রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি থাকলেও আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত চাঁদপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।
চাঁদপুরের পাঁচটি আসন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও এসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন চান বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়। দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অর্ধশত নেতা হাইকমান্ডের সঙ্গে লবিংয়ের পাশাপাশি ভোটারের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির নানা কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও প্রতিটি আসনেই বড় দু’দলে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দু’দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাই যোগ্য নেতাদের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বয়সের কারণে ও পারিবারিকভাবে অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে ব্যক্তি ইমেজ হ্রাস পাওয়ায় কয়েকজন প্রার্থীর আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির সাবেক কয়েকজন সংসদ সদ্যসের দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকা ও মৃত্যুজনিত কারণে পাঁচটি আসনের অধিকাংশতেই নতুন প্রার্থীর সন্ধানে আছে দলীয় হাইকমান্ড। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিরও নতুন মুখের প্রার্থী দেখা যেতে পারে।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) : আসনের বর্তমান এমপি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকেই এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন বলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করছে। অপরদিকে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেনও মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত এ আসনে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন। যদিও বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ মামলার ফেরারি আসামি হয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন মিলন। তার অনুপস্থিতিতে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মানিক, বিএনপি মালয়েশিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন কচুয়ায় নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে এবং প্রবাসী ও সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমও মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কচুয়া উপজেলা আহŸায়ক ইমদাদুল হক রোমনের নাম আলোচনায় আছে বলে শুনা যায়।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ) : আসনে বর্তমান এমপি হলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে পারিবারিক বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনায় তার ব্যক্তি ইমেজ এলাকায় প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করেন নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের একাংশ। এ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক এমপি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মো. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম ও চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আমিন রুহুল।
এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালাল উদ্দিন ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী। ড. জালাল উদ্দিন লবিংয়ের পাশাপাশি এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া গণসংযোগে আছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার ওবায়েদুর রহমান টিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক এম এ শুক্কুর পাটওয়ারী, সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী নূরুল হুদার ছেলে তানভির হুদা ও সাবেক এমপি আলম খান।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির আহŸায়ক মো. মিজানুর রহমান খান ঘোষণা হলেও তিনি গণসংযোগ শুরু করেননি।
চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচর) : আসনে নৌকার ব্যানারে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি। তিনি এবারো মনোনয়ন পাবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। সে লক্ষে প্রতি সপ্তাহে এলাকায় এসে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি গণসংযোগ করছেন। এ আসনে দলটির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও রয়েছেন ব্যাপক গণসংযোগে। মনোনয়ন দৌড়ে সুজিত রায় নন্দী এবার শক্ত অবস্থানে আছেন বলে নেতাকর্মীরা জানান। বাংলাদেশ মৎস্যজীবী লীগ চাঁদপুর জেলার শাখার সভাপতি রেদওয়ান খান বোরহানও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগ করছেন ।
এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে দলের জেলা বিএনপির আহŸায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নাম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলের হাল ধরে আছেন। প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের খোঁজখবরের পাশাপাশি গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়াও বিএনপি মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সাবেক তিনবারের এমপি জি এম ফজলুল হক ও সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি রাশেদা বেগম হীরা। ছাত্রনেতা মোস্তফা খান সফরীও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
জাতীয় পার্টি থেকে দলটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম এম আলম ও অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান মনোনয়ন প্রত্যাশী। গণফোরামের একমাত্র প্রার্থী চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম আকবরও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) : আসনে সংসদ সদস্য হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভ‚ঁইয়া। বিগত পৌর ও ইউপি নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। তবে তিনি প্রতিনিয়ত এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগ করছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা: হারুন অর রশিদ সাগর, চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ। প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতেও লায়ন হারুন সার্বক্ষণিক নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটওয়ারীও মনোনয়ন প্রত্যাশী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক এম এ হান্নান। তারা নানাভাবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে কেন্দ্রীয় যুবদলের দফতর সম্পাদক কাজী রফিক মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তাকে গণসংযোগে দেখা যায়নি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন।
চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) : আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমপির দূরত্ব সৃষ্টির বিষয় নিয়ে তৃণমূলে আলোচনা রয়েছে। এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে রফিকুল ইসলামের প্রতিদ্ব›দ্বী পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসাইন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা ও ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান। তারা প্রায়ই এলাকায় গিয়ে উঠানবৈঠক, সভা, দরিদ্রদের নানা সহযোগিতা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন।
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে আছেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক। মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছেন লায়ন মমিনুল হক। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি এম এ মতিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন তারেক ও ৮০’র দশকের ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু ও মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ মুন্সীর নাম শোনা গেলেও তারা প্রচারে নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।