পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে থামছে না ছাত্রলীগের সংঘাত। দলীয় কোন্দলের জেরে নিজেদের মধ্যে চলছে খুনোখুনি, সংঘাত-সহিংসতা। গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম কলেজে ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ আর ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও পুলিশের লাঠিচার্জে কলেজ এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় সম্মান শ্রেণির নবাগত শিক্ষার্থীরাসহ চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ক্যাম্পাসে জিম্মি হয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত দশজন আহত হয়েছে। একদিন আগে রোববারও চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
৬ অক্টোবর দলীয় কোন্দলের জেরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস রুবেলকে। এনিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে এখনও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সুদীপ্তের খুনি ও তাদের মদতদাতাদের গ্রেফতারের দাবিতে রাজপথে সরব রয়েছে নগর ছাত্রলীগের একাংশ। নির্মম খুনের শিকার সুদীপ্ত ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীর গ্রুপের সদস্য। সিটি কলেজ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছেন সুদীপ্তের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতারা। তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার রাতে মোক্তার হোসেন নামে এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় সৃষ্ট অস্থিরতার মধ্যে দেশের ঐহিত্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজে সংর্ঘাতে জড়ালো ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কর্মীরা। পুলিশ জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপ এই সংর্ঘাতে জড়ায়। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দুই পক্ষকে লাঠিচার্জ করে ও ধাওয়া দেয়। তবে কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পুলিশ ও ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, সকাল ১০টায় দুই পক্ষের বিরোধ শুরু হয়। আগের দিন কলেজ ক্যাম্পাসে সম্মান (স্নাতক) শ্রেণির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন উপলক্ষ্যে ব্যানার টাঙ্গানো কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষ গতকাল সংঘর্ষে জড়ায়। দু’টি গ্রুপের একটির নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মাহমুদুল করিম অন্যটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুভাষ মল্লিক সবুজ। এদের মধ্যে মাহমুদুল করিম নগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আজিম রনির অনুসারী। অন্যদিকে সবুজ চকবাজার যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী। নগরীর রাজনীততে টিনু প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির আর রনি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।
পুলিশ জানায়, সকালে সবুজের অনুসারীরা কলেজের প্রধান গেইট এলাকায় জড়ো হলে প্রতিপক্ষ তাদের উপর হামলা করে। এসময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ মাহমুদুল করিম গ্রুপের কর্মীদের গণি বেকারির দিকে এবং সবুজের অনুসারীদের চকবাজারের দিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে সবুজ গ্রুপের কর্মীরা লাঠিসোটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে কলেজ এলাকায় এসে প্রতিপক্ষকে খুঁজতে থাকে। তারা দেশি অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় মিছিল করে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। অন্যদিকে মাহমুদুল করিমের অনুসারীরাও মিছিল নিয়ে কলেজ এলাকায় আসতে চাইলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে হঠিয়ে দেয়।
দুই পক্ষের মারামারি ও পুলিশের লাঠিচার্জে মহসীন কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আনোয়ার পলাশ, চট্টগ্রাম কলেজের ¯œাতকোত্তর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন ও ¯œাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল শীল, মহসীন কলেজের ¯œাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হানিফ সুমন ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের আল রিয়াদসহ দশ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে কলেজ হামলা ও পাল্টা হামলার জন্য এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। সুভাষ মল্লিক সবুজ বলেন, মাহমুদুল করিমের অনুসারীরা রোববার তাদের ব্যানারা ছিঁড়ে ফেলে। গতকাল তারা আমাদের কর্মীদের উপর হামলা করেছে। তাদের হামলায় আমাদের ছয় কর্মী আহত হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে মাহমুদুল করিম বলেন, টিনুর অনুসারীরা বহিরাগত, তারাই ছাত্রদের উপর হামলা করেছে। তারা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চায়। নগর পুলিশের কোতায়ালী জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উভয়পক্ষ নবাগত শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে গত দুই দিন কলেজ এলাকায় শোডাউনের চেষ্টা করে। এরজের ধরে দ্ইু পক্ষ মুখোমুখি হয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে থানায় কোন পক্ষই মামলা করেনি। উল্লেখ ছাত্রশিবিরকে হঠাতে প্রশাসনকে দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজের সবকটি ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে দুটি কলেজে প্রতিনিয়তই সংর্ঘাতে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ। ফলে দেশের ঐতিহ্যবাহী দুটি কলেজে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চকবাজার থেকে সরিয়ে চট্টগ্রাম কলেজে পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়েছে। তবে পুলিশের উপস্থিতিতেই প্রতিনিয়ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপ।
এদিকে দুই দশক পর কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগেও বিরোধ চরমে উঠেছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পদবঞ্চিতরা। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ যাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের কাউকে চেনে না। জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে তাদের পদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন পদবঞ্চিতরা। বিরোধের কারণে গত দুই দশক পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। ১৯৯৮ সালে আব্দুল কাদের সুজনকে সভাপতি এবং টিপু চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়েছিল।
এরপর ২০০৩ সালে মো. ফারুক ও ২০১১ সালে আব্দুল মালেক জনিকে আহ্বায়ক করে দুটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি নগরীর আন্দরকিল্লায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় নিহত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহŸায়ক আবদুল মালেক জনি। এরপর ঢাকায় ছাত্রলীগের সমাবেশে যোগদান শেষে ট্রেনে করে চট্টগ্রামে ফেরার পথে ট্রেন থেকে পড়ে মারা যান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম। এ ধরনের আরে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সংঘাত সহিসতায় খুনোখুনির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। এরপরও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রাম মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম উত্তর এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিরোধে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী খুনের শিকার হয়েছেন। বিরোধ মেটাতে কেন্দ্র থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার সুফল মিলেনি। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভক্ত চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।