Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পশ্চিম জোনের সাড়ে ৩ কোটি মানুষের পিছু ছাড়ছে না বিদ্যুৎ সঙ্কট ও বিড়ম্বনা

বরিশাল থেকে বিশেষ সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সঞ্চালন সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ
অসহনীয় বিদ্যুৎ সঙ্কট পিছু ছাড়ছে না দেশের পশ্চিম জোনের ২১জেলার প্রায় সাড়ে ৩কোটি মানুষের। সান্ধ পীক আওয়ারে প্রায় সাড়ে ১১শ’ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরিতে এ অঞ্চলে সরবারহ প্রায় ৭শ’ মেগাওয়াটে হৃাস পাচ্ছে। জাতীয় গ্রীড থেকে চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশ থেকে চার-তৃতীয়াংশের বেশী বিদ্যুৎ দিতে পারছে না পিডিবি। ফলে চরম দুর্ভোগে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় সাড়ে ৩কোটি মানুষ। এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওজোপাডিকো’ ছাড়াও বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ ক্রমাগত নাকাল হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে। এরসাথে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি পরিস্থিতিকে আরো সংকটাপন্ন করে তুলছে। জরুরী চিকিৎসা ও পানি সরবারহসহ অনেক অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা সমুহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে বার বার।
পশ্চিমজোনের ২১টি জেলায় সান্ধ পীক আওয়ারে বিদ্যুৎ চাহিদা এখন সাড়ে ১১শ মেগাওয়াটেরও বেশী। ডে-পীক আওয়ারে তা ৮শ মেগাওয়াটের মত। কিন্তু শনিবার সন্ধায় সর্বোচ্চ সরবারহ ছিল ৭শ মেগায়াটের মত। এরমধ্যে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে সর্বমোট দেড়শ মেগাওয়াট এবং বৃহত্বর খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চলে সাড়ে ৫শ মেগাওয়াটের মত বিদ্যুৎ সরবারহ করা হয়। দিনভর লোডসেড সান্ধ্য পীক আওয়ারে চরম আকার ধারন করছে। গত কয়েকদিন ধরেই সান্ধ্য পীক আওয়ারে পরিস্থিতিযথেষ্ঠ নাজুক।
এরসাথে বার বার গ্রীড টিপ করাসহ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ৩টার পরপরই বরিশালে রূপাতলী মূল সাব-স্টেশনে থেকে একটি ৩৩কেভী বাণিজ্যিক লাইনের ব্রেকারে আগুন ধরে পুরো সাব-স্টেশনটি সহ গ্রীড সাব-স্টেশনের ইনকামিং সব লাইন ট্রিপ করে। ফলে সমগ্র বরিশাল ও ঝালকাঠী জেলায় একই সাথে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হয়ে এক ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মিনিট পনেরর মধ্যে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলেও গোলযোগপূর্ণ ৩৩কেভী ফিাডরটি চালু করতে গতকাল প্রায় দুপুর গড়ায়।
তবে গতকাল দিনভর বরিশাল মহানগরীতে কোন লোডশেডিং না থাকলেও গোলযোগপূণ ৩৩কেভী ফিডারটির ব্রেকার মেরামতে নগরীর কয়েকটি ফিডার বন্ধ রাখতে হয়। তবে সান্ধ্য পীক আওয়ারে গোটা পশ্চিম জোনেই আবার ফিরে আসে লোডসেডিং।
এদিকে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী ও পিডিবি পশ্চিম জোনসহ দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবারহের ক্ষেত্রে কিছুটা বিমাতাসুলভ আচরন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এঅঞ্চলের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে নিয়ে সেখান থেকে ন্যায্য হিস্যার চেয়ে কম বিদ্যুৎ সরবরাহরেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ যখন পশ্চিম জোনের কোন উৎপাদন ইউনিট বন্ধ থাকে, তখনও এ অঞ্চলের সরবারহ অনেক বেশী হ্রাস করা হয়। এমনকি ভোলার ২২৫মেগাওয়াট ও বরিশালের সামিট গ্রুপের ১১০মেগাওয়াটের উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সমুদয় বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযূক্ত করার পরেও দক্ষিণাঞ্চলের চাহিদা মাফিক ১২০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়না। কিন্তু কোন কারনে এসব ইউনিটর উৎপাদন বন্ধ বা ব্যহত হলে তখন সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যৎ সরবারহ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। তবে এসব বিষয় পিজিসিবি ও পিডিবি’র দায়িত্বশীল মহল পরক্ষোভাবে স্বীকার করলেও কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজী হননি। ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর জিএমগন এসব বিষয়ে একাধীকবার উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষন করলেও কোন ইতিাবচক ফল হয়নি। এদিকে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবারহ ও সঞ্চালন ব্যবস্থাও যথেষ্ঠ নাজুক। ভেড়ামাড়া-বরিশাল ডবল মার্কট ১৩২কেভী ও বরিশাল-গোয়ালপাড়া ১৩২কেভী সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইন দুটি ৩০বছরেরও অধীক পুরনো। এসব লাইন বেশীরভাগ সময়ই ওভারলোডেড হয়ে থাকে। ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই লাইন সমুহ স্বভাবিকের চেয়ে অনেক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় নিচে নেমে আসছে। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলে ঘন ঘন গ্রীড বিপর্যয় ঘটছে। একবার গ্রীড বিপর্যয়ে সমুদয় সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্রগুলোও একযোগে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সরবারহ ব্যবস্থায়ও বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের গুরত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থাও যথেষ্ঠ নাজুক। কয়েক যুগের পুরেনা বিতরন ব্যবস্থা যোড়াতালী দিয়ে এখনো গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। খোদ বরিশাল মহানগরীতেই ‘আকাশে মেঘ জমলে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে’ বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
তবে ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, ‘দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র পশ্চিম জোনের বিদ্যুৎ বিতরন ও সসরবারহ ব্যবস্থা উন্নয়নে দুটি প্রকল্পের কাজ চবলমান রয়েছে। আগামী দুবছরের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পরিস্থিতর ব্যপক উন্নতি ঘটবে’। অপরদিকে পিজিসিবি’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে আরো বেশ কয়েকটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এসব লাইন নির্মান কাজও বছর দুয়েকের মধ্যে শেষ হলে বর্তমান সমস্যা থাকবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ