Inqilab Logo

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাবির ভর্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই আবাসনের জন্য যুদ্ধ

| প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাবি রিপোর্টার : বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাচ্যার ক্যা¤্রজি বলে খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই শুরু হয়েছে আরেক যুদ্ধ। সর্বত্রই ঠাই নেই ঠাই নেই অবস্থা। গেস্ট হাউজ রেস্ট হাউস, সরকারী অফিস, ক্লিনিক সর্বত্রই একই অবস্থা। ধারণা করা হচ্ছে এবার ভর্তিচ্ছুক ৩ লাখ শিক্ষার্থীর সাথে অবিভাবকসহ শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে ৭ থেকে ৮ লাখ লোকের সমাগম হতে পারে। তাদের অধিকাংশের থাকার জায়গা নেই কোথাও। তাই পরীক্ষা দেয়ার চেয়ে এখন বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিভাবে থেকে পরীক্ষা দিবেন তাঁরা। অবিভাবকদের সর্বত্রই চলছে এই চিন্তা। আর এই সুযোগে রাজশাহীর খ্যাত অখ্যাত হোটেলÑমোটেলসহ সর্বত্রই চলছে সিট কেন্দ্রীক রমরমা বাণিজ্য। সেগুলোতে প্রতি রাত থাকার জন্য ভাড়া নেয়া হচ্ছে নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন থেকে কয়েকগুন পর্যন্ত বেশী। কোন ধরণের প্রতিকার না করে বরং নিরব হয়ে আছে প্রশাসন। জানা গেছে, রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের থাকার কোন নির্ধারিত জায়গা না থাকায় নিরুপায় হয়ে কয়েকগুন বেশী ভাড়া দিয়ে হোটেল, মেস, রেস্টহাউজ, গেস্টহাইজ সব জায়গায় বেশী দামে সিট বুকিং দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নবাগত ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রাজশাহীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ১২ থেকে ১৩ টি হোটেলসহ বিভিন্ন মেস, রেষ্টহাউজ ঘুরে পাওয়া যায় এই সত্যতা।
অভিযোগকারীরা জানান, আগামী ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। দূর দূরান্ত থেকে পরীক্ষা দিতে আসবেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুন শিক্ষার্থী আবেদন করায় শিক্ষার্থী-অবিভাবক মিলিয়ে এবার ৮ থেকে ৯ লক্ষ লোকের সমাগম হবে রাজশাহীতে। তবে এত বিপুল সংখ্যক লোকের থাকার জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ার সুযোগ নিয়ে নগরীর প্রত্যেকটি খ্যাত অখ্যাত হোটেল থেকে শুরু করে সর্বত্রই কয়েকগুন করে বেশী ভাড়া নিয়ে সিট বুকিং দেয়া হচ্ছে। থাকার জায়গা না থাকার জন্য বেশী দামে সিট বুকিং নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
অনুসন্ধানের জন্য হোটেলগুলোতে গিয়ে দেখা যায়,কাগজে কলমে সিট বুকিং থাকলেও বেশী ভাড়ার কথা বললে সিট মিলছে। তবে চাহিদার তুলনায় সিটের সংখ্যা নগণ্য থাকার কারণে হোটেল মালিকদের টাকার চাহিদা আরো বেশী দেখা গেছে। যেগুলোতে সিট প্রতি ভাড়া ১ হাজার থেকে একটু উপরে সেগুলোতে সর্বনি¤œ ২৫ শত টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। হোটেলগুলোতে এক সিটের রুমের জন্য যেখানে আগে ভাড়া নেয়া হতো ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা সেগুলোতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ শত থেকে উপরে। দুই সিটের গুলো যেগুলো আগে ভাড়া নিত ১ হাজার থেকে ১২শত টাকা সেগুলোতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে কমপক্ষে ২৫শত টাকা থেকে সুযোগ বুঝে আরো উপরে। তাছাড়া এসি রুমগুলোতে লোক বুঝে আরো বেশী ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে হোটেল মেস মালিকরা সিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে একই নিয়ম নীতি অনুসরণ করছেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে একটি নামকরা হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে অন্যরকম চিত্র। সেখানে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে হোটেল কেন্দ্রীক গড়ে ওটা দালাল চক্র আগে থেকেই হোটেলের সিট বুকিং দিয়ে রেখেছে। এই হোটেলগুলো থেকে সিট নেই বলে ফেরত পাঠানোর পরক্ষনেই গেটে দাঁড়িয়ে থাকা কথিত দালাল চক্রের লোকজন সিট দেয়ার কথা বলে দাবি করছেন মোটা অংকের টাকা,সাথে সব অগ্রিম টাকা দিয়ে সিট বুকিং দিতে হবে বলে জানান। তবে এই দালাল চক্রের কাছ থেকে সিট বুকিং দিয়ে বিগত বছরের পরীক্ষার সময়টাতে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হোটেল কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবারেই রাজশাহী বিশ্ববিধ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় বাইরে থেকে অনেক লোকজন আসার কারণে সিট সঙ্কুলান দেওয়া যায় না। তাই এই সময়টাতে অধিকাংশ হোটেল মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করে। তবে অন্য সময়টাতে আগের ভাড়াই ঠিক থাকে।
জানতে চাইলে, একটি হোটেলের সহকারী ম্যানেজার বলেন, আমরা সাধারণত বেশী ভাড়া নেইনা, তবে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে লোকের অনেক চাপ থাকে তাছাড়া হোটেলের কর্মচারীদের অনেক পরিশ্রম হওয়ার কারণে হয়তো একটু বেশী ভাড়া নেয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষার আগে সাধারণত সিট প্রতি কত ভাড়া নেয়া হয় এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সিঙ্গেল সিট ১হাজার টাকা, সেমি ১২ শত টাকা, ডবল সিট ১৫ শত টাকা এবং এসি ২ হাজার টাকা নেয়া হয়। অথচ সেখানে গিয়ে দেখা গেছে সিঙ্গেল ১৫ শত টাকা, সেমি ২ হাজার, ডবল ২৫ শত টাকা এবং এসির জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন সহকারী পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) বলেন, আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ কোন ধরণের লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দেয়নি। তারপরেও আমি চেষ্টা করব কোন ধরণের প্রতিকার করা যায় কিনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ