পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সচল হচ্ছে পুরনো মামলা : আটক হচ্ছেন জোটের শীর্ষ নেতারা বিএনপি নেতাকর্মীদের মাথায় ঝুলছে ২৫ হাজার মামলা
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটে নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে সারাদেশে বিএনপি ও ২০দলীয় জোটের শরীক দলগুলোর নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগ করা হলেও হঠাৎ করেই তা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পর সচল হতে শুরু করেছে দলটির নেতাদের অনেক পুরনো মামলা। এমনকি পুরনো মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও নতুন করে সেখানে আসছে কোনো কোনো নেতার নাম। কেবল বিএনপি নয়, আটক করা হচ্ছে শরীক দলের সিনিয়র নেতাদেরও। গত দুই দিনেই ২০ দলের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামীর আমির, নায়েবে আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করা হয়। এ অবস্থায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
গত রোববার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুই বছর আগে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আটজন পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। দলটির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ধারাবাহিক এসব কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীদের আটক করছে পুলিশ। এরই মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানার নাশকতার মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৬ অক্টোবর ধার্য করেছেন আদালত।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রামে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দুটি অনুষ্ঠানস্থল থেকে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে পুলিশ মোট ১০ জনকে আটকের কথা বললেও নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেনের দাবি করেন বিএনপি, তাদের সহযোগী সংগঠন এবং লেবার পার্টির ২৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। একই দিনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসাকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে দৈনিক বাংলা মোড়ে জেহাদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুলিশ তাকে আটক করে মতিঝিল থানায় নিয়ে যায়। এদিনই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে রাজধানীর ফকিরাপুলে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। এসময় মিছিল থেকে ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ ফারুকি হীরা, স্কুল বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সহ-সভাপতি সাজিদ হাসান বাবু, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল যুগ্ম সম্পাদক কাজী শহীদুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ফজলুল হক হলের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম, ছাত্রনেতা ইয়াসিন ভূঁইয়া, রায়সাহেব বাজার মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মিছিল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান শরিফ, মোঃ সালাউদ্দিন, ছাত্রদল নেতা মোঃ সোহান এবং রাজধানীর কাটাঁবন থেকে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের মিছিল থেকে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক ইমরানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আকরামুল হাসান বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এই অবৈধ সরকার ততই দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। তারা আবারও একটি ভোটার বিহীন এক পেশে নির্বাচন করা পায়তারা করছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কবর রচনা করতে চাচ্ছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই অবৈধ সরকার দেশব্যাপী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। তাদের নীল নকশার প্রথম সারিতে রয়েছে ছাত্রদলের সক্রিয়, মেধাবী এবং তরুন ছাত্রনেতারা। তারা অবিলম্বে গ্রেফতার ছাত্রদল নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
এর আগে গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমেদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সেক্রেটারি জেনারেল শফিউর রহমানকে পুরনো দুটি মামলায় গ্রেফতার করে। ওই দিনই ঢাকার মিরপুরে দুই বছর আগের নাশকতার দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরবসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি বানোয়াট ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দায়ের করে সোহেলকে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। গতমাসে বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহ মোঃ মেহেদী হাসান হিমু, জাসাস সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুল আলম পিপলু, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু নুর ওয়ালিদ, শাহজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান জিয়া, নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা গুলজার আলী, মোঃ ইব্রাহিম, টি এম নাজ মাহমুদ, মঈনুল ইসলাম সুজন, যুবদল নেতা ফজলে এলাহী, ছাত্রদল নেতা মোঃ সুজন, ফরহাদ, জর্জ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলামকে (ভিপি সাইফুল) একটি মামলায় আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ১৮ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক বখতিয়ার আহমেদ কচি এবং কোতোয়ালী থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেনকে গতকাল গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৪ আগস্ট নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে স্বেচছাসেক দলের সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলাম পলাশ, জাফর আহম্মেদ, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য মোঃ সুজন, মোঃ শিমুল, স্বেচ্ছাসেবক দল কামরাঙ্গির চর থানা আহবায়ক কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম, জাকির হোসেন ও মোঃ ইসলামসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, বিএনপির চার লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ২৫ হাজার মামলার খগড় ঝুলছে। এসব মামলায় কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এখনো জেলের ঘানি টানছেন। বিএনপির দফতর, আইনি দিক দেখেন এমন কয়েকজন নেতার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ-আন্দোলনের আড়াই বছরে সহিংসতার অভিযোগে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীর নামে ১৫ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। এসব মামলা হয়েছে দন্ডবিধি, বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিভিন্ন ধারায়। জামিন নিয়ে বেরিয়ে এলেও দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সবসময় গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিএনপির মধ্যম সারির নেতারা আবারও বাসাবাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার তার নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে বিএনপির ওপর নতুন করে গ্রেফতারের খড়গ চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। উদ্দেশ্য, বিএনপিকে সুসংগঠিত হতে না দেওয়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর আটটি জোনেই প্রায় ৬ শতাধিক মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামির মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও বরকতউল্লাহ বুলুসহ বিএনপির বিপুলসংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিনা ভোটের সরকার বিএনপিসহ দেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানী অব্যাহত রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী, লেবার পার্টি ও এনডিপির কতিপয় রাজনীতিককে মিথ্যা অভিযোগে আটক করা কোন সুস্থ রাজনীতি নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার কোনভাবেই বিরোধী মতকে সহ্য করছে না এবং তারা তারা রাজনীতি বিজ্ঞানের পরিভাষা থেকে গণতন্ত্র শব্দকে মুছে দিতে চায়-যা এককদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য অতীব জরুরী। তিনি বলেন, মানুষের কন্ঠরোধে নানাবিধ নীতি প্রনয়ণের পরও স্বস্তি না পেয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুরভীসন্ধিমূলক বানোয়াট মামলা দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দুরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়-বিশ্বের সকল স্বৈরাচারী সরকারকেই জনগণের সম্মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হতে হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে আটক নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।