Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিইসি’র বক্তব্য ও বেগম জিয়ার দেশে ফেরা রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট

বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা মামলার মাঝেও ফের উজ্জীবিত

| প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : সিইসি’র বক্তব্য আর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তনের কাকতলীয় সমন্বয়কে ঘিরে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের নেতাকর্মীরা ঘুরে দাড়িয়েছে। অর্ধশতাধিক মামলা কাঁধে নিয়ে রাজপথে কোনঠাসা তৃণমুলের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন কলাকৌশলে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠছে। প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা কাঁধে নিয়ে ৫ সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীরা আন্দোলনের রনাঙ্গণে আতঙ্কে আছে। এমনি আতঙ্ক আর ভীতি নিয়ে আগাম নির্বাচনে মাঠ দখলের বিষয়ে তারা তটস্থ। তদুপরি গত ৩ দিনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণের আবহে বেশখানিকটা নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। তৃণমুলের নেতাকর্মীরাও নামছেন আটঘাট বেধে। তবে বসে নেই শাসক দলের টপ লিডাররাও। তারা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। 

সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোট রাজনীতি আর আন্দোলনের মাঠ এখনও কন্টকাকীর্ণ নয়। সর্বশেষ গত পরশু মঙ্গলবার বাগেরহাট মহিলা জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী সভা ও সম্মেলন করতে দেয়নি প্রশাসন। ক্ষমতাসীনদের দাপটে বাধ্য হয়ে বাগেরহাটের সম্মেলন হয়েছে খুলনার বিএনপি কার্যালয়ে। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বাগেরহাটে সভা সমাবেশ করতে পারেনি। কিন্তু সিইসি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতাসহ ইতিবাচক বক্তব্য প্রদান করায় মামলায় জর্জরিত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের নেতাকর্মীরা বেশখানিকটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা এসব নেতাকর্মীর জন্য সাপে বর হয়েছে। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতি এ অঞ্চলের বিএনপি’র রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা ভাটা পড়লেও এখন বেশ সরগরম অবস্থা। এছাড়া গোটা খুলনায় রাজনৈতিক দলের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন। খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নের গ্রামের অলিতে গলিতে নির্বাচনী কর্মকাÐ শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি দলের কাÐারি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হয়েছে তা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের জন্য মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে নেতাকর্মীরা। এছাড়া সিইসি’র সাথে বিএনপি’র বৈঠকের পর কর্মীরা আশা করছে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে। তাই বিএনপি প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে চাঙ্গা করে তুলছে নিজ এলাকা।
খুলনার মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপি অধ্যুষিত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে নেতাকর্মীরা এখনও আতংকে। তবে রাজপথ থেকে আমরা সরে দাড়ায়নি। গ্রেফতার আর হয়রানির ভয়ে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে সভা সমাবেশে বুক ফুলিয়ে অংশ নিতে পারছেনা। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরার জেলা উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মীর পরিবারও স্বস্তিতে বসবাস করতে পারছেনা। মিথ্যা মামলা যেন তাদের কাছে মুর্তিমান আতংক। এসকল আতংক কাটিয়ে ভোট রাজনীতির মাঠে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। বেগম জিয়ার নির্দেশে আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো। বেগম জিয়ার দেশে ফেরাকে তিনি রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র খুলনা তথা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।
মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি মানেই গণতন্ত্রের প্রতি চরম হুমকি স্বরুপ। বিএনপি কর্মীদের এলাকা ছাড়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। যে কারণে আগামী ভোট উৎসব এক পেশে অবস্থানে পর্যবসিত হচ্ছে। সিইসি’র বক্তব্যে আমরা আশাবাদী। তবে ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। আর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আমরা রাজপথে থাকবো কারণ বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। শুধু খুলনায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীরা বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা রয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলায় অর্ধশত মামলায় আসামী হয়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বাগেরহাট জেলায় কয়েকশত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে প্রায় দু’ডজনের মত। এছাড়া কোন সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না প্রশাসন। এ প্রেক্ষপটে বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতা মনিরুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকারের মসনদ টিকিয়ে রাখা যাবে না। এদের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে ভালো মানুষদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। খুব শিগগির বাগেরহাটেই বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই কর্মসূচি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’ তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম জিয়ার সাথে আমি আসামি হয়েছি। তাই বলে রাজপথ থেকে সরে দাঁড়ায়নি। বেগম জিয়া দেশে ফিরেছেন। তিনি আন্দোলনের যে কর্মসূচি দেবেন, নেতাকর্মীরা রাজপথে থেকে সে কর্মসূচি সফল করবে। নেতাকর্মীরা বসে নেই কখনই। তাদের বন্দি করে রাখা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, তাছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করছে। তল্লাশীর নামে হয়রানির শিকার হচ্ছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবার পরিজন। পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের জামিন ধরার জন্য যারা আদালতে তদবীর করছে তাদেরকেও হয়রানি করা হচ্ছে। তল্লাশীর নামে কর্মীদের পুলিশ খুঁজছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ