Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান বিচারপতিকে ঘায়েল করতে রূপকথার নাটক সাজাচ্ছে সরকার -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে ঘায়েল করতে ভোটবিহীন সরকার ‘রূপকথার’ নাটক সাজাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো একেবারে পাতালপুরী থেকে নিয়ে আসা রূপকথার গল্প ছাড়া অন্যকিছু না। জোর করে সন্ত্রাসী কায়দায় জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পর এখন চূড়ান্ত পদক্ষেপ পদত্যাগ করাতেই হঠাৎ এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। গতকাল (সোমবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার পূর্ব মূহুর্তে যে বিবৃতি জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, সেই অস্থিরতা থেকেই সরকার এখন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের নাটক সাজাচ্ছেন। তিনি বলেন, রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। অথচ প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পূর্বে বলেছিলেন- সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনের রদবদল শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। তিনি আরো বলেন, তাহলে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপনও বেআইনি। সুতরাং এখন আদালত প্রাঙ্গণে যা ঘটছে তা হচ্ছে সরকার প্রধানের একক কর্তৃত্বে বিচার বিভাগকে অধীন করার জন্য যাবতীয় আয়োজন। তিনি বলেন, দেশকে স্থায়ী দুঃশাসনের বজ্র আটুনিতে বেঁধে ফেলা হলো। বিচার বিভাগের ওপর আরও নগ্ন হস্তক্ষেপ করে ন্যায় বিচারের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়া হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই ঘটনায় গোটা বিচার ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া হলো।
প্রধান বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত শুক্রবার বিদেশ যাওয়ার পরদিন সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ‘১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ’ তুলে ধরেন। রিজভী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে- প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিকে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট বৈঠক করেছেন এবং তাদের বুঝিয়েছেন। দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে, এটা সংবিধানে নেই। প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে প্রেসিডেন্টও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। প্রেসিডেন্টের যদি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এত অভিযোগই থাকে তাহলে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করলেন না কেন- এই প্রশ্ন এখন আইন অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ ১০ কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ সংক্রান্ত আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে ‘বেআইনি’ বলেন রিজভী।
বিএনপির নেতা এই ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বলেন, এটা আইন মন্ত্রণালয় করতে পারে না। কিন্তু তাদের (আইন মন্ত্রণালয়) তো এসব যায় আসে না। কারণ তারা বেপরোয়া জমিদারির রাজত্ব কায়েম করেছে, তারা এখন সংবিধান, আইন, বিচারিক প্রক্রিয়া- এসব থোড়াই কেয়ার করে।
রিজভী বলেন, বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনটিকে এভাবে কালিমালিপ্ত করার ঘটনা ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। জনগণ কোনটি বিশ্বাস করবে, তাঁকে ছুটি দিয়ে বিদেশ পাঠানো ক্যান্সার রোগজনিত অসুস্থতা নাকি তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ। প্রধান বিচারপতির ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করার জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। জোর করে সন্ত্রাসী কায়দায় জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পর এখন চুড়ান্ত পদক্ষেপ পদত্যাগ করাতেই হঠাৎ এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের সর্বসম্মত রায়ের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পূণর্বহাল হওয়ার কথা। নিয়ম হলো-প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলে অভিযোগগুলো প্রেসিডেন্ট সুপ্রিমকোর্টের জুডিশিয়াল বিভাগে তদন্তের জন্য পাঠাবেন। তদন্তের শেষে যদি প্রমাণিত হয় তাহলে বিচরিপতিকে অপসারণ করবেন আর যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে তিনি পদে বহাল থাকবেন। প্রেসিডেন্ট এধরণের ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি কেন আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে অভিযোগ শোনালেন তা এখন আর মানুষের বুঝতে বাকী নেই। তাঁর বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তিনি দেশে থাকতে এসব অভিযোগ তোলা হলো না কেন ? আর এসব অভিযোগ তো মনে হচ্ছে অনেক পুরনো। এতো দিন এসব অভিযোগ তোলা হলো না কেন?
আবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটিও ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এদিকে ঐদিনই এটর্নি জেনারেল বলেছেন প্রধান বিচারপতি ফিরে এসে দায়িত্ব নেয়া সুুদুর পরাহত। গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন-অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি স্বপদে বসতে পারবেন না। এখন আদালত প্রাঙ্গনে যা ঘটছে তা হচ্ছে সরকার প্রধানের একক কর্তত্বে বিচার বিভাগকে অধীন করার জন্য যাবতীয় আয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর অদ্বিতীয় স্বৈরাচার হওয়ার পথে সকল কাঁটা সরাতেই এতো সব নির্লজ্জ দুর্বৃত্তপনা। বাংলাদেশে বেআইনী কর্মকান্ডেরত অতি ক্ষমতাধর’রা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে, এরা এখন ভয়ঙ্কর বেপরোয়া। দলীয় সংকীর্ণতার বদ্ধকুপে তারা মন্ডুকনীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে মৌরসীপাট্টা করে নিজেদের জমিদারিতে পরিণত করেছেন। তবে এই জমিদারি উচ্ছেদের জন্য জনগণ এখন সংঘবদ্ধ। জনগণের ধুমায়িত বহ্নির উত্তাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণই হচ্ছে মহাজন, তারাই কড়াই গন্ডায় এই অবৈধ দখলদারদের সকল ঋণ আদায় করে ছাড়বে।
এসময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় একের এর এক গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীর প্রতিবাদে বিএনপি ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে গত ১৪ অক্টোবর ২০১৭ সহ অব্যাহত বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সরকারী জুলুম নির্যাতন ও বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম রাসেল, সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ