Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাসোহারা দিয়ে চলছে মংলার স’মিল

| প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মংলা বন্দর থেকে মনিরুল ইসলাম দুলু : মংলার সকল স’মিল অবৈধ! এমনটাই দাবি করেছে লাইসেন্স প্রদানকারী সংন্থা বনবিভাগ। তবে মালিক পক্ষের দাবি মংলায় করাত কল (স’মিল) স্থাপনের জন্য লাইসেন্স পাওয়া যেন একটি যুদ্ধ জয়ী হওয়া। আবেদনের পর লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে একর পর এক তদন্তে সুপারিশ মিললেও পাওয়া যায়না সরকারের অনুমতি পত্র (লাইসেন্স)। তবে মাসোহারা দিয়েই চালাতে হয় করাত কল। কর্মকর্তা আসে কর্মকর্তা যায়, দিয়ে দেন লাইসেন্স পাওয়ার সুপারিশ কিন্তু মিলছেনা সেই লাইসেন্স। এত করে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি হচ্ছে অবৈধ অর্থের লেনদেন। এভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর।
মংলার মোঃ মোক্তার হোসেন মল্লিক ও মোঃ জসিম উদ্দিন মৃধা গত ২০১৩ সালের এপ্রিরের ১৭ তারিখ করাত কল স্থাপনের লক্ষে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বনবিভাগ একাধিকবার তদন্ত করে। এরপর উপজেলা যাচাই বাচাই কমিটি জেলা কমিটিকে লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে মর্মে সুপারিশ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি কাংখিত সেই লাইসেন্সটি পাননি।
মংলা নুরুল হক জোমাদ্দার ২০১৩ সালের ২ ফেব্রæয়ারি করাত কলের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বনবিভাগ একাধিকবার তদন্ত করে। এমন কি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে লাইসেন্স দেওয়ার সুপারিশ করলেও লাইসেন্স পাননি নুরুল হক জোমাদ্দার। এমন বহু উদাহরন রয়েছে এখানে।
এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে সেই সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ গত ১ সেপ্টেম্বর মংলার ২৩টি করাত কলের মধ্যে ৯টি করাত কলকে অবৈধ ঘোষনা করে তা উচ্ছেদের জন্য পত্র জারী করেছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া।
স’মিল মালিক মোসাম্মদ নুর জাহান বেগম জানান, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সরকারী নিয়ম মেনে বৈধ ব্যবসা করার জন্য সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। মংলা পৌরসভা, উপজেলা ভুমি অফিস, মংলা মুক্তিযোদ্ধা কমন্ড সুপারিশ দিয়েছে এবং বনবিভাগ তদন্ত করে লাইসেন্স প্রদান করা যেতে পারে মর্মে মতামত দিয়েছে আবার সেই বনবিভাগ আবার আমার প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদের চেষ্ঠা করছে।
স’মিল মালিক মোঃ লোকমান হোসেন জানান, মংলাতে ২৩ টি স’মিল রয়েছে। কিন্তু ৯টি স’মিল কেন উচ্ছেদের চেষ্ঠা করা হচ্ছে। এটা অমানবিক। ২০১২ সালের ২৭মে প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে পৌর এলাকায় করাত কল স্থাপন করা যাবে সেই মোতাবেক আমরা যারা আবেদন করেছি তাদের নতুন লাইসেন্স প্রদান এবং যারা নবায়ন বরাতে পারেনি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হোক এই দাবি করি।
স’মিল মালিক আঃ রহিম জানান, আমরা সুন্দরবনের কোন গাছ চেরাই করিনা। প্রত্যেকটি মিলে দেশীয় গাছ চেরাই করে থাকি। এখন যদি সরকার করাত কল (স’মিল) এর লাইসেন্স না দেয় তাহলে গরীব মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়বে। কারন গরীব মানুষই দেশীয় গাছ চেরাই করে বসত ঘর নির্মান করে বমতঘরে বসবাস করে।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট সামাজিক বনায়ন বিভাগে সহকারী বন সংরক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ সরদার জানান, মংলাতে যে কয়টি করাত কল রয়েছে তা সবই অবৈধ। কারন যাদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে সেই সব লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি আর যাদের লাইসেন্স দেয়া হয়নি তারাও অবৈধ।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট সামাজিক বনায়ন বিভাগে বন সংরক্ষক (ডিএফও) মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, মংলাতে কয়টি করাত কল বৈধ এবং অবৈধ তা দেখভাল করে থাকেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদি জামান মংলাতে কয়টি করাত কল বৈধ এবং কয়টি অবৈধ তার হিসাব তিনি জানাতে পারেন নি। তবে তিনি দাবি করেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে বন সংরক্ষক (ডিএফও) মিল উচ্ছেদ অভিযানে নামেননি। তবে লাইসেন্স না থাকার জন্য ৯টি স’মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেছে বাগেরহাট ডিএফও।
বনবিভাগের বিরুদ্ধে লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে দিমুখী নীতি অবলম্বন করে স্বার্থ হাসিলের অভিযোগ পুরানো।এখন আবার এই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে নানা মুখী অভিযোগ করছে স’মিল মালিকরা। স’মিল মালিকরা দাবি করেছেন নতুন লাইসেন্স প্রদান এবং যারা নবায়ন বরাতে পারেনি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হোক। এত করে সরকার রাজস্ব পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ