Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামুদ্রিক অর্থনীতির প্রতি নজর দিতে হবে

আব্দুর রহমান লাবু | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলো তাদের সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে রয়েছে সক্রিয়। সেজন্য সম্ভাবনাময় সকল খাতকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। উদ্দেশ্য, পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা। এভাবে নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে অনেক দেশ ইতোমধ্যে নি¤œ আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আর এজন্য প্রয়োজন শুধু সরকারি নীতি ও বিনিয়োগের মানসিকতা। আমাদেরও রয়েছে এমন একটি সম্ভাবনাময় খাত,যেটি হলো সামূদ্রিক অর্থনীতি। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত সামুদ্রিক অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রযুক্তি দক্ষতা বাড়াতে গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান ও প্রয়োজনে উন্নত প্রযুক্তির দেশগুলোর সহায়তা নেওয়া। অতীতে সমুদ্র সীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমাররের সাথে বিরোধ থাকায় সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা ছিল বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র সীমা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে। সমুদ্র আইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে এক লাখ ২২ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সমুদ্রসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল অবধি অবাধ প্রবেশাধিকার ও ১৫৪ কিলোমিটার মহীসোপান অঞ্চলে মৎস্য আহরণ, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ আহরণের আধিপত্য। সমুদ্র উপকূলবর্তী অনেক উন্নত দেশ এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, যেমন নরওয়ে। আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত দেশটিকে বলা হয় ‘ধীবরের দেশ’ অর্থাৎ মৎস্যজীবির দেশ। দেশটির উপকূলে রয়েছে সুদীর্ঘ মহীসোপান অঞ্চল। মহীসোপান অঞ্চল হলো উপকূল থেকে অনধিক ১৮০ মিটার গভীর পর্যন্ত সমুদ্রের অংশ। আর মহীসোপান অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি আহরিত হয় সামুদ্রিক মাছ। তাই নরওয়ে সামুদ্রিক মাছ রপ্তানিতে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ। তাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাতও এটি। তেমনি বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান অঞ্চলকে কাজে লাগিয়ে সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আমাদের জেলেরা সমুদ্রের মাত্র ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে গিয়ে বছরে মাত্র ১০ লাখ মে.টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে। অথচ অন্যান্য দেশ যেখানে আহরণ করে ৮০ লাখ মে.টন মাছ। প্রতিবন্ধকতা হলো, আমাদের জেলেদের কাছে নেই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উন্নত প্রযুক্তির জাল ও ট্রলার। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জেলেদের উন্নত প্রযুক্তির জাল ও গভীর সমুদ্রে যাওয়ার ট্রলার দিয়ে মৎস্য খাত থেকেও আমরা অর্জন করতে পারি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। তাছাড়া সমুদ্র পথে বাংলাদেশের সাথে প্রতি বছর ৭০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হয় বর্হিবিশ্বের সাথে। পণ্য আমদানি রপ্তানিতে সমুদ্র জাহাজের স্বল্পতার কারণেও বাংলাদেশকে প্রতিবছর ৫ বিলিয়ন ডলার শুধু ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করতে হয় বিদেশি জাহাজগুলোকে। এক্ষেত্রে নিজস্ব জাহাজে পণ্য পরিবহন করার ব্যবস্থা করে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করেও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হতে পারি। এজন্য চাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ। তথ্য সূত্রে সমুদ্রের বুকে ৩ লক্ষ হেক্টর নতুন ভূমি উঁকি দিয়ে উঠেছে। এগুলোর কৃষি ও পর্যটন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও কুয়াকাটার বৈচিত্র (যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়) কাজে লাগিয়ে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে সরকারি উদ্দ্যোগ প্রয়োজন। পর্যটকদের আবাসন ও সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করতে হবে নিতে হবে পদক্ষেপ। এতে স্থানীয় উন্নয়নের সাথে সাথে বৈদেশিক মুদ্রায় সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতির

১৪ নভেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন