বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দখলে দুষনে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে গ্রীণ সিটি ক্লিন সিটি রাজশাহী। নগরজুড়ে চলছে দখলের মহোৎসব। রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত, শহররক্ষা বাঁধ, পার্ক, পুকুরপাড়, মার্কেটের সামনের এক চিলতে ফাঁকা জায়গা সব গিলছে দখলদাররা। এসব স্থানের মালিক সিটি কর্পোরেশন, সওজ, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড হলেও এসবের বিরুদ্ধে তাদের নীরবতা রহস্যজনক। অভিযোগ রয়েছে এদের কাউকে কাউকে ম্যানেজ করে চলছে দখলবাজী। কোথাও কোথাও ব্যবহার হচ্ছে কৌশলে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছবির ব্যানার।
নগরীর এমন একটি এলাকা খুজে পাওয়া যাবেনা যেখানে দখলদার নেই। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার ও তার আশেপাশ্বের এলাকাজুড়ে সবার সামনে চলছে দখলবাজী। ড্রেন, ফুটপাত থেকে রাস্তা সবি অবৈধ দখলে। নগরীর সৌন্দর্য্য বর্দ্ধনের জন্য বড় বড় রাস্তার দু’পাশ্বের ড্রেন ভেঙ্গে পূননির্মাণ করা হচ্ছে। সৌন্দর্য্য বর্দ্ধনের জন্য ড্রেনের ¯øাবের উপর দৃষ্টিনন্দন টাইলস বসানো হচ্ছে। চওড়াও করা হচ্ছে। যাতে করে পথচারীরা ড্রেন কাম ফুটপাত হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও পথচারীরাদের ভাগ্যে তা নেই। টাইলস বসানোর কাজ শেষ হতে না হতে চলে যাচ্ছে দখলদারদের কবজায়। ভাবটা যেন এটি তাদের জন্য করা। নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন সিটি কর্তৃপক্ষ ড্রেনের উপর কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে দৃষ্টি নন্দন টাইলস বসাচ্ছে। অথচ নগরীর সিংহভাগ ছোট বড় রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। কর্তৃপক্ষের এমন উদ্দ্যোগ যেন দেহের সারা অঙ্গ ক্ষত বিক্ষত রেখে ঠে^াটে লিপিষ্টিক লাগিয়ে আহা কত সুন্দরী দেখানোর মত। পেটে খাবার নেই। মুখে ¯েœা পাউডারের ব্যবহার। অবশ্য সিটি কর্পোরেশন বলছে সরকার থেকে এখাতে টাকা বরাদ্দ এসেছে। তাই আগে খরচ করা হচ্ছে। রাস্তা ঘাটের মেরামতের ব্যবস্থা হবে টাকা পেলে।
এদিকে ছোট বড় প্রায় ড্রেনের সাথে সরাসরি বাথরুমের কিংবা সেফটি ট্যাংেকের পাইপ জুড়ে দেয়া হচ্ছে অবাধে। বিশেষ করে ছাত্রাবাস মেসগুলোয়। ফলে ভয়ংকর দুষন হচ্ছে। কোথাও ড্রেন দখল হওয়ায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পরিস্কার করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব স্থলে মশার নিরাপদ আশ্রয় স্থল হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাই সব কিছু দেখছে। কিন্তু নির্বিকার। শহররক্ষা বাধের কল্পনা তালাইমারী অংশের উত্তর পার্শ্বে সিটি কর্তৃপক্ষ দৃষ্টিনন্দন সবুজ বাগান করছেন। ঠিক বাঁধের উল্টোপাশে দক্ষিনে চলছে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ। বাঁধের মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র ঐতিহাসিক ভুবনমোহন পার্ক। জুতো স্যান্ডেলের দোকানের ভীড়ে ঢাকা পড়েছে এটি। ভেতরে দিনে চলে মার্কেট আর জুয়ার আড্ডা। আরেক ঐতিহ্যবাহী সোনাদিঘী তার পানির রং হারিয়েছে সেই কবেই। এটির মালিক সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরা নিজেরাই এটিকে ধ্বংস করেছে। আর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকতে বসেছে এনা প্রোপাটিজ নামের এক ডেভেলপার কোম্পানী। আশেপাশ্বের সব বর্জ্য এমনকি মেস, হোটেলের সরাসরি লাইন মিসেছে পুকুরে। সোনাদিঘী মোড়ের নাম নিয়ে বেঁচে আছে দিঘীটি।
পদ্মা নদীর তীরে সিটি কর্তৃপক্ষ এক সময় খুব ভাল উদ্দ্যোগ নিয়েছিল। তীরের যাচ্ছেতাই অবস্থাকে কোথাও কোথাও দৃষ্টি নন্দন করে তোলা হয়। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারের অদুরে ঐতিহাসিক বড়কুঠির পাশে করা হয় বিভিন্ন অবকাঠামো। পশ্চিমে লালনশাহ পার্ক আর পূর্বে তালাইমারী শহীদ মিনারজুড়ে নেয়া হয় প্রকল্প। নগরবাসী তাদের ধুলো ভরা ফুসফুসটাকে রিচার্জ করার জন্য দাড়াবার একটা জায়গা খুঁজে পায়। পদ্মা তীরের এখানে দাঁড়িয়ে বর্ষায় পদ্মার ভরা যৌবনের রুপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করে। আবার খরা মওসুমে মাইলের পর মাইল জুড়ে পড়া চর দেখে। নদীতে পানি এলে নৌকায় ঘুরে বেড়ায়। আবার শুকনো মওসুমে বালি চরে হাটে। সারা বছর তরুন তরুনীরা খুনসুটি করে। পদ্মা বাঁধের উপর ও নদীর তীরে বায়ু সেবনের জন্য বুলনপুর থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়। যাতে নির্বিঘেœ চলাফেরা করা যায়। যানবাহনের চলাচল বন্ধের জন্য পিলার বসিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়। তীরে রাস্তা ও টাইলস বিছানো ফুটপাত করা হয় পঞ্চবটি পর্যন্ত। সিটি কর্তৃপক্ষের এমন উদ্দ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নগরবাসী ধন্যধন্য করেছিল। কিন্তু নির্বাচনী ঝড়ো হাওয়ায় সব উলট পালট হয়ে গেল। অর্থ আর উদ্দ্যোগের অভাবে মুখ অপমৃত্যু ঘটে ভাল উদ্দ্যোগের। লালনশাহ পার্ক গরুর গোয়ালে পরিনত হলো। অবশ্য সিটি কর্তৃপক্ষ দখলমুক্ত করার জন্য লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে রক্ষনাবেক্ষনের লীজ দেবার উদ্দ্যোগ নিয়েছিল। আর অমনি ফোঁস করে উঠলো প্রতিবাদী কিছু মানুষ। বায়ু সেবনের জায়গায় কাটাতারের বেড়া বলে চিৎকার শুরু। মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি। পিছু হটলো সিটি কর্তৃপক্ষ। আবার দখল শুরু হলো পার্ক, রাস্তা, যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য দেয়া পিলার সব উপড়ে ফেলা হলো। তীরের রাস্তা ফুটপাত সব দখলে চলে গেল। এসব নিয়ে এখন কারো রা নেই। অবশ্য কিছু সংগঠন আছে যারা মাঝে মধ্যে এসব নিয়ে মানববন্ধন বিবৃতি দিয়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। কারো কারো অবস্থা ভাত দেবার মুরোদ নেই। কিল দেবার গোঁসাইয়ের মত। নগরীর বিভিন্ন গরুত্বপূর্ন রাস্তা বাজার বাঁধ রেল লাইনের ধার পর্যবেক্ষনের সময় নির্মলা মিশ্রের একটি গানের কথা মনে পড়ে ‘‘এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না যাতে মুক্তো আছে। গানের কথার সুরের সাথে মিলে যাচ্ছিল ‘‘এমন একটা জায়গা খুজে পেলাম না যা দখলবাজ মুক্ত আছে’’। নগরীর উন্নয়ন ও দেখভালের জন্য বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে উন্নয়ন কমিটি রয়েছে। তবে এসব নিয়ে কমিটির বৈঠক কবে হয়েছে তা কেউ বলতে পারেনা। তবে এসব দখলবাজীর ব্যাপারে তাদের নিজ নিজ দপ্তরের অনেক সীমাবদ্ধতার কথা জানান। কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা উচ্ছেদ অভিযানের উদ্দ্যোগ নিতে গেলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের রাজনীতির কাছে থমকে যায়। যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের ছত্র ছায়া কিংবা নাম ভাঙ্গিয়ে চলে দখলবাজী। ক্ষমতার কাছে সব অসহায়। আবার এরা বিরোধী দলে থাকলে দখলবাজদের দরদি হয়ে বাধার সৃষ্টি করেন। পুর্নবাসন ছাড়া উচ্ছেদ চলবেনা। আমাদের অবস্থা উভয় সংকটের পড়ার মত। সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী নগরবাসীর অভিমত তত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অপারেশন ক্লিন হার্টের মত ক’বছর পর পর অপারেশন চালানো হলে নগরী অনেকটা দখলমুক্ত হতো। চলাচলে স্বস্তি পেত। কারো অভিমত এজন্য প্রয়োজন সিটি গর্ভমেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।