Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবৃদ্ধি প্রশ্নে ব্যাপক মতপার্থক্য

চালের দাম বাড়ার পেছনে সরকারকে দায়ী করল বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকারের লক্ষ্য ৭.৪, বিশ্বব্যাংকের ৬.৪ এবং এডিপি’র হিসেবে ৬.৯ শতাংশ
বরাবরের মত চলতি অর্থবছরেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সরকারে সঙ্গে মিলছে না। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাব সরকারের কাছাকাছি থাকলেও বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বড় পার্থক্য রয়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হলেও এডিবি বলেছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর গতকাল বিশ্বব্যাংক বললো ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা।
গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদন ‘গেøাবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ প্রকাশকালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিরও পূর্বাভাস দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশ সরকার এ বছর ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে আশার কথা শুনিয়েছে, তা অর্জন করতে হলে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেসরকারি খাতে ‘প্রচুর বিনিয়োগ’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা প্রায় অসম্ভব। আর এ কারণে চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি হবে না। এই প্রবৃদ্ধি হবে মূলত শিল্প ও সেবা খাতনির্ভর।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতপার্থক্য প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল ইসলাম বলেন, সরকারি হিসাবের ভিত্তি ব্যাপক তথ্যভিত্তিক। সরকার সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। অন্যসব প্রতিষ্ঠান নিজেরে দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রক্ষেপণ করে। সব সময়ই এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সঙ্গে সরকারের পার্থক্য হয়। তিনি বলেন, ওই সব প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রক্ষেপণ স্থির থাকে না। এক সময়ে এসে তাদের হিসাব সরকারের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে যায়।
তবে এই সিনিয়র সচিবের সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের। তিনি বলেন, ‘সাধারণত সরকার যে প্রাক্কলন করে সেখানে রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের প্রতিফলন থাকে। এজন্য হয়তো সরকারের হিসাবের সঙ্গে সংস্থাগুলোর হিসাবের পার্থক্য থাকে।
এদিকে পর পর দুটি বড় বন্যা ও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারি যে সব সিদ্ধান্ত তা বাস্তবায়নে সময় নেওয়া হয়েছে। শুল্ক কমানো হলে সে অর্ডার বন্দরে পৌঁছতে সময় লেগেছে। ফলে সরকারের কাছে চালের মজুদ না থাকায় ব্যবসায়ী তথা বাজার সুবিধা নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ বলেন, বন্যার কারণে ২০ লক্ষ টন চালের ক্ষতি হয়েছে। তার উপর মিল মালিকরা মজুদ করে রাখে যদিও এটা প্রমাণ করা কঠিন। অনেক সময় সরকারি সিদ্ধান্তের বিলম্বেও চালের দাম বাড়তে দেখা যায়। কোন দেশ থেকে কি পদ্ধতিতে চাল আমদানি করবে সে সিদ্ধান্ত নিতেই দেরি হয়ে যায়। আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েও বাস্তবায়নে বিলম্বের ফলে শুল্ক কমার আসায় চাল নিয়ে অনেক ট্রাক সিমান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে চালের দাম বেড়ে যায়। জাহিদ বলেন, কয়েকদিন আগে ভারত থেকে চাল আসাছে না এমন গুজব ছড়ানো হয়। দোখা যায় এর পরই এক ধাপ চালের দাম আবারও বাড়ে।
বিশ্বব্যাংকের গেøাবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশি, ভালো এবং সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। সংস্থাটি বলছে, সা¤প্রতিকালে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমে গেছে। এর পেছনে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, আর্থিকখাতের সংস্কার না হওয়া ও ইনফরমাল লেবার মার্কেটের আধিপত্য বড় কারণ।
প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান সুযোগ সে তুলনায় বাড়ছে না। সা¤প্রতিক সময়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমেছে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বেড়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১১-২০১৬ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মহীনতার এই নেতিবাচক প্রভাব যুব ও নারীদের ওপর বেশি পড়েছে। তাই সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মূল চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে সেটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু এ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। আমাাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে গতি কমে গেছে। গার্মেন্ট সেক্টরে কর্মসংস্থান কমেছে। বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান এ সেক্টরে বেশি হলেও স¤প্রতি তা কমে গেছে।
গত দুই বছরে রেমিট্যান্স কমেছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, গত দুই বছরে ১৬ লাখ শ্রমিক দেশের বাইরে গেছে। কিন্তু তারপরও রেমিট্যান্স কমেছে। আমাদের মনে হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে অনেক শর্ত থাকায় অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসছে।
এদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হবে। তাই চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৬ দশমিক ৯ ভাগ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একই সঙ্গে সরকার রাজস্ব আদায়ে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সেটি আদায়ও চ্যালেঞ্জ হবে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ