Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট-২ : বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর-বিশ্বনাথে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আ’লীগে ত্রিধারা জাপা একক বিএনপিতে ইলিয়াছ পত্মী
আবুল কালাম আজাদ, মামুনুর রশীদ মামুন : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠছে নির্বাচনী আসন সিলেট-২। রাজনৈতিক দলের মনোনয়নের আগে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। হাট- বাজারে শুভেচ্ছা ব্যানার আর ফেষ্টুন টানানোর মাধ্যমে তাদের প্রার্থীদের পাশাপশি নেতাকর্মী সমর্থকেরাও মাঠে নেমেছেন। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন তারা। তৃণমূলে বইতে শুরু করেছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যেও আগামী নির্বাচন নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। সিলেট-১ আসনের পরেই প্রবাসী অধ্যুষিত ‘সিলেট-২’ (বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর) সংসদীয় আসন নানাকারণে চলে এসেছে আলোচনার শীর্ষে। এই জনপদের অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের ইশারায়। সে কারণে দেশের নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারীদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে হচ্ছে প্রবাসেও। তবে আওয়ামী লীগে রয়েছে ব্যাপক গ্রুপিং ও কোন্দল।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম লবিং গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীন কোন্দল। তা এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে লন্ডন, আমেরিকা, কানাডাসহ বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির রয়েছেন এক সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনার রুশদীর লুনা। তিনি বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত।
অন্যদিকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছেন সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী । এ দুইজনের চরম দ্ব›দ্ব বিভেদের কারণে এখন মাঠের নেতা কর্মীরা ভিড়ছেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী ৯০এর রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোঃ শাহজাহান। তিনি শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন কারণ সকল দলীয় লবিং গ্রুপিং এর উর্ধ্বে থেকে ক্রমাগত সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠােছন। মাঠের সেতা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, দুই চেীধুরীর দ্ব›েদ্বর কারণে নৌকা প্রতীক কাজী শাহজাহানের ভাগ্যেই থাকতে পারে। এদিকে বিএনপির একক প্রার্থী সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর পত্মী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জয়ের লক্ষ্যে মাঠে কাজ করছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াহইয়া চেীধুরী এহিয়া এমপি হওয়ার পর থেকে আওয়ামীলীগের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে কোন্দল। এতে দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। ফলে জাপাকে হটিয়ে আগামি নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে থেকে প্রার্থী দেয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছেন ক্ষমতাসিন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অনুসারীরা প্রকাশ্যে পৃথক ভাবে দলীয় বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করে আসছেন। দন্ধের কারনে দীর্ঘদিন থেকে তিন উপজেলায় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কমিটি আটকে থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে শফিক চৌধুরী বিভিন্ন উৎসবসহ নানা অনুষ্ঠানে ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। একই আসনে মনোনয়ন পেতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নেতা কাজী মো: শাহজাহান। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারা মনে করছেন দুই চৌধুরীর দ›েদ্বর বিকল্প প্রার্থী কাজী শাহাজাহানই সমাধান। তারা মনে করছেন আওয়ামীলীগের কোন্দল ভাংতে কাজী শাহ জাহানের বিকল্প নেই। কাজী শাহজাহান এমসি কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয় ছিলেন এবং ঢাকা জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগেরও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্য কার্ডিফ অবস্থান করে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এলাকার অনেকে মনে করছেন কাজী শাহজাহান জনপ্রিয় ও তরুন রাজনীতিবিদ হিসেবে তাকে প্রার্থী দিলে আওয়ামীলীগের জন্য ঐক্য ও বিজয় নিয়ে আসা সম্ভব। এ আসনে বিজয় চিনিয়ে নিতে মাঠে নেমেছেন নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর পত্মী তাহসিনা রুশদীর লুনা। জয়ের লক্ষে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনার জন্য মাঠে ব্যাপকভাবে কাজ করছে বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবকদল, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দলের অভ্যন্তরে বিরোধ থাকলেও ইলিয়াস-লুনার প্রশ্নে এ আসনে বিএনপি ঘরানার সবাই একজোট। এখানে লুনার প্রার্থীতাও শতভাগ নিশ্চিত বলে জানা গেছে। তিনি নিজেও রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছেন। স্থানীয় নেতাদের মতে, নিখোঁজ ইলিয়াসই এখনও এই আসনের বিএনপির ঐক্য ও শক্তির প্রতীক। ইলিয়াসের ছায়া হিসেবে এখন নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছেন ইলিয়াস পত্মী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা।
মহাজোটের প্রার্থী না হলেও বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থীতা প্রায় নিশ্চিত। এদিকে বর্তমান জাতীয় পার্টীর এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে উন্নয়ন দেয়ার নামে উৎকোচ আদায়ের। সিলেট-২ আসনের বর্তমান এমপি এহিয়ার স্বজন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। এর মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ, উন্নয়ন দেয়ার কথা বলে উৎকোচ আদায় ইত্যাদি অভিযোগ তুলছেন আওয়ামীলীগ-বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।
এ ব্যাপারে জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, টিআর, কাবিখা বিধি অনুসারে বাস্তবায়ন করেছি। চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে পৌঁছে দেয়া আমার দায়িত্ব। দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। কোনো স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করিনি।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, তৃণমূলকে সংগঠিত করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এম ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে এ আসনটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছিলাম। প্রমাণ করেছিলাম আমার জনপ্রিয়তা। বিগত নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত জেনেও দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে গ্রামে গ্রামে হেঁটে জোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছি।
ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দাল মিয়া বলেন, সিলেট-২ আসনে আগামী দিনের কান্ডারি হিসেবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিকল্প নেই। কারণ তার পিছনে রয়েছেন এলাকার তরুন প্রজন্মসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ।
বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালজুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনহার মিয়া বলেন, যিনি সব সময় ভোটারের শোকে-দু:খে পাশে থাকেন এবং জনগণের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখেন জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকেই প্রার্থী দিবেন। এক্ষেত্রে সিলেট-২ আসনের জন্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর বিকল্প কোন প্রার্থী আমরা দেখছি না।
বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির নেতা আবদাল মিয়া এবং বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, এম ইলিয়াস আলীর ভালোবাসার ভোটে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। এখানে ইলিয়াস পত্মী লুনার বিকল্প প্রার্থী নেই। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ