Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপহরণকারীদের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা নিহত

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মেয়েকে অপহরণকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন এক বাবা। নিহতের নাম মনীন্দ্র অধিকারী (৫০)। ওই ঘটনায় অপহরণকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন নিহতের স্ত্রী প্রজাপতি রানী।
বুধবার ভোর ৪টায় ফতুল্লার রঘুনাথপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে ৭ জনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আটক করা হয়েছে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ২টি মাইক্রোবাস। আটককৃতরা হলোÑ ঢাকার শ্যামপুরের আবুল হোসেনের ছেলে তুহিন, তার সহযোগী জাহিদ, জুয়েল, হৃদয়, প্রশান্ত, মনিরুল ইসলাম এবং তার ছোট ভাই নজরুল ইসলাম। মনির ও নজরুল মাইক্রোবাস দু’টির চালক বলে জানা গেছে। আটককৃতদের মধ্যে তুহিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ঘটনার শিকার ঝর্ণা রানী বলেন, তিনি ফতুল্লার হাজী পান্ডে আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। গত কালীপূজার সময় তুহিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কালীপূজায় তুহিনের কাছ থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করা হয়েছিল। ওই সময় তুহিন ঝর্ণার কাছ থেকে তার ফোন নম্বর নেয়। পরে ফোন করে তুহিন নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সঙ্গে ঝর্ণাকে ঘুরতে যেতে বাধ্য করে। এর মধ্যে সে তুহিনের সঙ্গে সোনারগাঁ জাদুঘরে, শ্যামপুর ইকোপার্কে এবং সর্বশেষ ফতুল্লার পাগলায় অবস্থিত মেরী এন্ডারসনে ঘুরতে যায়। সর্বশেষ মেরী এন্ডারসনে ঘুরতে গিয়ে ঝর্ণা ধর্মের দোহাই দিয়ে তার সঙ্গে তুহিনের সম্পর্ক করা সম্ভব নয় বলে বুঝিয়ে আসে এবং গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে।
এদিকে ঝর্ণার বাবা ভারতের এক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ের বিষয়টি পাকা করছেন এমন সংবাদ পায় তুহিন। এ খবর পেয়ে বুধবার ভোর রাত ৪টায় ২টি মাইক্রোবাসে এসে ঝর্ণাদের বাড়িতে হানা দেয়। তুহিন ও তার সহযোগীরা ঝর্ণাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেন তার বাবা মনীন্দ্র অধিকারী এবং মা প্রজাপতি রানী। ওই সময় তুহিন মনীন্দ্র অধিকারীকে ছুরিকাঘাত করে এবং তুহিনের সহযোগীরা প্রজাপতি রানীকে মারধর করে। বাড়িতে হইচই শুনতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন ঝর্ণাদের বাড়িতে গিয়ে তুহিনসহ ৬ জনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আর গুরুতর আহতাবস্থায় মনীন্দ্র অধিকারীকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, ভুঁইগড় রগুনাথপুর এলাকায় এনামুল হকের বাড়িতে স্বপরিবারে বসবাস এবং বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন মনীন্দ্র অধিকারী। তিনি রাতের বেলা বাড়ি দেখাশোনা করেন এবং দিনে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার তিন মেয়ের মধ্যে মেঝ মেয়ে ঝর্ণা অধিকারীর (১৭) সঙ্গে ঢাকার তুহিন নামে এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের প্রেমের সম্পর্ক পরিবারের লোকজন জানত না। ঝর্ণার বিয়ে ঠিক করে পাগলার এক ছেলের সঙ্গে। ঝর্ণা এ বিয়েতে রাজি না হয়ে তার প্রেমিক তুহিনকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে দু’টি মাইক্রোবাস নিয়ে তুহিনসহ তার বন্ধুরা মঙ্গলবার গভীর রাতে রগুনাথপুরের বাড়ি থেকে ঝর্ণাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাবাসহ পরিবারের লোকজন তাদের বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঝর্ণার বাবা মনীন্দ্র অধিকারীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। মনীন্দ্র অধিকারীকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিহতের স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন সাতজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণকারীদের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা নিহত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ