পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: শামসুল আলম খান : মাত্র ১৭ মাস বয়স বীথির। অবুঝ এ শিশুকে এ বয়সেই মায়ের কোলছাড়া হতে হয়েছে। তিনদিন যাবত হাসপাতালের বিছানায় অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে শুয়ে কাটাতে হচ্ছে। জ্ঞান ফিরলেও কাটছে না উৎকণ্ঠা। ৭২ ঘণ্টা না পেরুলে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না চিকিৎসকরাও। শয্যাশায়ী মেয়ের চিন্তায় চোখের কোণ বেয়ে নিঃশব্দে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে মা-বাবার। মেয়ে বীথি আবারো সুস্থ হয়ে উঠবেন, স্ত্রী বিউটিকে এমন সান্ত¦না দিচ্ছেন বাবা দীন ইসলাম। পরক্ষণেই নিজেই আবার হাহাকার করে উঠছেন। নিজের বুকে মেয়েকে নিতে ব্যাকুল হয়ে আছেন মা বিউটি।
সোমবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারী বিভাগে গিয়ে দেখা গেলো এমন দৃশ্যের। শিশু কন্যার চিন্তায় দিশেহারা অসহায় দীন ইসলাম বলেন, ‘ওর জ্ঞান ফিরছে। আমারে বাবা বাবা কইরা ডাকছে। আল্লাহই ওরে বাঁচাইয়া রাখছে।’
ময়মনসিংহের নান্দাইলের চন্ডিপাশা গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত রোববার সকালে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী শাহাজাহান ছুরিকাঘাত করে একই গ্রামের দীন ইসলামের ১৭ মাস বয়সী শিশু বিথীকে। বিথীর পেট দিয়ে ছুরি ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। বেরিয়ে যায় নাড়িভুঁড়ি। অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকে শিশুটি।
ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ওইদিনই দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে শিশু বিথীর পেটে অস্ত্রোপাচার করে ছুরি বের করা হয়। পরে ওইদিনই শিশুটির জ্ঞান ফিরে। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালের শিশু সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে আলাপ হয় বিথীর বাবা দীন ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, বছর পাঁচেক আগে নিজের ১৩ শতাংশ জমি বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় শাহজাহানের সঙ্গে ব্যবসা করতে যান। পরে শাহজাহান পুরো টাকা আত্মসাত করেন। সব হারিয়ে ফতুর হয়ে যান দীন ইসলাম।
এবার শাহজানের শ্যান দৃষ্টি পড়ে দীন ইসলামের ৯ শতাংশ জমির দিকে। ওই জমিতে বিথীর বাবা ক’দিন আগে একটি ঘর নির্মাণ করেন। ঘটনার আগের দিন শনিবার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে সেই ঘর ভেঙে দেন। আর পরদিন রোববার শাহজাহান তার নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন দেশীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে পুনরায় দীন ইসলামের বাড়িতে হানা দেন।
সন্ত্রাসীদের আক্রমণের মুখে দৌড়ে তিনি পালিয়ে যান। আর কন্যা শিশু বিথীকে ঘর থেকে বের করে পেটের ভেতর শাহজাহান নিজেই ছুরি চালান, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন দীন ইসলাম।
বিলাপ করে বলেন, ‘আমার মালিক সরকার। আমারে শাহজাহান নিঃস্ব কইরা দিছে। আমার শেষ সম্বলটুকুও অহন কাইড়া নিবার চাইতাছে। আমার মাইয়াডারে পাড়াইয়া মাইরা ফেলবার চেষ্টা করছিল। আল্লাহই মাইয়্যারে বাঁচাইয়া রাখছে। আমি শাহজাহানের বিচার চাই।’
বিথীর পাশের শয্যায় শুয়ে শুয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন মা বিউটি বেগম। বলেন, ‘মাইয়্যার জ্ঞান ফিরছে। ওরে ডাক্তাররা ঘুম পাড়াইয়া রাখছে। তারা কইতাছে অহন একটু ভাল। কইছে ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বুঝা যাইতো না।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, ‘বিথীর অবস্থা আগের চেয়ে ভাল। তবে ৭২ ঘণ্টা না গেলে তাকে সংকটমুক্ত বলা যাবে না।’
এদিকে, ১৭ মাস বয়সী শিশু বিথীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় নান্দাইল মডেল থানায় বাবা দীন ইসলাম বাদী হয়ে শাহজাহানসহ ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখনো জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়েও ক্ষোভ ঝাড়েন বিথীর মা-বাবা।
তবে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, সম্ভাব্য স্থানসমূহে পুলিশী অভিযান চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।