Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সতর্ক হতে হবে অভিভাবকদের

ব্ল-হোয়েল গেম, নিহত সায়েমের মোবাইলটি ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পপকর্ন কার্নিভাল নামের একটি গোপন লিঙ্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ব্ল-হোয়েল গেম নিয়ে অভিভাবকদের আরো জনসচেতনতা প্রয়োজন। এরই মধ্যে ঢাকায় এক যুবক এ গেমে আসক্ত হয়ে আত্মহত্যা করায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে সাধারন মানুষের মধ্যে। ঢাকার বাইরেও বেশ কয়েকজন গেম আসক্তকে শনাক্ত করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতংকিত না হয়ে সকলের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনা তৈরি করতে হবে। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের সর্তক নজরদারীর পাশাপাশি কাউন্সিলিং করতে হবে বিষয়টির উপরে। একই সাথে যাতে কেউ ইচ্ছা করলেই ওই লিংকে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট্রদের আরো সক্রিয় হতে হবে। এরই মধ্যে দেশে এ বিষয়ে ফেসবুক সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই নিজ নিজ বন্ধুদের বিশেষ বার্তা পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশেও পৌঁছে গেছে ব্ল-হোয়েল গেম। অভিভাবকরা উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের স্মাট ফোন ব্যবহার করার বিষয়ে সর্তক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উঠতি বয়সীদের দিকে খেয়াল রাখা, দেখি কী হয়-এর কৌতূহল অনেক সময়ই যাদের নিয়ে যায় ভুল পথে। এ কারণে সচেতনতা বেশি জরুরি। ভুল তথ্য প্রচার বা গুজব রটানো উল্টো এই গেমটির প্রচারণায় বেশি সাহায্য করবে। ফলে, সঠিক তথ্য জেনে রাখাটাই বেশি দরকার।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর রাজধানীর পশ্চিম কাজীপাড়ায় তাদের ভাড়া বাসা থেকে সাইমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন মরদেহের বাম হাতে তিমি মাছ› আঁকার বিষয়টি নজরে আসে। তিমি মাছের ট্যাটু দেখে পুলিশ ও পরিবারের লোকজন ধারণা করছেন, ব্ল-হোয়েল গেমের ফাঁদেই সাইম আত্মহত্যা করেছে। মিরপুর মডেল থানার এসআই আতিকুর রহমান বলেন, সাইম ল্যাপটপ ব্যবহার করতো না। আত্মহত্যার আগে সে তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি ভেঙে ফেলে। মৃত্যুর আলামত হিসেবে ভাঙা মোবাইলটি সংগ্রহ করা হয়েছে। সে আসলেই ব্ল- হোয়েলে আসক্ত ছিল কি না তা নিশ্চিত হতে তার ভাঙা মোবাইলটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সূত্র জানায়, মাদারীপুরের রাজৈরে নিশ্চিত মরণ ফাঁদ পরিচিত ব্ল-হোয়েল গেম খেলে স্বপ্ন মালো (১৩) নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরের ইউএস মডেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সে রাজৈর পৌর এলাকার কুঠিবাড়ি মানিক মালোর ছেলে ও কেজেএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ছেলেটি সুস্থ রয়েছে। ব্ল-হোয়েল গেম সম্পর্কে সকল বাবা-মাকে সর্তক হতে হবে, যেন তাদের সন্তান এই খেলায় মগ্ন না হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর পুরান ঢাকার সদরঘাটের একটি বহুতল মার্কেটের ছাদ থেকে পড়ে রাকিব (১৮) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হাতের কিছুটা অংশ জুড়ে কাটা দাগ ছিল। যা দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা ধারণা করেছেন আত্মঘাতী গেমস ব্ল-হোয়েল খেলেই ওই তরুণ ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যদিও পুলিশ বলছে আত্মহত্যা বিষয়টি তদন্ত করছে। মিরপুর থানার এসআই আতিকুর রহমান জানান, নিহত কিশোর সায়েমের বাম হাতে সুচ দিয়ে তিমির মতো ছবি আঁকা রয়েছে। এ ছাড়াও তার জিন্স প্যান্টে বিভিন্ন ট্যাটু লাগানো দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা মনে হয়েছে। তিনি আরো জানান, নিহত কিশোরের পরিবার ও তার বন্ধুরা পুলিশকে জানিয়েছে যে, সায়েম মোবাইলে গেম খেলতো। সা¤প্রতিক সময়ে ব্ল-হোয়েল নামে যে গেম খেলে প্রাণ দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে সেই গেম খেলে সে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সায়েমের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্ল-হোয়েল গেমের নামে ভুয়া অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করলে ডিভাইসের সমস্যা হতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে। ব্ল-হোয়েল গেমসহ ক্ষতিকর অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র মতে, ব্ল-হোয়েল একটি অনলাইন গেইম, যা অংশগ্রহণকারীকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যায়। এই গেইমে খেলোয়াড়দের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিভিন্ন কাজ করতে দেয়া হয়, শুরুতে হালকা কিছু কাজ দেয়া হলেও ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর সব কাজ দেয়া হয়। সব শেষে চূড়ান্ত কাজ হিসেবে খেলোয়াড়কে আত্মহত্যা করতে বলা হয়। ২০১৩ সালে রাশিয়ায় ‘এফ৫৭’ নামে যাত্রা শুরু করে গেইমটি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ফিলিপ বুদেইকিন নামের এক সাবেক মনোবিদ্যা শিক্ষার্থী গেইমটি তৈরি করেন। ওই গেইম খেলে ১৬ কিশোরীর আত্মহত্যার পর বুদেইকিনকে রাশিয়ায় আটক করা হয়। ব্ল-হোয়েল গেইমে বাংলাদেশেও আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমে আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত সোমবার বিটিআরসিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় বিটিআরসি ৫ দিন আগে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। ইন্টারনেটে ব্ল-হোয়েল কিংবা এর মতো জীবনবিনাশী কোনো গেইমের তথ্য পেলে ২৮৭২ নম্বরে ফোন করে তা জানাতে বলা হয় সেখানে।
কীভাবে বুঝবেন কেউ ব্ল-হোয়েলে আসক্ত
যেসব কিশোর-কিশোরী ব্ল-হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদেরকে সব সময় লুকিয়ে রাখে। স্বাভাবিক আচরণ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় স্যোশাল মিডিয়ায়। থাকে চুপচাপ। কখনো আবার আলাপ জমায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেককে। একটা সময়ের পর নিজের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলতে থাকে তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ যদি এই গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে তবে তার আচরণে আগে থেকেই কিছু আঁচ করা সম্ভব হবে। এক দিনেই কোনো মানুষ আত্মহত্যাকে বেঁছে নিতে পারে না। তাই শিশুর আচরণে কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতি নজরদারি বাড়িয়ে তাকে বিপথগামী হওয়ার পথ থেকে রক্ষা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিভাবক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ