Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থেমে নেই স্বর্ণ চোরাচালান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৫৩ পিএম, ১১ অক্টোবর, ২০১৭

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও থেমে নেই স্বর্ণ চোরাচালান। প্রতি মাসেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণের চালান জব্দ করা হচ্ছে। কোন কোন চালানে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার স্বর্ণও জব্দ করেছে কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। তারপরেও স্বর্ণের চালান আসছেই। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কোটি কোটি টাকার চালান আটকের পরেও পাচারকারীরা কিভাবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি পোষিয়ে নিতে পারে। এছাড়া স্বর্ণের বড় বড় চালান জব্দ হলেও চোরাচালানী চক্রের নেপথ্যের প্রভাবশালীরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার আড়ালেই রয়ে গেছে। ফলে বিমানবন্দর ক্রেন্দ্রিক চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া কিছু বহনকারী ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে আবারও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত হচ্ছে। আবার মামলার দীর্ঘ সময় ক্ষেপন, স্বাক্ষীর অভাব, তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্বলতাসহ নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তিও হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময় বিমানের টয়লেটে স্বর্ণ, বিমানের সিটের নীচে স্বর্ণের প্যাকেট,যাত্রীর জুতার ভেতরে স্বর্ণ, লাগেজে স্বর্ণ আবার কখনো বা যাত্রীর পেটের ভেতরে ও পাযু পথেও পাওয়া যায় স্বর্ণ।
কাস্টমস হাউসের হিসাব মতে, শাহজালাল বিমানবন্দরে ১২৫টি সোনার চালান আটকের ঘটনায় থানা ও বিভাগীয়সহ ৭০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রহস্যজনক কারণে অর্ধশতাধিক মামলার তদন্ত থেমে গেছে। ফলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতায় মাঝেও বন্ধ হয়নি চোরাচালান। মাঝে মধ্যে স্বর্ণের চালান ধরা পড়লেও স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত রাঘব বোয়ালেরা গ্রেফতার হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে,চোরাচালানি চক্র এতটাই শক্তিশালী যে তাদের পাকড়াও করতে পারছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, শুধু বাংলাদেল বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি চোরাচালানে জড়িত নয়, কাস্টমসের কিছু অসাধূ কর্মকর্তা, কয়েকটি প্রাইভেট এয়ার লাইন্সের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিমানবন্দরের কর্মরত বিভিন্ন পেশার অসাধু কর্তা ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছেন। আর তাদের জড়িত থাকার কারণেই বন্ধ হচ্ছে না স্বর্ণ চোরাচালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্য এবং সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন কর্মকর্তাও এর সাথে জড়িত রয়েছেন। এর ফলে কোনো অবস্থাতেই সোনার পাচার বন্ধ হচ্ছে না। কিছুদিন পর পরই আটক হচ্ছে বড় সোনার চালান। আর আটক না হওয়ার চালানের সংখ্যা যে কি পরিমাণ তা অজানা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভৌগোলিক অবস্থান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানকারীরা বাংলাদেশকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আকাশ ও স্থলপথে সোনা চোরাচালান হয়ে আসছে বাংলাদেশে।
সোনা চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতঃপূর্বে বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তখন জানা যায়, চোরাচালানের এই চক্রে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিদেশীরা জড়িত। শুল্ক গোয়েন্দারা চোরাচালানের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে, বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্র বাংলাদেশকে চোরাচালানের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। এখন মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও সোনা আসছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে। আকাশপথে সোনার চালান এনে তা সহজেই আবার স্থলপথে পাচার হচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। এ পর্যন্ত যত সোনা আটক হয়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সোনা পাচার হয়েছে নিরাপদে। নিত্যনতুন কৌশল, রুট পরিবর্তন এনে সোনা চোরাচালান হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপুল অঙ্কের লাভের কারণে চোরাকারবারীরা সোনা চোরাচালানে যুক্ত হচ্ছে।
শুল্ক গোয়েন্দারা বলছে, গত তিন বছরে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুল্ক বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোট ৩ হাজার কেজি চোরাচালানকৃত স্বর্ণ জব্দ করেছে। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী ২০১২ সাল থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঘন ঘন সোনার চোরাচালান শুরু হয়। তখন ১৩ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। ওই সময়ে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ ঢুকবে এরকম তথ্য ছিল বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে। সেই সময় থেকে কিছুদিন পর পরই অভিযান চালিয়ে স্বর্ণগুলো ধরা পড়তে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বর্ণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ