দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন : মধ্যমপন্থা কি ধ্বংস থেকে রক্ষা করে?
উত্তর : মুসলিম বলতে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপনকারীদেরকে বুঝায়। আর ইসলামের সৌন্দর্য্যই হলো ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা ও উদারতা। দৈনন্দিন জীবনে মুসলমানরা শত প্রতিকুল পরিবেশেও ধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়া ধৈর্য্য কিংবা সবরের মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ রয়েছে। হযরত রাসূল (সা) সকল পরিবেশ পরিস্থিতি সবরের সাথে মোকাবিলা করেতেন। যার ফলে হযরত রাসূল (সা) এর জামানায় মুসলমানরা সকল ক্ষেত্রে সাফল্য পেতো। উগ্রতা, হিংস্রতা ও ক্রোধ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মধ্যমপন্থাই হলো সাফল্য লাভের একমাত্র চাবিকাঠী। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থী মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের উপর সাক্ষী হয়ে থাকতে পারো।’ (সূরা বাকারা:১৪৩)।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আথিতেয়তা ও উদারতার জন্য মুসলমানেরা প্রশংসিত। মুসলমানেরা মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী। মুসলমানদের নিকট পৃথিবীর সকল জাতি গোষ্ঠীর লোকজন নিরাপদ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন,‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহŸা এবং হাত থেকে সকল মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (সহীহ বুখারী: ০৯)। উগ্রপন্থা কিংবা চরমপন্থা হলো শয়তানের পথ। নিজেদেরকে ধ্বংসের হাত থেতে রক্ষা করতে হলে চরমপন্থা পরিহার করতে হবে। শয়তান সব সময় মানুষকে মন্দ কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। শয়তানের অনুসারীরা মানুষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লাগানোর জন্য চেষ্টা করে। তাই মানুষরূপী শয়তান সম্পর্কে মুমিনদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শক্র।’ (সূরা বাকারা:২০৮)।
পৃথিবী জুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। অনেকই ভালো মন্দ পাপ পূণ্যে এসবের বিচার বিশ্লেষণ করছে না। দুর্বলের উপর সবলের দখল নির্যাতন হামলা মামলা অত্যাচার শোষন জুলুম চলছেই। মুসলমানদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর নিকট থেকে শুরুতেই শয়তান মানুষের মনের মধ্যে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছিলো। মুসলমানের ঈমান আকিদা ঐতিহ্য ধ্বংস করতে শয়তান সদা সর্বদা তৎপর রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তৎপর থাকবে। কিছু সংখ্যক যুবক শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা মুসলমানের জন্য আশংকার বিষয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেনো তোমাদেরকে আল্লাহর শ্নরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা মুনাফিকুন:০৯)।
দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভোগ বিলাস হিংসা নিন্দা পরিহার করে চলতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও মধ্যমপন্থার অনুসরণ করতে হতে হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘হে ঈমানদারগণ, কোনো সম্প্রদায় যেনো অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আরো কোনো নারীও যেনো অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম।’ (সূরা হুজরাত:১১)।
পৃথিবীর সর্বত্রই মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশে রোহিঙ্গা মুসলমানরা কি পরিমান নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের সরকার ও জনগণকে এ ব্যাপারে মানুষরূপী শয়তান সম্পর্কে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। সকল পরিস্থিতি মোকাবিলায় মধ্যমপন্থার অনুসরণ করতে হবে। সমকালীন সংকট মোকাবিলায় মধ্যমপন্থা হিসেবে কুটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। এখানে কুটনৈতিক তৎপরতা মধ্যমপন্থা হিসেবে ভ‚মিকা রাখবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, যদি মুমিন হয়ে থাকো তবে বিজয় তোমাদের হবেই।’ (সূরা আলে ইমরান:১৩৯)।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।