Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সড়কের দু’পাশে ফেনী পৌরসভার ময়লার ডিপো

| প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ জনজীবন
ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক : ফেনী শহরের কাটবালিয়া থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত জনাকীর্ণ সড়কের দু’পাশে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী, সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রী এবং পথচারীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। পৌরসভার স্থায়ী কোনো ময়লার ডিপো না থাকায় ব্যস্ততম সড়কের দুপাশ ব্যবহৃত হচ্ছে অস্থায়ী ময়লার ডিপো হিসেবে।
গতকাল সরেজমিন পরিদর্শন ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় সড়কের দুপাশে পাহাড় সমান উচ্চতা সৃষ্টি হয়েছে। সময়ের আবর্তনে মেয়র যায় মেয়র আসে, কিন্তু পৌরসভার ময়লার স্থায়ী ডিপো নির্মাণে কারো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
বর্তমান মেয়র হাজী আলাউদ্দীন প্রথমবার উপ-নির্বাচনে বিজয় লাভের পর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডাস্টবিন বসানোর প্রæতিশ্রæতি দিলেও কোথাও কোনো নতুন ডাস্টবিন বসাননি বলে অভিযোগ করেন পৌর এলাকার কয়েকজন নাগরিক ও ব্যবসায়ী। আবার দেওয়ানগঞ্জে ময়লা আবর্জনা না ফেলে এর স্থায়ী সমাধান করার কথা দিলেও অদ্যাবধি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ বিষয়ে জানতে মেয়রকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দেওয়ানগঞ্জ এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি করিম মিয়া জানান, একসময় লোকবসতি ও যানবাহনের আধিক্য না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের দেওয়ানগঞ্জে সড়কের দু’পাশে শহরের ডাস্টবিনগুলো থেকে গাড়ি ভর্তি করে ময়লা ফেলা শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে এ সড়কটি শহরের ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের মহিপালে হাইওয়ে ওভারপাসের কাজ চলায় এ সড়কে চলাচল করে ফেনী-ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পরিবহন। এ ছাড়া যানজট নিরসনে মহাসড়কের গাড়িও বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে।
ফেনী শহরের বড় বাজার, মহিপাল বাজার, মুক্ত বাজার, রেলগেট বাজার, সিও অফিস কাঁচা বাজারসহ পৌর নাগরিকদের মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত কে.জি ময়লা-আবর্জনা সৃষ্টি হয়। এসব ময়লা-আবর্জনা ডাস্টবিন অথবা খোলা জায়গায় বিভিন্ন পয়েন্টে ফেলে রাখে ব্যবসায়ী ও পৌর নাগরিকরা। এক পর্যায়ে পৌর সুইপাররা ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে তা দেওয়ানগঞ্জের ভাগাড়ে নিয়ে ফেলে আসে। শহর থেকে এসব ময়লা আবর্জনা ফেলতে অনেক সময় দুপুর হয়ে যায়। ফলে আবর্জনা ভর্তি ট্রাক ডিপো পর্যন্ত যেতে দুর্গন্ধে নাগরিক হয়রানির অন্ত থাকে না।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব ময়লা আবর্জনার অধিকাংশ পচনশীল পদার্থ। কাঁচা বাজারের শাক-সবজি, হোটেলের বাসিপচা খাবার এবং বাসা বাড়ির ময়লার প্রায় ৮০ ভাগ হলো পচনশীল। ফলে এগুলো ফেলার অল্প সময়ের মধ্যেই পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
এদিকে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও ময়লার ডিপো পলিথিনে সয়লাব। পচনশীল পদার্থ নষ্ট হয়ে গেলেও পলিথিনগুলো রয়ে গেছে অক্ষত। এসব পলিথিন বৃষ্টির পানিতে ভেসে আশপাশের ফসলি জমিতে পড়ে জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট করছে। ময়লার ডিপো থেকে অ্যামাইনো এসিডসহ বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসের দুর্গন্ধ নির্গত হওয়ার কারণে দেওয়ানগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার মানুষ সীমাহীন বিপাকে পড়েছেন। এসব বিষাক্ত গ্যাসের কারণে অত্র এলাকার মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ফেনী সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শহীদুল্লাহ দিদার বলেন, এসব দুর্গন্ধ দীর্ঘদিন ধরে যারা সহ্য করে যাচ্ছে তাদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগসহ মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ আশ্রাফুল আলম গীটার বলেন, পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এ নিয়ে কাজ করছে ফেনী পৌরসভা। ময়লা আবর্জনা থেকে জৈবসার উৎপাদনের লক্ষে সুলতানপুরে ফ্যাক্টরি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এখানকার বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদন করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ