Inqilab Logo

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রূপকথাকেও হার মানায় সাগর তীরের মনোরম ‘স্বর্ণদ্বীপ’

বিশেষ সংবাদাদাতা, নোয়াখালী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এক সময়ের খর স্রোত উত্তাল মেঘনা, পরবর্তীতে দস্যু বাহিনীর অভয়ারণ্য দূর্গম বিশাল জাহাইজ্যার চর অতঃপর সমৃদ্ব স্বর্ণদ্বীপ। এ যেন রুপকথার গল্পকে হার মানায়। বাস্তবে সেটাই ঘটেছে সরকারের সদিচ্ছা এবং দেশ প্রেমিকে সেনা বাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে। আশির দশকে এ পথ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মালবাহী কার্গো জাহাজ ও ভারী ট্রলার চলাচল করত। নব্বইয়ের দশকের কোন এক সময় দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় একটি মালবাহী জাহাজ ডুবে যায়। পরবর্তীতে উত্তাল মেঘনার বুক চিরে বিশাল চর জেগে উঠে। তখন স্থানীয় জেলেরা এটির নামকরণ করে জাহাইজ্যার চর। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় অধ্যায় অর্থাৎ জাহাইজ্যার চরের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে দেশী বিদেশী শক্তিশালী একটি সংঘবদ্ব অপরাধীচক্র। জলদস্যু ও বনদস্যু চক্রটি উপকূলীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছাড়াও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি, লুটপাট ও হত্যাসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সাধারণ মানুষ দূরের কথা তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত দূর্ধর্ষ অপরাধীচক্রের হাতে একাধিকবার নাস্তানাবুদ হয়। ২০১০ সালে জাহাইজ্যার চরের বনদস্যু সম্রাট বাসার মাঝি র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত হবার পর অপরাধী গোষ্ঠীর যবনিকাপাত ঘটে।
তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল মঈন উ আহমদ এখানে সামরিক বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপনের চিন্তাভাবনা করেন। যার ধারাবাহিকতায় সে সময় সেনা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার জাহাইজ্যার চর পরিদর্শন করেন। ২০১৩ সালে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ঠেঙ্গারচরের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও কুমিল্লা এরিয়ার হাতে ন্যস্ত করে। বর্তমানে এর আয়তন ৪৫০ বর্গকিলোমিটার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বীপটি সফরকালে এর নামকরন করা হয় ”জাহাইজ্যার চর” থেকে ”স্বর্ণদ্বীপ”। সামরিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি বিশাল চরটিকে বহুমুখী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেশ প্রেমিক সেনা সদস্যরা। স্বর্ণদ্বীপের দক্ষিন পশ্চিমে মেঘনা নদী, পূর্বে সন্ধীপ,পশ্চিমে হাতিয়া উপজেলার হরণী, চানন্দী ইউনিয়নসহ চেয়ারম্যান ঘাট এবং উত্তরে সূবর্ণচর উপজেলা। অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্বে ঠেঙ্গারচর পেরিয়ে রয়েছে বিশাল বঙ্গোপসাগর।
সেনাবাহিনী স্বর্ণদ্বীপকে আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। প্রতি বছর ৭টি ব্রিগেড গ্রæপ সামরিক প্রশিক্ষন গ্রহন করে। অর্থাৎ এযাবত ১৫টি গ্রæপ সফলভাবে সামরিক প্রশিক্ষন গ্রহন করেছে। এছাড়া বিশাল স্বর্ণদ্বীপে ৬০ হাজার ঝাউগাছ, ভিয়েতনাম থেকে সিয়াম জাতের ১৫শ’ নারিকের চারা, ২হাজার ফলদ গাছ রোপন করা ছাড়াও গরু, মহিষ, হাঁস, ভেড়া, মুরগি ও মৎস খামার রয়েছে। এখানে মহিষের দুধ থেকে উৎপাদিত পনির স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে সরবরাহ হচ্ছে। স্বর্ণদ্বীপ রক্ষায় ১শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়েছে। আগামীতে আরো ৩ টি শেল্টার নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে নির্মিত ২টি সাইক্লোন শেল্টারের প্রতিটিতে ২০ হাজার গ্যালন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং সোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দূর্যোগকালীন সময় প্রতিটি শেল্টারে ৫শ’ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষন কল্পে এখানে ২টি লেক খনন করা হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য ১ হাজার মিটার গভীর সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প খনন এবং বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ তৎসহ নদীভাঙন রক্ষাকল্পে ৭২ হাজার একর ভূমিতে বনায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ইতিমধ্যে ৬ হাজার ঝাউগাছ চারা রোপন করা হয়েছে এছাড়া হেলিকপ্টার থেকে সিড বোম্বিংয়ের মাধ্যমে ২ টন কেওড়া বীজ বপন করা হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপে চাষাবাদ ও বিভিন্ন খামারে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এত করে ১৭ হাজার স্থানীয় অভিবাসী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সর্বিক ব্যবস্থাপনায় ১১ পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক সামরিক মহড়া প্রত্যক্ষ করেন। এসময প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১১ পদাতিক ডিভিশনের ৯৩ সাজোঁয়া ব্রিগ্রেড কর্তৃক মহড়া সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের প্রতিফলন, যা একটি আধুনিক ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এসময় প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে গড়ে ওঠা স্বর্ণদ্বীপে সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকার সূ-পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এক কথায় স্বর্ণদ্বীপের বদৌলতে এতদ্বঞ্চলের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও কর্মসংস্থানের সূযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপকে কেন্দ্র করে আগামীতে এতদ্বঞ্চলে শিল্পকারখানা, পর্যটন, সমুদ্র বন্দর, মৎস প্রক্রিয়াজাত কারখানাসহ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:২১ এএম says : 1
    deshke unnoto korar iccha thekle jonogonke shathe niee kag korle kager mullayon buzte pare jati emonki ekti jatike unnoyoner model korte desher midiay jara kag koren tarai sobche beshi bebostha nite paren jodi tara desher proti premik o patrotic hon tobei jatike khub tara tari unnoyoner dhara bajito kore dite paren jerup latin americar desh shomuho korteche tara khub tara tari i devolupe hoee jacche jemon 100% okkhor gean shomponno etaito prothom jatike ondddhotto theke ber kora.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ