Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের ৫ রাজ্যে সুপার টুয়েসডে ভোট ৫টিতেই হিলারি ও ৪টিতে ট্রাম্পের জয়

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৫ এএম, ১৭ মার্চ, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান পার্টির ডেলিগেট ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় জয়কার। মঙ্গলবার দ্বিতীয় সুপার টুয়েসডে’তে ৫টি অঙ্গরাজ্যের ৫টিতেই হিলারি জয়লাভ করে দলীয় মনোনয়ন দাবিতে নিজের অবস্থান বলা যায় নিরঙ্কুশই করেছেন। অপরদিকে ট্রাম্প ৪টি রাজ্যে জয়লাভ করেন তবে ওহাইও’তে পরাজিত হয়েছেন। ওহাইও’তে রাজ্য গভর্নর জন কিসাকের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিজয় রিপাবলিকান দলের ঐতিহাসিক জিওপি কনভেনশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখেছে।
অপরদিকে নিজ রাজ্য ফ্লোরিডায় শোচনীয়ভাবে পরাজয় সিনেটর মার্কো রুবিও’র হোয়াইট হাউজে প্রবেশের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। অথচ এক সময় রিপাবলিকান পার্টির ত্রাণকর্তা হিসেবে তাকেই ভাবা হয়েছিল।
হিলারি ক্লিনটন ফ্লোরিডা ও নর্থ ক্যারোলিনায় জয়লাভের মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের দিকে বড় অগ্রগতি অর্জন করেছেন এবং ইলিনয় ও ওহাইওতে বিজয়ের মাধ্যমে তিনি বার্নি স্যান্ডার্সের শিল্পসমৃদ্ধ মিডওয়েস্ট যাত্রা থামিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে, নিজ রাজ্যে কিসাকের জয়লাভ রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনকে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলবে। কিসাকের এই বিজয় ট্রাম্পকে ৬৬ ডেলিগেট ভোট থেকে বঞ্চিত করেছে। এটা কোটিপতি ব্যবসায়ী ট্রাম্পের প্রয়োজনীয় ১ হাজার ২৩৭ ডেলিগেট ভোটে পৌঁছানো অনেক কঠিন করে তুলছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থিতার মনোনয়ন পেতে দরকার এই পরিমাণ ডেলিগেট ভোট। তবে ট্রাম্প এখনো সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন বিশেষ করে তিনি ফ্লোরিডার ৯৯ ডেলিগেটের সবাইকেই পেয়েছেন। এই রাজ্যে তার বিজয় সিনেটর মার্কো রুবিওকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। অথচ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান দলের হাইকমান্ডকে ঐক্যবদ্ধ করতে নিজ রাজ্য ফ্লোরিডায় তার জয়লাভ খুবই জরুরি ছিল। কোটিপতি ব্যবসায়ী ট্রাম্প ইলিনয় ও নর্থ ক্যারোলিনার প্রাইমারিতেও বিজয় অর্জন করেছেন।
হিলারি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর মধ্যে ফ্লোরিডায় ৬৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী স্যান্ডার্স পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ২৬ শতাংশ ভোট। ইলিনয় রাজ্যে হিলারি পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ আর স্যান্ডার্স পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ ভোট। মিসৌরিতে হিলারি ৪৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং স্যান্ডার্স ৪৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। নর্থ ক্যারোলিনায় হিলারি ৫৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ আর স্যান্ডার্স ৪০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ওহাইও’তে হিলারি ৫৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ আর স্যান্ডার্স পেয়েছেন ৪২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট।
রিপাবলিকান পার্টিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওহাইও বাদে ৪টিতে জয় পেয়েছেন। এই ৪টির মধ্যে ফ্লোরিডায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মার্কে রুবিও। অপর তিনটিতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন টেড ক্রুজ। ওহাইও’তে ট্রাম্প রাজ্যের গভর্নর জন কিসাকের কাছে পরাজিত হয়েছেন। কিসাক পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৮০ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ ডেলিগেট ভোট।
অপর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার নাটক এখনো বাকী রয়েছে। মিসৌরিতে ট্রাম্প ও টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও শেষ পর্যন্ত এখানে ট্রাম্পই জিতেছেন। মিসৌরিতে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারির ভোট গণনা শেষে দেখা যায় হিলারি ক্লিনটন তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্যান্ডার্সকে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন। তিনি স্যান্ডর্সের চেয়ে এক শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।
ট্রাম্প এখন সাধারণ নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন। তিনি রিপাবলিকান দলের কনভেনশন নিয়ে ক্রমবর্ধমান জল্পনা-কল্পনার মুখে দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দলকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং আমাদের এক সাথে থাকতে হবে।
জিওপি নেতাদের অনেকেই এখনো কিসাকের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা মনে করেন কিসাক আসন্ন দলীয় কনভেনশনে ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। ওহাইও’তে জয়লাভের পর কিসাক সিএনএনের সঙ্গে এক টেলিফোন সাক্ষাতকারে বলেন, এই ফলাফলে আমি খুবই খুশি।
দলের মনোনয়ন পেতে ট্রাম্পের দরকার অবশিষ্ট ডেলিগেটদের ৬০ শতাংশ ভোট। এই লক্ষ্য অর্জন এখন তার জন্য কঠিন হতে পারে। কারণ অনেক রাজ্য রয়েছে যেখানে ডেলিগেট ভোট আনুপাতিক ভিত্তিতে হয়। বিজয়ীর পক্ষে সকল ডেলিগেট ভোট গণনা করা হয় না। তবে ট্রাম্প ডেলিগেট ভোটে যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছেন। তিনি এখন পর্যন্ত মোট ১৮টি রাজ্যে বিজয়ী হয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটের দিকে হিলারি ক্লিনটন ইলিনয়, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, মিসৌরি ও ওহাইও প্রাইমারিতে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়ের ফলে এখন দলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তার দাবি জোরালো করে তুলেছেন। নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হতে পারেন তার এই দাবি এখন সামনে চলে আসছে।
নর্থ ক্যারোলিনায় তার বিজয় দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তার জোরালো অবস্থান সম্পন্ন করেছেন। এসব রাজ্যে তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের শক্তিশালী সমর্থন পাচ্ছেন। ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে এক বিজয়ী বক্তৃতায় হিলারি বলেন, আমরা এখন দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করা ও নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি দাবি করেন যে, নির্বাচনে স্যান্ডার্সের চেয়ে তিনি ২০ লাখ বেশি ভোট পাবেন। ডেলিগেট ভোটেও তিনি তিনশ’র বেশি লিড পাবেন। অবশ্য তিনি স্যান্ডার্সকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাননি যাতে তিনি ট্রাম্পের দিকে বেশি করে সমালোচনার তীর ছুড়তে পারেন।
গত সপ্তাহে মিশিগানে হিলারির বিস্ময়কর পরাজয়ের পর ওহাইওতে এই বিজয় তার মনোবল যথেষ্ট চাঙ্গা করে তুলেছে। হিলারি এই বক্তৃতায় সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও বলেন, বিজয়ী হলে তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাশে দাঁড়াবেন। তিনি বলেন, আমরা আমেরিকার শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছি এবং এটা নিশ্চিত করতে চাই যে চীন, ওয়ালস্ট্রিট বা অতিবেতনের কর্পোরেট নির্বাহী কেউ-ই আমাদের কাছ থেকে অযৌক্তি সুবিধা পাবে না।
দ্বিতীয় সুপার টুয়েসডেতে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়ের মাধ্যমে হিলারি স্যান্ডার্সকে এক সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে স্যান্ডার্সকে এখন অবশিষ্ট ডেলিগেটদের ৭২ শতাংশ সমর্থন দরকার যা একেবারেই অসম্ভব। সিএনএনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী স্যান্ডার্সের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্রের ৫ রাজ্যে সুপার টুয়েসডে ভোট ৫টিতেই হিলারি ও ৪টিতে ট্রাম্পের জয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ