Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুপ্রিম ডিভাইড ইন ঢাকা

দেবদ্বীপ পুরোহিত : | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বিরুদ্ধে আনীত ‘১১ টি দুর্নীতির অভিযোগের’ সন্তোষজনক জবাব না দেয়া পর্যন্ত তাকে কার্যত বর্জনের (ভার্চুয়াল বয়কট) ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগের কয়েক ঘন্টা পরে এই অস্বাভাবিক ক্ষোভ বেরিয়ে আসে। তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পূর্বে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কড়া সমালোচনা রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বাতিল করার পর প্রধান বিচারপতি ও সরকারের মধ্যে একরকম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। স¤প্রতি এক দশকের জন্য পাকিস্তানে সরকারি দায়িত্ব থেকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে নিষিদ্ধ করে একটি রায় দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত ক্ষুব্ধ করে তুলেছেন।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার সরকার স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রথম হিন্দু স¤প্রদায় থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন। তারপর সম্পর্কের এই তিক্ততা ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা।
১৪ই অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই বেঞ্চে বসবেন না সবচেয়ে সিনিয়র পাঁচজন বিচারপতি। এই পাঁচজন বিচারপতি ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন। এর আরেকটি বিভাগ রয়েছে, যা হাই কোর্টের কার্যক্রম দেখাশোনা করে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার-জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতি ১লা অক্টোবর বৈঠক করেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা না দেয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে আর বসবেন না তারা। তারা একই দিনে হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। কিন্তু তার পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো উত্তর পাননি আপিলেট ডিভিশনের পাঁচজন বিচারপতি।
৪৬ বছর আগে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে এবারই প্রথম একজন প্রধান বিচারপতি, যাকে বলা হয় সংবিধানের অভিভাবক, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বিবৃতি প্রকাশ করলো।
ওই বিবৃতি অনুযায়ী অভিযোগের মধ্যে রয়েছে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলন।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত এই বিবৃতি অনুযায়ী, গত ৩০শে সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতির অভিযোগ সম্বলিত ডকুমেন্ট হস্তান্তর করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। এরপরই বিষয়টি জানতে পারেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মির্জা হোসেন হায়দার ও ইমান আলী। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নাম ঘোষণা করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার আগে একটি বিবৃতি দিয়ে আরো বিতর্কের সৃষ্টি করেন প্রধান বিচারপতি সিনহা। এতে তিনি বলেন, রাজনৈতিক মহল, আইনজীবীরা ও বিশেষ করে সম্মানীত মন্ত্রীরা ও প্রধানমন্ত্রী সা¤প্রতিক একটি রায়কে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমালোচনা করেছেন। এতে আমি সত্যিকার অর্থেই বিব্রত।
তিনি যে রায়ের কথা বলেছেন সেই রায় দিয়েছেন এমন একটি বেঞ্চ, যার প্রধান ছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের অযোগ্যতা ও অসদাচরণের অভিযোগে তাকে বা তাদেরকে অপসারণে পার্লামেন্টকে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। এ জন্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল। সেই সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছিল ওই বেঞ্চ।
তারপর থেকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের তরফ থেকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রধান বিচারপতি সিনহাকে। নেতাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে ওই রায়কে কেন্দ্র করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি তার রায়ে পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নওয়াজ শরীফকে বরখাস্তের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন। এটাই আগুনে ঘি ঢেলেছে। এর ধারাবাহিকতায় এস কে সিনহাকে ৩রা সেপ্টেম্বর থেকে ছুটিতে যেতে হয়েছে।
সরকার বলছে, তিনি চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দাবি করছে, তাকে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। বিএনপি নেতারা এটাকে পয়েন্ট আউট করেছেন এবং বলছেন, সরকার বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে।
এর জবাবে আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, বিএনপি দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিভাবে তারা বলতে পারে যে, সরকার বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করছে? প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। কিন্তু তারা তার পক্ষ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কি কোনো চুক্তি আছে?
যে দেশ সামরিক অভ্যুত্থান দেখেছে। দেখেছে রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ, সামরিক শাসন, সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ও বেসামরিক শাসক গোষ্ঠী সেই দেশটির জনমত এখন প্রধান বিচারপতি সিনহাকে নিয়ে বিভক্ত।
কেউ কেউ মনে করেন, নিজের উচ্চাকাঙ্খা পূরণের জন্য প্রধান বিচারপতি সিনহা সীমা লঙ্ঘন করেছেন। তার মন্তব্যে মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আবার এমনও অনেক মানুষ আছেন, যারা এর জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, সরকার যেকোনো ভাবেই হোক সংবিধানের একটি সংশোধনী অনুমোদন করাতে চাইছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি তা বাতিল করে দেয়ায় সরকার তাকে সরিয়ে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, এ রায়ের মেরিট বা ডিমেরিট মূল্যায়ন করবে ইতিহাস। কিন্তু রায়ের পরে যা ঘটছে দেশে তাতে অগণতান্ত্রিক শক্তি নিশ্চিত উৎসাহিত হবে।
(ভারতের অনলাইন দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত রিপোর্টের অনুবাদ)



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৯:৪৭ পিএম says : 0
    “২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার সরকার স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রথম হিন্দু সম্প্রদায় থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন। তারপর সম্পর্কের এই তিক্ততা ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা।“ বলেছেন ভারতের অনলাইন দ্য টেলিগ্রাফের দেবদ্বীপ পুরোহিত। আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও একটা বিরাট ভুল করেছিলেন শাহাবুদ্দিন সাহেবকে নিরপেক্ষর প্রতীক হিসাবে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে তিনিও............ একই ভাবে এবারও নেত্রী ঐরকম কিছু ধারনা করে সিনহা সাহেবকে নিয়োগ পাবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন যার পরিণতি তিনি ভোগ করলেন। এটাকেই বলে নিয়তি......... এখন বিষয় হচ্ছে আমাদের বুঝার......... সবার বুঝার ক্ষমতা আবার এক নয় তাই আমরা বিভিন্ন ভাবে এসব বিষয়কে ব্যাখ্যা করে থাকি আমাদের বিবেচনা বা আমাদের ভাবনা থেকে। আমরা যেই নীতি বা মতের উপর চলি সেই নীতি বা মতের উপর ভিত্তি করে আমাদের মন্তব্য করে থাকি। সেটা কাওর কাছে ভাল লাগে আবার কাওর কাছে খারাপ লাগে; এটাই স্বাভাবিক। আমি এতটুকুই বলব যে, সিনহা সাহেবই ভুল করেছেন বিভিন্ন ভাবে। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুপ্রিম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ