয করতে নিজেরা নিজেরাই একটা অনড় আইনী সজ্ঞা দাঁড় করাচ্ছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সহ-প্রকাশনা সম্পাদক মনির উদ্দিন, আবদুস সালাম প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।