পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কার্বোনেটেড বেভারেজের নামে এনার্জি ড্রিংকসের প্রসার বাড়ছেই। প্রায় একশ’ রকমের এনার্জি ড্রিংকসে এখন বাজার সয়লাব। উঠতি বয়সী থেকে শুরু করে বয়স্করাও এখন এনাজির্ ড্রিংকসের নিয়মিত ক্রেতা। প্রথম দিকে এনার্জি ড্রিংকসে মেশাতো হতো অতিরিক্ত মাত্রার অ্যালকোহল। এখন মেশানো হচ্ছে যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলডেনাফিল সাইট্রেট নামক ভায়াগ্রার উপাদান মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস তরুণদের ছাপিয়ে বয়স্কদেরকেও আসক্ত করে ফেলেছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রতিদিন লাখ লাখ পিস এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি হচ্ছে। বিক্রির প্রতিযোগিতায় রয়েছে দেশের নামীদামী বেভারেজ কোম্পানীসহ নামসর্বস্ব মিলে প্রায় একশটি কোম্পানী। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি বন্ধ তথা উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেই দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। গত মাসে অনুষ্ঠিত বিএসটিআইয়ের ৩১তম কাউন্সিল সভায় বেভারেজের নামে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন ও আমদানীর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএসটিআই। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায়, এ ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে উকিল নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই নোটিশ আদৌ পাঠানো হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেন নি বিএসটিআই-এর কর্মকর্তারা। তবে সহকারী পরিচালক এসএম আবু সাঈদ জানান, কিছুদিন আগে কার্বোনেটেড বেভারেজ জাতীয় ৭৪টি পণ্য রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বাজারে থাকা ৪৮টি এনার্জি ড্রিংকস পরীক্ষা করে ১৮টিতে ভায়াগ্রার উপাদান পেয়েছিল। এর মধ্যে ১২টিতে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন এবং ৪টিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পাওয়া যায়। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের পরীক্ষায় বাজারের বেশ কিছু এনার্জি ড্রিংকসে ক্ষতিকর মাত্রার অ্যালকোহল পাওয়া যায়। এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে এগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করার জন্য সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পান করলে মানুষের হৃদরোগসহ কিডনী, ডায়াবেটিসজনিত রোগের ঝুঁকি রয়েছে।
আলাপকালে বিক্রেতারা জানান, এনার্জি ড্রিংকস পান করার কিছুক্ষণ পর সামান্য ঝিমুনি আসে। নেশা, নেশা ভাব হয়। স্কুল কলেজ পড়–য়া তরুণ-তরুণীদের ভাষায়, ‘অন্যরকম ফিলিংস’ হয়। অ্যালকোহল থাকার কারণেই এমন অবস্থা হয়। আর এজন্য উঠতি বয়সীদের কাছে এগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। বিক্রির স্রোতে ৫/৬টি কোম্পানি বেড়ে এখন প্রায় একশ’তে গিয়ে ঠেকেছে। বোতল প্রতি বেড়েছে অ্যালকোহলের মাত্রাও। এরই মধ্যে বাজারে এসেছে ভায়াগ্রা মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস ও সিরাপ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা ড. দুলালকৃষ্ণ সাহা জানান, বাজারে থাকা কমপক্ষে ৬২টি রকমের এনার্জি ড্রিংকস ও সিরাপের রাসায়নিক পরীক্ষায় ২৩টিতে ভায়াগ্রার উপাদান পাওয়া গেছে। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলও রয়েছে কয়েকটিতে। তিনি বলেন, আমরা এই সব এনার্জি ড্রিংকসের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে এগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করার জন্য বিএসটিআইকে সুপারিশ করেছি।
রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় বেকারী, মুদি এমনকি পান-সিগারেটের দোকানেও এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি হয়। বিক্রেতারা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই বাজারের হট আইটেম হিসাবে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এনার্জি ড্রিংকস। বিশেষভাবে কয়েকটি কোম্পানীর এনার্জি ড্রিংকসের চাহিদা অনেক বেশি। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে যৌন উত্তেজক কিছু ড্রিংকস এবং সিরাপ। এগুলো পান করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শরীরে যৌন উত্তেনার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বয়স্করা বেশি কিনে লায়ন সিরাপ। যার পুরো নাম তনু লায়ন ফ্রুট সিরাপ। লায়ন শব্দটি বড় করে লেখা। এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তনু নিউট্রিশন ফুড প্রোডাকস লিমিটেড। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষায় তনু লায়ন ফ্রুট সিরাপে ১৮৮ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১২৬ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলডেনাফিল যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রার প্রধান উপাদান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা ড. দুলালকৃষ্ণ সাহা বলেন, ভায়াগ্রামিশ্রিত এসব সিরাপ পান করলে গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। হৃদরোগীর তাৎক্ষণিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরীক্ষায় বাজারে থাকা যে সব এনার্জি ড্রিংকস ও সিরাপে ক্ষতিকর ভায়াগ্রা, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দুবাই থেকে আনা রেডবুল নামে এনার্জি ড্রিংকসের প্রতি লিটারে ৩৩০ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। খুলনার জিএম এগ্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ডাবল হর্সের প্রতি লিটারে ২০৬ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৬৩ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে তৈরী হলেও পাওয়ার হর্স নামে এনার্জি ড্রিংকসের লেবেলে লেখা অস্ট্রেলিয়ার তৈরী। এর প্রতি লিটারে ৩২২ দশমিক ০৬ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। কুমিল্লার জাহান ফুড প্রোডাক্টের মাশরুম ব্র্যান্ডের প্রতি লিটারে ২০২ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম, ফু-ওয়াং ব্র্যান্ডের প্রতি লিটারে ১৯৭ দশমিক ৪০, সাভারের এগ্রো ফুড অ্যান্ড ফুড বেভারেজের জিন্টারে ১৮০ দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১২৭ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, বগুড়ার উত্তরা ল্যাবরেটরীজের জিনসিনে ১৭৪ দশমিক ৭২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ গ্রাম সিলডেনাফিল, থ্রি স্টার ইউনানি ল্যাবরেটরিজের জিন্টার প্লাস জিনসিনে ২০৬ দশমিক ৯১ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, বিএনসি এগ্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের হর্স ফিলিংসে ১৯৫ দশমিক ২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, স্নেহা ফুড অ্যান্ড হারবাল প্রোডাক্টের কোরিয়ান রেড জিনসিংয়ে ১৯৯ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, ১৩৫ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, রানা ফুড বেভারেজের হাই পাওয়ার ফিলিংসে ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, স্ট্রং-৫০০-এ ১৬২ দশমিক ৫২ গ্রাম ক্যাফেইন, এপি ফিজে ১৮৫ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, রয়েল টাইগারে ১৯৭ দশমিক ৮২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, থ্রি স্টার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের জিনসিনে ১৬৩ দশমিক ৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালসের জিনসিন প্লাসে ২১০ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩৫ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, আসিফ এগ্রো ফুড বেভারেজের সেভেন হর্স ফিলিংসে ১৯৮ দশমিক ২৮ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৯০ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া গেছে। বিএসটিআই-এর একজন সহকারী পরিচালক এসএম আবু সাঈদ বলেন, দেশে এনার্জি ড্রিংকস তৈরীর বৈধতা নেই কোনো প্রতিষ্ঠানের। এনার্জি ড্রিংকস নামে বাজারে যে সব পানীয় বিক্রি হচ্ছে সেগুলো কার্বোনেটেড বেভারেজ পণ্য। কোনটার গায়ে এনার্জি ড্রিংকস লেখা নাই। এগুলোতে ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, ভায়াগ্রার উপাদান মেশানো অবৈধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।