Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করার পাঁয়তারা উপজাতি সন্ত্রাসীদের

খাগড়াছড়িতে একজনকে জবাই করে হত্যা, পানছড়িতে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার, আটক ৪

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। বাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ করছে পাহাড়ে সক্রিয় উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। দেশের বাইরে থেকে আন্তর্জাতিক চক্র এদের অস্ত্র ও টাকা দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে সাহায্য করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় গভীর অরণ্য থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তবে মাঝেমধ্যে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথঅভিযানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীরা ধরা পড়লেও এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইউপিডিএফসহ পাহাড়ে সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথঅভিযান জোরদার করা না হলে যে কোনো সময় পাহাড়ে হত্যাসহ সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি ও বাঙালিরা। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির কমলছড়ির ভুয়াছড়ি এলাকায় সমুয়েল চাকমা (৪৭) নামে এক ব্যক্তিকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার রাত ১১টায় ভুয়াছড়ির দুর্গম খ্রিষ্টান পাড়া থেকে নিহত সমুয়েল চাকমার বাড়ির পাশ থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্না জানান, নিহত ব্যক্তির মাথার পেছনে ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা জড়িত তা তদন্ত চলছে। পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় চার চাঁদাবাজকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। পরে তাদের জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটককৃতদের স্বীকারোক্তিতে উদ্ধার করা হয় একটি পিস্তলসহ গুলি। গতকাল শনিবার ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটে উপজেলা কলেজ গেইট এলাকায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র মতে জানা যায়, আটকৃতরা হলো- খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাইবোনছড়া ইউপির ছোটরায় টেইসাপাড়ার বাসিন্দা খেডারাম ত্রিপুরার ছেলে বৌদ্ধরাম ত্রিপুরা (২৯), পানছড়ি উপজেলার বৌদ্ধরামপাড়ার মবুক চাকমার ছেলে বিমল চাকমা (২৪), পানছড়ি উপজেলার বৌদ্ধরামপাড়ার সুকমনি চাকমার ছেলে সুমন চাকমা (২০), পানছড়ি উপজেলার দক্ষিণ নালকাটার শান্তি দুলাল চাকমার ছেলে মুকতাহার দেওয়ান চাকমা। এরা ইউনাইট্রেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) হয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল। এদের চাঁদাবাজির কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণ এদের ধরে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে পানছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিজিবি ও পুলিশ বিক্ষুদ্ধ জনতার হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের কাছে অস্ত্র আছে বলে স্বীকার করে। আটককৃতদের তথ্যের উপর ভিক্তি করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিজিবি ও পুলিশ রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পানছড়ি মর্ডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের ঝোপের ভেতরে বালুর নিচে লুকিয়ে রাখা আমরিকার তৈরি একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও দুই রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করে। আটককৃতদের পানছড়ি থানায় রাখা হযেছে। সূত্র জানায়, পাহাড়ি উপজাতীয় সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো শুধু হত্যা বা চাঁদা আদায় করেই ক্ষান্ত নেই। এরা পাহাড়ে চালাচ্ছে ভয়াবহ রকমের নারী নির্যাতন। দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করে নিজেরাই শাস্তির নামে নারীদের গণধর্ষণ করছে পাহাড়ি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাহাড়ি মেয়েরা বাঙালি ছেলেদের বিয়ে করলে এসব মেয়েদের ধরে নিয়ে গণধর্ষণ করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এমনকি ধষর্ণের পর হত্যা করা হয়। আর বাঙালি ছেলেদের সাথে পাহাড়ি মেয়েরা কথা বললেও তাদের হয়রানি ও লাঞ্ছিত করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। সেই সাথে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও চালায় ভয়াবহ নির্যাতন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নির্যাতন বন্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেই। এমনকি নারী অধিকার সংগঠনগুলো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। সূত্র জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে খুন হয় বালাতি ত্রিপুরা। এবারো আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামে বিভিন্ন উপজাতি সংগঠন। তারা সমস্ত পার্বত্য বাঙালিকে দোষারোপ না করে সুনির্দিষ্টভাবে করিম, নুরু আর মানিক নামে তিন বাঙালিকে দোষারোপ করে। কিন্তু এবারো তাদের ক‚টকৌশল ধরা পড়ে যায়। ঘটনার মাত্র ছয়দিনের মাথায় বালাতি ত্রিপুরার খুনের মূল নায়ক কার্বারী সাধন ত্রিপুরা নামক এক উপজাতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন বাঙালিরা মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের উপর যে কোনো ধরনের অপরাধ হলেই তার দায়ভার বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে একটি গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে ওঠেপড়ে লাগে। তাদের মূল লক্ষ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে উপজাতি-বাঙালি স¤প্রীতি ধ্বংস করা এবং বাঙালিদের দায়ী করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বিতাড়ন আন্দোলন গড়ে তোলা। জাতিগত বিভেদ ভুলে সাধারণ বাঙালি এবং উপজাতিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের এরূপ নানা নোঙরা রাজনীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উৎখাত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। এমনকি নিজেরাই কোনো একটি অপরাধ সঙ্ঘটিত করে সেটাতে নানান রঙ ছড়িয়ে বাঙালিদের সরাসরি দোষারোপ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করে মিডিয়া এবং জনগণের নজর কাড়ার চেষ্টা করে আসছে। পাশাপাশি তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষত ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ বা আইডি ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের উৎখাত করার লক্ষ্যে নানা মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়ে আসছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ