পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে আর সেখানে নেই আর্জেন্টিনা!!! এ যেন বাস্তবের চেয়েও অনেক বেশি অবিশ্বাস্য, স্বপ্নে আর কল্পনায়ও। অথচ আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে এরকম একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনাই প্রায় ঘটতে চলেছিল সারা পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে লালন করা ফুটবল দল আর্জেন্টিনাকে ঘিরে। প্রায় অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বে খেলা। যে কারণে গতকাল ভোরে বাছাইপর্বে ইকুয়েডরের বিপক্ষে আর্জোন্টনার ম্যাচের আগে পৃথিবীর শত কোটি আর্জেন্টিনা ভক্তদের হৃদয়ে ছিল গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তা। অবশেষে লিওনেল মেসি তার দলের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্রান্তিলগ্নে প্রত্যাশা অনুযায়ী জ্বলে উঠে আর্জেন্টিনাকে সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে তুললেন তার একক নৈপুণ্যেই। মেসি তার দলের জন্য যে কাজটি কাল করলেন এটা বর্তমান ফুটবল বিশ্বে শুধুমাত্র মেসিকে দিয়েই সম্ভব।
আর্জেন্টিনা যে বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় ফুটবল দল তার প্রমাণ আবারো মিলল আর্জেন্টিনা-উকুয়েডরের এই বাছাইপর্বের ম্যাচটিকে দিয়ে। গত ক’দিন ধরেই সারা পৃথিবীর মানুষের দৃষ্টি আর আলোচনায় ছিল এই ম্যাচ। পৃথিবরীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছেও গতকাল আলোচনা আর আগ্রহের মূল বিষয় ছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের মূল পর্বে ওঠার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ। বাংলাদেশে বিরাজিত রোহিঙ্গা ইস্যু, প্রধান বিচারপতি ইস্যু কিংবা রাজনৈতিক সকল ইস্যু- সবকিছুই গতকাল আলোচনার দিক থেকে ¤øান হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার এই ফুটবল ম্যাচ ইস্যুতে।
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে যেতে পারবে তো? মেসি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন তো? এমন হাজারো প্রশ্ন বুকে লালন করে গভীর উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ছিলেন বাংলাদেশের কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ফুটবল সমর্থক। বাংলাদেশ সময় গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় ম্যাচটি শুরু হলেও বাংলাদেশের বহু আর্জেন্টাইন ভক্ত সারারাত জেগে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন টিভির সামনে বসে ম্যাচটি দেখার অপেক্ষায়। কেউ কেউ হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হবার ভয়ে খেলাটি দেখারও সাহস পাননি।
দীর্ঘদিন ধরেই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে প্রাপ্তি আর স্বস্তির পরিমাণ খুবই কম। তাই এত হতাশার মাঝেও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার লড়াইয়ে বাদ পড়ার মত লজ্জাজনক অবস্থার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয় কোটি কোটি আকাশী-সাদা সমর্থকদেরকে অনেকটাই যেন বিশ্বকাপ জয়ের মতই স্বস্তি আর আনন্দ এনে দিয়েছে। তাই এই জয়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকরাও আনন্দিত, উল্লোসিত ও পুলকিত। যথারীতি আবারো সারা পৃথিবী স্বপ্নে বিভোর আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের প্রত্যাশায়।
ফুটবলে বর্তমানে বাংলাদেশের কোন নাম-নিশানা ও অবস্থান না থাকলেও ফুটবল এখনও বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা। তাইতো বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন একটি উৎসবের দেশে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে ফুটবলের জাদুকর ডিয়াগো ম্যারাডোনার যাদুকরী নৈপূণ্যে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় টিভিতে দেখার পর থেকেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিশ্বকাপ ফুটবল আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে এক ফুটবল বিপ্লব শুরু হয় যা ধারাবাহিকভাবে পরবর্তিতে আরো ব্যাপক রুপ নেয়। বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর কোটি কোটি মানুষ আর্জেন্টিনার সমর্থন বনে যান, যার মূল রূপকার হলেন ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা জাদু এবং পরবর্তিতে মেসি জাদু এই দু’জনের জাদুকরী ফুটবলের নৈপূণ্যে এমনভাবে সারা পৃথিবীকে সন্মোহিত করেছে যে কেউই আর্জেন্টিনাকে ছাড়া বিশ্বকাপ ফুটবল চিন্তাও করতে পারে না।
ঠিক একই অবস্থা বাংলাদেশেও। একটি বিশ্ব বিখ্যাত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জরিপে জানা যায়, যদি আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে না যেতো, তাহলে পৃথিবীর ৪৪ শতাংশ দর্শক বিশ্বকাপ না দেখার সিদ্ধান্ত নিতেন! তেমনি পৃথিবীব্যাপী বিশ্বকাপের আমেজ ও উন্মাদনা কমে যেত আশঙ্কাজনক হারে যা বিশ্ব ফুটবলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশ দর্শকদের কাছেও এর প্রভাব পড়তো মারাত্মক হারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যেত না আর্জেন্টিনার হাজার হাজার প্রমাণ সাইজের পতাকা ওড়ার সেই চিরায়ত দৃশ্য। দেখা যেত না জায়ান্ট স্কিণ লাগিয়ে এলাকায় এলাকায় রাত জেগে একসঙ্গে ভীড় করে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার সেই উৎসাহ, উদ্দীপনা। লাখো লাখো ভক্তের গায়ে শোভা পেত না সাদা-আকাশী রঙের জার্সি।
আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারণে বিশ্বকাপ ফুটবল আর আর্জেন্টিনা এই দুটোকে আলাদা করে দেখার আর কোন সুযোগ নেই। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ড্রাগ নেওয়ার অভিযোগে ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে ফিফা বহিষ্কার করার খবরটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার ব্রায়ান ল্যাংলে তার উইম্বলডন টেনিসের ধারাবিবরণী দেবার মাঝখানে হতবাক হয়ে চিৎকার বলে উঠেছিলেন ‘নো ম্যারাডোনা নো ওয়ার্ল্ডকাপ’। ঠিক সেই ভাবেই ম্যারাডোনা তার যাদু দিয়ে সারা পৃথিবীকে এক ধারণায় এনে বন্দী করেছেন ‘নো আর্জেন্টিনা নো ওয়ার্ল্ডকাপ’-এ। এই প্রসঙ্গে কয়েকদিন আগে আমার এক ক্রীড়া সাংবাদিক সহকর্মী আমাকে বলছিলেন, ‘সোহাগ ভাই, যদি শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা রাশিয়া বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে যেতে না পারে তাহলে কিন্তু বিশ্বকাপ চলাকালে শোকে কষ্টে বাংলাদেশের অবস্থা কারবালার মত হয়ে যাবে।’ আর্জেন্টিনা-ইকুয়েডর ম্যাচ শেষে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় বাংলাদেশের ফুটবল কিংবদন্তি কাজী সালাউদ্দিনের সাথেও। সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় সালাউদ্দিন শুধু এইটুকু বললেন, ‘আজকের দিনটি আর্জেন্টিনার চেয়েও অনেক বেশি ইমপর্টেন্ট ছিল ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল অর্গ্যানাইজারদের জন্য। যদি আর্জেন্টিনা কোয়ালিফাই না করতো, তাহলে পৃথিবীর অনেক বড় একটা অংশ ওয়ার্ল্ড কাপটি নিয়ে এত বেশি ব্যাথিত থাকত যেটা একজন ফুটবলার হিসেবে ভাবতেও পারিনা।’
অবশেষে তা আর হয়নি মেসির জাদুকরী ফুটবলে। এরকম এক আশঙ্কা থেকে মেসি শুধু বাংলাদেশের কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্তকেই নয়, রক্ষা করেছেন পৃথিবীর শত কোটি আর্জেন্টাইন ভক্তকে, বিশ্বকাপ ফুটবলের আমেজকে এবং সেই সঙ্গে নিজেকেও। আর্জেন্টাইন তারকার কাছের মানুষেরা আশঙ্কা করছিলেন, যদি এই ম্যাচটিচ না জেতে, যদি আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে না পারে, তবে মেসি নিজেও হয়তো বা অবসরের মত ঘোষনা দিয়ে দিতেন!
প্রসঙ্গত, মেসিকে নিয়েও আর্জেন্টিনার জনগণের মনে প্রচন্ড একটা আবেগময়ী ক্ষোভ আর হতাশা কাজ করছিল। আর এটা সৃষ্টি হয়েছে মেসির ওপর অতিমাত্রায় প্রত্যাশার পাশে প্রাপ্তির হিসেবটা না মেলার কারণে। দীর্ঘ দিন থেকে মেসি পৃথিবীর সেরা ফুটবলারের মুকুটটি মাথায় পড়ে থাকলেও আর্জেন্টিনার জনগণ মেসির সফলতা বলতে দেখতে চায় তার নেতৃত্বে দেশের বিশ্বকাপ জয়কে। যে কারণে মেসির ৫ বার ফিফা বর্ষসেরা হওয়া বা মেসির নৈপূণ্যে বার্সেলোনা ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্যের বিষয়গুলো গৌণ হয়ে গেছে তাদের কাছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল আর্জেন্টিনার সাফল্যের চেয়েও অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ লিওনেল মেসির ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের জন্য।
আগামী ২০১৮ বিশ্বকাপই বলে দেবে আর্জেন্টিনার সমৃদ্ধ ফুটবল ইতিহাস কি শুধুই এককভাবে ম্যারাডোনার জন্যই না সেখানে ম্যারাডোনার পাশে যুক্ত হয়ে থাকবে লিওনেল মেসির নামও?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।