Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন ৩২ মামলা

মালেক মল্লিক : | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্যই মিথ্যা মামলায় পরোয়ানা : বিএনপির অভিযোগ
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এক সপ্তাহে তিন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এরমধ্যে গতকালই এক ঘন্টার ব্যবধানে দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর হাকিম ও বিশেষ আদালত। বিএনপির অভিযোগ সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানিও চাপে রাখার জন্যই চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার জারি করেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিকে চাপে রাখতে সরকার এরকম নগ্নভাবে আদালতকে ব্যবহার করছে। এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন এ সব মিথ্য মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে সরকার সব রকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যে মামলায় সাজা দিয়ে সরকার তাকে আগামী নির্বাচন থেকেও দূরে রাখার হীন ষড়যন্ত্র করছে। তবে সরকারের এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র কিছুতেই সফল হবে না।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নামে মোট ৩২টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রায় প্রতিমাসেই কোন না কোন মামলার হাজিরার তারিখ থাকছে। ১১টি মামলার উচ্চ আদালত থেকে বেগম খালেদা জিয়া জামিন নিয়েছেন। এসব মামলায় অন্তত মাসে একবার হলেও আদালত পাড়ায় যেতে হচ্ছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। এছাড়াও বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের ঠুনকো অভিযোগ গ্রেফতার করছে সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বিরোধী জোটকে কোনঠাসা করতে সরকার কঠোর হচ্ছে ।
গত ৮ আগস্ট জিয়া অরফানেস ট্রাস্ট মামলার বিচারক বদলের আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। ওই মামলা গতকাল বৃহস্পতিবার আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য ছিল। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় শুনানিতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান। একই সঙ্গে ওই মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য আগামী ১৯ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, এসব মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিএনপিসহ বিরোধী জোটকে আন্দোলনে সংগ্রামে উত্তেজিত করা। যাতে করে আন্দোলন সংগ্রামের সুযোগে বিরোদী জোটকে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে একক ভাবে আগামী নির্বাচন করতে পারে সরকার। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার নিন্ম আদালতকে আইন মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে। আইন মন্ত্রনালয়ের ইচ্ছামত বিএনপিসহ বিরোধী জোটে নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করছে। আর এজন্য নিম্ন আদালতের বিচারকদের গেজেট প্রকাশ করছে না। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি এই সব গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ভয় পান না। আইনি প্রক্রিয়ার মোকাবিলা করা হবে। খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী আরো বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেস ট্রাস্ট মামলাটি সচল করা হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে তাকে হরয়ানি করার জন্য। এখানে কোন প্রকার অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। বেগম খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যাতে দেশে আসতে না পারেন, সে জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এক সপ্তাহে তিন মামলায় গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৩২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা রয়েছে ৫টি। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ৪টি। মামলাগুলো হল-গ্যাটকো, নাইকো ও বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা, জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ১টি ও নাশকতার মামলা ৯টি। ৩২ টি মামার মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হয়েছে ৪টি মামলা এ ছাড়া বাকী সব মামলা করা হয় বর্তমান সরকারের আমলে। ১১টি মামলা উচ্চ আদালতে থেকে খালেদা জিয়া জামিন নিয়েছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে ৩টি, একটি মামলা আত্মপক্ষের সমর্থন, সাক্ষীর জন্য দুটি, ১৪টি অভিযোগ গঠন শুনানির অপেক্ষায়। আর ১৬টি মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে ড্যান্ডি ডায়িং মামলা খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান, আরেক পুত্র আরাফাত রহমানের স্ত্রী-পুত্রকে আসামী করা হয়েছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা দুই মামলায়: মানহানির অভিেেযাগে দায়ের করা একটি মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে মানহানির অভিযোগে করা মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নবী। তার কিছু পরেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আক্তারুজ্জামান।
মানহানির মামলা: ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিক স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটানোর অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে একটি মানহানির মামলা করেন। আর স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি করার অভিযোগে আরেক মামলায় সমন জারির পরও আদালতে না আসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার মহানগর হাকিম নূর নবী।
জিয়ার অরফানেস ট্রাস্ট মামলা: দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেস ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের কথা ছিল চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি। খালেদার আইনজীবীদের বিচারকের প্রতি অনাস্থার কারণে শুনানি হয়নি। এর মধ্যে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য গত ১৫ জুলাই লন্ডনে চলে যান। এ মামলার আরেক আসামি খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানও গত নয় বছর ধরে সেখানে রয়েছেন। লন্ডনে পা ও চোখের ডাক্তার দেখানোর জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট থাকায় সেই নথি দাখিল করে আত্মপক্ষ সমর্থণের শুনানি আবারও পেছানোর আবেদন করেন আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারক তখন প্রশ্ন তোলেন, নিয়মিতভাবে প্রতি বৃহস্পতিবার এ মামলার শুনানির তারিখ থাকে, এটা জানার পরও বিএনপি নেত্রীর জন্য কেন এই দিনেই ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট করা হয়। এসময় দুদকের আইনজীবীর আদালতে বলেন, বারবার সময়ের আবেদন করে এই শুনানির পর্ব দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। তিনি যদি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে না আসেন, তাহলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তা না হলে তিনি আসবেন না, পালিয়ে যাবেন। এরপর বিচারক আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি পেছানোর আবেদন নাকচ করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। খালেদার আইনজীবীরা পরোয়ানা জারির আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিচারক তাও নাকচ করে দেন বিচারক। এদিন তারা জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং দ্রুত এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান। পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিলও করেছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক খালেদা জিয়ার সময়ের আবেদন নাকচ করে গ্রেফতাারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য আগামী ১৯ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। কুমিল্লার জেলা দায়রা গ্রেফতারি পরোয়ানা: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মামলায় খালেদা জিয়াসহ ‘পলাতক’ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।



 

Show all comments
  • সফিক ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৩১ এএম says : 1
    বিএনপির অভিযোগই আমার কাছে সত্যি মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, ৭:২১ পিএম says : 0
    প্রথমেই আমি বিচারকদের সাহসিকতা পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। ................... আল্লাহ্‌ আমাদের বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করেন এবং উকিলরা যে প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজে নেমেছেন মানে সত্য বলা এবং সত্যকে প্রতিষ্টিত করে ন্যায় বিচার করা (আমি দেখেছি অন্যান্য দেশের উকিলের এটাই করে) এটাই আমার প্রার্থনা। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ