দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
এ কথার মাঝে কোনও সন্দেহ নেই যে, অহী এবং নবুওতের দক্ষতা ছাড়া একজন নবীর মাঝে নবুওত ও রিসালতের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বাইরের বস্তুুসমূহে সেই জ্ঞান-বুদ্ধিই পাওয়া যায় যা সাধারণ মানুষের মাঝে হয়ে থাকে। এবং যেগুলোর মাঝে ইজতেহাদী ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শাহওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (র:)-এর মতে, এটা ইজতেহাদের দ্বিতীয় শ্রেণী। যার মাঝে প্রত্যেক নবীর ত্রুটি হতে পারে, যা তাঁর অহীর সীমারেখা, ইলহাম ও নবুওতের শক্তির আওতাভুক্ত নয়। বরং এগুলো মানবিক জ্ঞান-বুদ্ধির আলোকে এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা নির্বাহ হয়ে থাকে। তবে এই শ্রেণীর কর্মকান্ডের অনুসরণ করা অনুগামীদের উপর অপরিহার্য নয়। এর উত্তম উদাহরণ হচ্ছে খেজুর চাষের ঘটনা।
সহীহ মুসলিম শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) মদীনার বিভিন্ন খেজুর বাগানে গমন করে দেখতে পেলেন, কিছু লোক খেজুর গাছে আরোহণ করে কি যেন করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি করছ? একজন ভ্রমণসাথী বললো, এই লোকটি স্ত্রী খেজুর গাছগুলোতে পুরুষ খেজুর গাছের ফুল ঢেলে দিচ্ছে, যেন ফল বেশী পরিমাণে হয়, তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারছি না, এতে কি উপকার হবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, যদি এমনটি না করা হত, তাহলে ভালো ছিল। সহযাত্রী এই সংবাদটি বাগানের মালিকদের কাছে বলেছিল। এ সংবাদ শুনে সাহাবীদের মাঝে যারা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, তারা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কথামত কাজ করলেন এবং সে কাজ ছেড়ে দিলেন, এ বছর ফলন খুব কম হলো বা কম দেখা দিল। কিছুদিন পর তিনি পুনরায় সেই বাগানগুলোর পাশ দিয়ে গমন করার সময় লোকজন ফলনের কথা তুলে ধরলো। তিনি বললেন, আমি এমনিতেই নিজের বুঝ অনুসারে বলে দিয়েছিলাম। যদি তারা পূর্বতন পদ্ধতি আমল করলে উপকার পায় তাহলে করুক। তারপর বললেন, আমিতো একজন মানুষই; যখন তোমাদেরকে ধর্মের কোন হুকুম দেই; তখন তোমরা তা কবুল করো, এবং যখন স্বীয় রায় দ্বারা কিছু বলি তাহলে আমি তো একজন মানুষই। অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা নিজেদের দুনিয়ার কাজকে বেশী জান। তৃতীয় বর্ণনায় আছে, আমি একটি ধারণা করেছিলাম। আমার ধারণার উপর আমাকে অনুসরণ করো না। তবে যদি আল্লাহর তরফ হতে কোন কথা বলি তা পালন করো। আমি আল্লাহর উপর মিথ্যা কথা বলব না। এই তিনটি বর্ণনাই সহীহ মুসলিমে উক্ত আছে।
উপরোক্ত তিনটি বর্ণনায় তিনি স্বীয় নির্দেশকে ধারণা এবং দুনিয়ার কর্মকান্ড বলে অভিহিত করেছেন। এর দ্বারা একথা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, দ্বীন ও শরীয়ত সংক্রান্ত কার্যাবলীতে তাঁর প্রতিটি হুকুম ওয়াজিব এবং তা আল্লাহর তরফ হতেই হয়ে থাকে। কিন্তু ক্ষেত-খামার, ওষুধ, চিকিৎসা ইত্যাদি খালেসভাবে দুনিয়াবী কাজকর্ম বিশেষ। এক্ষেত্রে তিনি যদি কিছু বলে থাকেন, তবে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পরামর্শ দান করা বা ধারণা ব্যক্ত করা। একারণেই সাহাবায়ে কেরাম যে সকল কথায় নিজেদের পরামর্শ পেশ করতেন, তখন বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল “তাকি অহীর দ্বারা নাকি পরামর্শের ভিত্তিতে। তিনি যখন বলতেন, তা পরামর্শের ভিত্তিতে তখন তারা নিজেদের পরামর্শ পেশ করতেন। এবং তিনি তা পছন্দ করলে গ্রহণ করতেন।”
বদর যুদ্ধের সময় একস্থানে রাসূলুল্লাহ (সা:) শিবির স্থাপন করতে চাইলেন। একজন সাহাবী এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই স্থানটির নির্বাচন অহীর দ্বারা নিষ্পন্ন করেছেন, নাকি নিজের রায় অনুসারে। তিনি উত্তর করলেন, শুধু রায়ের দ্বারা। সাহাবী বললেন, সামরিক দিক থেকে এই স্থানটি উত্তম নয়, বরং ঐ স্থানটি উত্তম। তিনি তাঁর রায় পছন্দ করলেন এবং তদনুসারে আমল করলেন। অনুরূপভাবে তিনি সন্ধিস্থাপন, যুদ্ধ এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ডেও সাহাবীদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এবং তদনুরূপ আমল করেছেন। এ সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে প্রশাসনিক কর্মকান্ড অথবা সাধারণ কাজ-কর্মে সাহাবীদের পরামর্শ গ্রহণ করার নির্দেশ আল্লাহপাক প্রদান করেছিলেন। নির্দেশ হচ্ছে, “(জাগতিক কাজে) তাদের সাথে পরামর্শ করুন।” (সূরা তাওবাহ) অনুরূপভাবে পরীখার যুদ্ধের সময় হযরত সালমান ফারসী (রা:)-এর রায় মোতাবেক আমল করেছেন। কিন্তু যুদ্ধসংক্রান্ত বিষয়াবলী ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণে মানবিক বুদ্ধি-বিবেচনার দ্বারা নয়, বরং অহীয়ে ইলাহী ও নবুওতের প্রজ্ঞার দ্বারা যে সিদ্ধান্ত রাসূলুল্লাহ (সা:) গ্রহণ করতেন, এতে তিনি কাহারো সাথে পরামর্শ করতেন না, এমনকি কাহারো পরামর্শ গ্রহণও করতেন না। হোদায়বিয়া সন্ধির শর্তাবলী ও দফাগুলো যা সার্বিকভাবে আল্লাহর পরিকল্পনা ও শুভ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ছিল, সেগুলো পরিবর্তন করার জন্য হযরত উমর (রা:) এবং অন্যান্য সাহাবীগণও জোর আবেদন পেশ করেছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা:) এর প্রতি কোন কর্ণপাতই করেননি। পরবর্তী ভবিষ্যৎই বলেছিল যে, নবুতের প্রজ্ঞা প্রকৃতই সঠিক ও যথার্থ ছিল। অনুরূপভাবে অহুদ যুদ্ধের সঙ্কটময়কালে আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর তিনশত সঙ্গীসহ ফিরে যাওয়াকে পরোয়া করেননি এবং মদীনার বাইরে গমন করে সৈন্যব্যুহ রচনা করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। তারপর নিকটতম অতীতই আল্লাহর অভিপ্রায়ের গোপন রহস্য তুলে ধরেছিল।
এক সামান্যতম বুদ্ধি বিকাশের দ্বারা ও এই রহস্যের মর্মোদঘাটন হয়ে যাবে যে, বিশ্বের প্রতিটি বিষয়েই একটি নয় বরং দুটি বুদ্ধির পথ হয়ে থাকে। প্রথমত: সে বিষয় সংক্রান্ত মেধা-অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা যা তার মাঝে অর্পণ করা হয় এরই ভিত্তিতে শিক্ষা গ্রহণ, অনুশীলন এবং ব্যাপক পরিশ্রমের দ্বারা সে এতই উন্নতি এবং অগ্রগতি সাধন করে যার ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের খুবই গভীর এবং সূ² বিষয়াবলীকে সে একই দৃষ্টিতে উপলব্ধি করতে পারে। তাছাড়া অগণিত প্রতিবন্ধক ও বিপত্তিসমূহকে সামান্য ইশারাতেই অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু এই পরিমন্ডলের বাইরে আর দ্বিতীয় বুদ্ধি-বিবেচনা সাধারণ মানুষের মতই মামুলী ধরনের হয়। একজন মানুষ যে প্রকৌশল বিদ্যায় পারদর্শী, যন্ত্রকৌশল ও ভূগোলে অভিজ্ঞ, এগুলোতে তার অসাধারণ পান্ডিত্য বিদ্যমান। কিন্তু তার ক্ষেত্রে এটাও সম্ভব যে, সে খেজুর চাষাবাদ সম্পর্কে একজন সাধারণ মানুষ হতেও কম জ্ঞানের অধিকারী। একজন বিজ্ঞ দার্শনিক যিনি এরিষ্টটল ও সক্রেটিসের দর্শনে ভুল প্রতিপন্ন করতে পারেন, তিনি নির্মাণ বিদ্যায় সাধারণ শ্রমিক হতেও কম জ্ঞানের অধিকারী হতে পারেন। এগুলো দৈনন্দিন জীবনে মানুষের সামনে আপতিত ঘটনাবলীর উদাহরণ। কিন্তু একজন মর্যাদাবান মানুষ যিনি আত্মিক জগতের গোপন রহস্যাবলীও মা’রেফাতে রাব্বানীর গূঢ়মর্মসমূহ, পবিত্র তাত্তি¡কতা, চারিত্রিক ও ব্যবহারিক জীবনের নিয়ম-নীতি ও দায়িত্ব এবং শরীয়তের বিধান ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে উন্নত পর্যায়ের জ্ঞানের অধিকারী, তিনি কৃষিবিদ্যার ক্ষেত্রে একজন সাধারণ কৃষকসম হতে পারেন অথবা এ সম্পর্কে আদৌ জ্ঞানসম্পন্ন নাও হতে পারেন।
অনুরূপভাবে আম্বিয়ায়ে কেরাম দীন ও শরীয়তের ব্যাপারে অহী এবং নবুওতের শক্তির আলোকে যা কিছু বলেন, তা সার্বিকভাবে মূল উপকারীতা, আসল প্রজ্ঞা ও মনীষা এবং এর মাঝে ভুল বা ত্রুটির কোনই অবকাশ থাকে না। অপরাপর কর্মকান্ড যেমন বস্ত্র পরিধান করা, পানাহার করা, বসবাস করা, সা¤্রাজ্য পরিচালনা ও রাষ্ট্রনীতি, সংস্কার বিন্যাস, সন্ধি-শান্তি ও সামরিক সাজ-সরঞ্জামের তত্ত¡াবধান, যানবহান ও সওয়ারী ব্যবস্থাপনা, শিল্প ও কুটিরজাত পণ্যের প্রস্তুতকরণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ইত্যাদি জাগতিক বিষয়াবলী সংক্রান্ত সার্বিক উপকারিতার কথা বিবৃত করে তাঁরা এগুলোর ক্ষুদ্র ও অংশ বিশেষের পর্যালোচনাকে পরিহার করেছেন। এ সম্পর্কিত কোনও অকাট্য ফায়সালার প্রতি মুসলমানদেরকে বাধ্য করেননি। পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে মাত্র তিনটি কথা বলেছেন, প্রথমত : এমন বস্ত্র ও পরিচ্ছদ গ্রহণ না করা উচিত যদ্ধারা দেহের আবশ্যকীয় অঙ্গ ঢেকে রাখা যায় না। দ্বিতয়ত :, পুরুষেরা ঐ বস্ত্র গ্রহণ করবে না, যা মহিলাদের জন্য উপযোগী। আর মহিলারাও এমন পোষাক পরিধান করবে না, যা পুরুষের জন্য উপযুক্ত। তৃতীয়ত, ঐ পোষাক-পরিচ্ছদও পছন্দনীয় নয়, যদ্ধারা অহঙ্কার, অহমিকা এবং আত্মাভিমান প্রকাশ পায়। পানাহারের বস্তুরাজির মাঝে গোটা কয়েক নিষিদ্ধ বস্তু ছাড়া অন্যান্যগুলোর ক্ষেত্রে কোনই বিধি-নিষেধ নেই। সংস্কার, প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কতিপয় সাধারণ নিয়ম-নীতি তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। তা যেন শাহানশাহীসুলভ এবং নিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার ধারক ও বাহন না হয়। বরং মানুষের মাঝে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সমতার ভাব প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। এতে করে জরুরি কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত যেন পারস্পরিক পরামর্শ ও বিবেক-বিবেচনার মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। অনুরূপই অন্যান্য কাজ। মোটকথা এগুলোই হচ্ছে ঐ সকল কাজ যার মাঝে যুগ-কাল এবং সভ্যতার উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধিত হওয়ার সাথে সাথে পরিবর্তন ও বৈপ্লবিক কর্মকাÐ সংঘটিত হয়। এজন্য এগুলোকে সবসময়ের জন্য নির্ধারিত করে দেয়া আল্লাহর নিয়মতান্ত্রিকতার বিপরীত বলে বিবেচিত হয়।
নবুওতের প্রজ্ঞা ও শক্তির শরয়ী প্রমাণ :
পূর্ববর্তী আলোচনার নিরিখে একথা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, নবীগণের মাঝে প্রজ্ঞা ও মনীষার তিনটি দিক রয়েছে : (১) অহী, (২) নবুওতের শক্তি এবং (৩) সাধারণ মানবিক জ্ঞান। এগুলোর মাঝে প্রথমটি এবং তৃতীয়টি প্রতিপন্ন করার জন্য কোন দলীল প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। প্রথমত : এ দুটো দিক সর্বজনগ্রাহ্য ও স্বীকৃত। দ্বিতীয়ত : পূর্ববর্তী আলোচনার মাঝে এগুলো সম্পর্কে সার্বিক বিশ্লেষণ করাহয়েছে। কিন্তুু এখনো পর্যন্ত আমরা দ্বিতীয় দিক অর্থাৎ মালাকায়ে নবুওত বা নবুওতের শক্তির জন্য কোনও শরয়ী প্রমাণ উপস্থাপন করিনি। এ পর্যায়ে প্রথম কথা হচ্ছে এই যে, যে সকল ওলামা এর হাকীকত প্রকাশ করেছেন, তাঁরা নিজেদের ধ্যান-ধারণা মোতাবেক এর জন্য পৃথক পৃথক পরিভাষা বা প্রবচনের ব্যবহার করেছেন। কিন্তু অর্থ এবং মর্মের দিক হতে এর সবগুলোই এক ও অভিন্ন। সলফে সালেহীনদের মাঝে একে ‘ইলকা ফির রূহ’ বা অন্তরে ঢেলে দেয়ার কথা অনেকেই বলেছেন। নবীর আত্মিক মনীষা, অবিনশ্বর শক্তি ও সামর্থ্য এবং বর্ণনার শক্তি বলেও অনেকে ব্যাখ্যা করেছেন। (এ সকল শব্দাবলী ইমাম শাফেয়ী (রহ:)-এর কিতাবুর রিসালাতে আছে)
তবে ইমাম গাজ্জালী (রহ:) ও ইমাম রাজী (রহ:) এবং অন্যান্য তর্কশাস্ত্র বিশারদগণ একে ‘মালাকায়ে নবুওত’ বলে অভিহিত করেছেন। শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহ:) এবং অন্যান্য নীতিশাস্ত্রবিদ আলেমগণ একে পয়গাম্বরসুলভ ইজতেহাদের শক্তি বলে অভিহিত করেছেন। সুফীদের সাধারণ গ্রাহ্য পরিভাষায় একে ইলমে লাদুন্নী বলা হয়েছে। কিন্তু এসকল বিশ্লেষণের অর্থ প্রায় একই। অর্থাৎ নবীর মাঝে সেই পয়গাম্ভরসুলভ বুদ্ধিশক্তি, যা মানবিক বুদ্ধির ঊর্ধ্বে এবং দর্শন ও বিজ্ঞানের জটিল নিয়মাবলী যা তিনি স্বীয় রসানার দ্বারা প্রকাশ করেন।
আম্বিয়ায়ে কেরামের আল্লাহ প্রদত্ত উপহারাদির কথা পাঠ করুন, যার বিশ্লেষণ আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে করা হয়েছে, তাহলে- দেখতে পাবেন যে, ওহীর সুনির্দিষ্ট নেয়ামতের পর অন্যান্য নেয়ামতরাজির নামের তালিকায় ‘এলমে নবুওতের’ নামটিও সন্নিবেশিত আছে। যাকে কখনো জিকির ও খবর বলা হয়েছে। কখনো হিকাম বা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ের দক্ষতা, কখনো হেকমত বা প্রজ্ঞা, কখনো শরহে ছদর বা বক্ষ সম্প্রসারণ, কখনো বা তাফহীম বা জ্ঞান বুঝ, কখনো তালীম বা শিক্ষা দেয়া, কখনো ইরাআত বা দেখিয়ে দেয়া, বুঝিয়ে দেয়া বলা হয়েছে। এ সকল বিভিন্ন শব্দাবলীর অর্থ অহী হতে নীচে এবং মানবিক বুদ্ধি হতে উপরে ‘আকলে নববী’ ছাড়া আর কিইবা হতে পারে? এগুলোর দ্বারা অহীর মর্ম গ্রহণ করা যায় না এজন্য যে, এগুলোর উল্লেখ অহী হতে পৃথক। মানবিক বুদ্ধিও এজন্য বলা যায় না যে, মানবিক জ্ঞান কোনও নবীর জন্য কোন খাস পুরস্কার নয়। এই পুরস্কারটি প্রত্যেক মানুষকেই কিছু না কিছু প্রদান করা হয়েছে। এজন্য একে আকলে নবুবী এবং হেকমতে নবুবী ছাড়া কিছুই বলা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।