Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশুগঞ্জে ধানের মোকামে কমছে আমদানি : বন্ধ হচ্ছে চাতালকল

| প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে মো. হুমায়ূন কবির : দেশের পূর্বাঞ্চলের ও হাওরাঞ্চলের বৃহৎ পাইকারি মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দিন দিন কমছে ধানের আমদানি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এই মোকামে ধানের আমদানি এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। হাওড়ে ধান নেই, তাই ধানের আমদানি নেই আশুগঞ্জ মোকামে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় এবার ধানের দামও যেন আকাশছোঁয়া। এই বৃহৎ মোকামে এবারই সর্বোচ্চ দামে ধান বিক্রি হয়েছে। ধানের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দামও। এদিকে ধান সঙ্কটের কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দেড় শতাধিক চাতালকল।
সরেজমিন বৃহৎ এই মোকামের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওড়াঞ্চলের উৎপাদিত ধান আশুগঞ্জ মোকামে বেচাকেনা হয়ে থাকে। আর হাওড়াঞ্চলের উৎপাদিত ধান দিয়েই চলে আশুগঞ্জ উপজেলা অর্ধ সহস্রাধীক চাতালকল। অন্যান্য বছরে আশ্বিন মাসে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০টি নৌকা দিয়ে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার মণ ধান বাজারে বেচাকেনা হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি নৌকা দিয়ে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার মণ ধান আসছে এ মোকামে। যা গত বছরের তুলনায় এক তৃতীয়াংশেরও কম। আর এ কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম আশুগঞ্জে বেড়েছে চালের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের আমদানি কম হওয়াতে ধান সঙ্কটের কারণে মিল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই অনেক মিল বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকে মিল চালু রাখতে আগে থেকেই কিছু ধান মজুদ করে রাখতে হয়েছে। এতে করে ধার দেনা করে বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে।
মোকামে গিয়ে ধান ব্যবসায়ীদের কথা বলে জানা যায়, তাদের ব্যবসায়িক জীবনে ধানের এত দাম কখনো দেখেননি। বর্তমানে এক মণ আটাশ ধান ১৩৪০ থেকে ১৩৬০ টাকা, বিআর-২৯ ধান এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ২৮০ টাকা, মোটা ধানা ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।
গত আট বছরে ধানের দাম সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১০ সালে ধান ক্রয়ের জন্য সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি কে.জি. ১৭ টাকা। সে হিসাবে এক মণ ধানের দাম ছিল ৬৮০ টাকা। ২০১১ সালে সরকারের ধান কেনার কোনো রেকর্ড নেই। তবে চাল কেনা হয় প্রতি কে.জি. ২৯ টাকায়। বেসরকারি পর্যায়ে ওই বছর ধানের দাম ছিল প্রতি মণ ৭০০-৭২০ টাকা। ২০১২ সালে সরকারি রেট অনুযায়ী প্রতি মণ ধানের দাম ৭২০ টাকা, ২০১৩ সালে ৭২০, ২০১৪ সালে ৮০০, ২০১৫ সালে ৮৮০, ২০১৬ সালে ৯২০ এবং ২০১৭ সালে সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে ৯৬০ টাকা। সেই ধান এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা মণ।
আশুগঞ্জের ধান-চাল ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান রিপন বলেন, আটাশ ধান এবার প্রতি মণ এক হাজার ৪০০ টাকা এবং বিআর-২৯ ধান প্রতি মণ এক হাজার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একই ধান এক বছর আগে কেনা হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। তিনি বলেন, ধানের দাম বেশি হলে স্বাভাবিকভাবে চালের দামও বেশি হয়। বর্তমানে চাল বিআর-২৯ প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ২২৫০ থেকে ২২৭০ টাকা আর মোটা চাল এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, হাওড়াঞ্চলের বৃহৎ এই মোকামে ধানের সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ধানের অভাবে ইতোমধ্যে প্রায় দেড় শতাধীক চাতালকল বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ১৫ দিন পর বাজারে আর ধান পাওয়া যাবে না। সুতরাং ধান সঙ্কটের কারণে আগামী এক মাসের মধ্যে জেলার অর্ধ সহস্রাধীক চাতালকলের মধ্যে অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যাবে। মিল কিছু চালু রাখতে হলে উত্তরাঞ্চলের ধানের উপর নির্ভর করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ