পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অপেক্ষার প্রহর শেষ। শেষ হয়েছে ইলিশ প্রজনন মৌসুম। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে সাগর, সাগর মহোনা, মেঘনা ও পদ্মা নদীসহ বিভিন্ন শাখা নদীতে ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। আজ মধ্যরাত ১২টার পর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জাটকা সমৃদ্ধ ১৭ জেলার ৮৫টি উপজেলার জাটকা আহরণের বিরত থাকা কয়েক লাখ জেলে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়ে আজ মধ্যরাত থেকে মাছ ধরা শুরু করবে। জাটকা সংরক্ষণ অভিযানকালে প্রতিবছর জেলেদের জন্য সরকার খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণ করলেও এবার যথা সময়ে না পৌছার কারণে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলেরা পেটের দায়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের টোকেন রশিদ নিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মধ্য রাতে মা ইলিশ ধরেছে। কেউ গ্রেফতার হয়েছেন আবার কেউ জরিমানা দিয়ে বেঁচে গেছেন। অপরদিকে এবারই প্রথম নিষেধাজ্ঞা সঠিক সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেউ বলছেন সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়াটায় যথার্থ ছিল। মৎস্য অধিদপ্তর বলছেন এটা মোটেও সঠিক নয়।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে গত বছর তিন লাখ পঁচানব্বই হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। এবার (২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে) এক লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনে উন্নতি হবে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন উৎপাদন কম হতে পারে।
মৎস অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, মা ইলিশ সংরক্ষণে জেলা উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসন, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র্যাব ও নৌবাহিনীর সহায়তায় নিরলসভাবে কাজ করেছেন। প্রতি বছরে আর্শ্বিন মাসের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার দিনসহ আগের ৪দিন ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২দিন দেশ ব্যাপি ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় ও মজুদ নিষিদ্ধ রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১৭ জেলার ৮৫টি উপজেলায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য মোট ৩৮ হাজার ১শ’ ৮৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সরকার গত ৯ বছরে (২০০৮-২০০৯ থেকে ২০১৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত) এই সহায়তার চাল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টনে উন্নীত করেছেন। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ কালীন ২২ দিনের জন্য পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৩ পরিবারকে মোট ৭ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তার চাল প্রদান করা হয়েছে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাটকা সংরক্ষণ, গবেষণা প্রকল্পের জন্য ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২ হাজার ৫শ’ ৯ জন সুফল ভোগীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ইকোফিস বিধি প্রকল্পের মাধ্যমে ৯টি জেলার ২৯টি উপজেলায় ১৭ হাজার ২শ’ ৩৬ জন সুফলভোগীকে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ইলিশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল নীতিমালার জন্য ইকোফিস প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ সফিকুর রহান জানান, সরকারের সুপরিকল্পিত আইনে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে কোনো ইলিশ মাছ ধরা যাবে না। আর কোনো জেলেই কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারবে না। তাই মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় ১ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০০টি অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে ৯০জন জেলেকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। ২৭জন জেলের কাছে থেকে ১লাখ ৩হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। মামলা দায়ের করা হয় ১০৭টি। একই সময়ে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯শ’ মিটার জাল আটক করে তাৎক্ষনিক পুড়িয়ে ফেলা হয়। অভিযানে ১৪২টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। আজ রাত থেকে মাছ ধরতে আইনী বাঁধা নেই বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। তবে আগামী ১লা নভেম্বর থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত জাটকা ধরতে পারবেন জেলেরা।
চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনার ৬০কিলোমিটার নৌ-সীমায় পরিচালিত অভিযানে ২.৩ মেট্রিক টন (২৩শ’ কেজি) মা ইলিশ জেলেদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে গচ্ছিত রয়েছে ১.২ মেট্রিক টন (১২শ’ কেজি)। বাকি মা ইলিশ অসহায় দুস্থদের মাঝে অভিযানের পর পরই বিতরণ করা হয়।
চাঁদপুর মাৎস্য গবেষনা ইনিস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনিসহ একটি ইলিশ গবেষক দল দেশের দক্ষিণাঞ্চল (ভোলা, বরিশাল, শরীয়তপুর) পর্যবেক্ষণ শেষে ফিরছেন। তিনি জানান, পানিতে পর্যাপ্ত ইলিশ রয়েছে। এছাড়া গত বছরের চেয়ে এবার পানিতে ইলিশের ডিমের উপস্থিতি একটু বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে গবেষণার পুর্ণাঙ্গ ফলাফল জানা যাবে।
ল²ীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস ইনকিলাবকে জানান, এবার মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হয়েছে এবং জেলেদের খাদ্য সহায়তার চাল দেরিতে আসলেও যথানিয়মে তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। একই উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ জানান, এখনও আমরা খাদ্য সহায়তার চাল পাইনি। আমাদেরকে তালিকা করতে বলা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, টেলিফোনে জানানো হয়েছে চাল বরাদ্দ হয়েছে কখন বিতরণ করা হবে তা এখনও জানি না। তিনি বলেন, শুনেছি এবার আতব চাল দেওয়া হবে। এই চাল আমাদের দেশের জন্য অখাদ্য। জেলেদের আগ্রহ নেই এই চাল নেওয়ার জন্য। একই এলাকার জেলে আবুল হোসেন জানান, নদী ভাঙার শিকার হয়ে ভীষণ কষ্টে আছি। চাল পাবো এখনও কেউ জানায়নি। জেলে জামাল উদ্দিন জানান, অনাহারে অর্ধাহারে ২২দিন কাটলো আজ মধ্যরাত থেকে মাছ ধরা শুরু করবো।
এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় অর্থাৎ ইলিশের প্রজনন মৌসুমে চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা পাড়ের ৪টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ৫শ’ ৭৫জন জেলে পরিবারে ২০কেজি করে ৩১ দশমিক ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেয় সরকার। ঐ চাল এখনো জেলেদের মাঝে বিতরণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কারণ ১অক্টোবর থেকে অভিযান শুরু হলেও জেলেদের খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ মিলে গত ১৭অক্টোবর। বিতরণ শুরু হয় ১৮/১৯ অক্টোবর। নিষেধাজ্ঞার শুরুতে খাদ্য সহায়তা না পাওয়ায় ধার-দেনা, ক্ষুধা ও দারিদ্রতার কারণে অসাধু জেলেরা টাস্কফোর্সের চোখ ফাঁকি দিয়ে মা ইলিশ শিকারের ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ভ্রাম্যমান আদালতের শাস্তি এড়াতে তাদের শিশু সন্তানদের দিয়ে প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসবে মেতে উঠে। এছাড়া জেলা টাস্কফোর্স সদস্যরা বিশ্রামে গেলে গভীর রাতে অসাধু জেলেরা মা ইলিশ শিকার করে বলে খোদ প্রশাসনের নজরে ওঠে আসে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।