পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদের টাকা লোপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন।
গতকাল সোমবার সকালে (ভোর বেলা) টাকা চুরি যাওয়া ও তথ্য গোপন করে দায়িত্বহীন আচরণের জন্য অবিলম্বে আতিউরকে গভর্নরের পদ থেকে অপসারণ দাবি করে তিনি তার সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট লিখেছেন।
নিজের ফেসবুক পোস্টে টাকা চুরির বিষয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন এবং গভর্নর আতিউর রহমানকে ‘ড. মুহম্মদ ইউনুসের চেলা’ আখ্যায়িত করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি তুলেছেন।
এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফেসবুকের ওই ‘স্ট্যাটাস’ নিজেরই লেখা বলে জানান।
গভর্নরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ নেতা নুহ-উল-আলম লেনিন ফেসবুকে লিখেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির নৈতিক দায় গভর্নর আতিউর রহমান এড়াতে পারেন না। পরম আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় একটা কেলেঙ্কারির বিষয় মাসাধিক আগে জানা সত্ত্বেও আতিউর এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রী ও ব্যাংকিং বিভাগের সচিবকে জানাননি কেন?
অর্থ চুরির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেপে রাখায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম রোববার সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পর দুই বার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা হলেও সেখানে বিষয়টি গোপন করা হয়েছে।
সচিবের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে লেনিন প্রশ্ন তোলেন, বিষয়টি চেপে যাওয়ার এই চেষ্টা ‘কার স্বার্থ রক্ষার জন্য’? ‘এত বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা জানা সত্ত্বেও আতিউর কীভাবে নির্লিপ্ত থেকে দিল্লি ভ্রমণ করতে পারেন? কেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না?’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন চলতি বছর গভর্নর আতিউর রহমানের বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেন, ‘আতিউর ব্যাংকের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক সংগ্রহের জন্য গভর্নর পদের অবৈধ প্রভাব খাঁটিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বেসরকারি ব্যাংকের অর্থ ব্যয় করেছেন।’ এজন্য তদন্ত করে এর সত্যতা প্রমাণিত হলে আতিউরের ‘উপযুক্ত শাস্তি’ও দাবি করেন তিনি।
তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘কী এমন সৃজনশীল প্রবন্ধ রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে আতিউর সমৃদ্ধ করলেন যার জন্য এ বছর তাকে ‘সামগ্রিক প্রবন্ধের জন্য’ বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া হলো? এর পেছনেও নাকি অবৈধ প্রভাব কাজ করেছে?
তিনি লিখেছেন, ‘ফলে লেখালেখি করেন এমন ক্ষমতাবান আমলারাও বাংলা একাডেমিকে তাদের একাধিক বই প্রকাশ/অনুবাদ এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদানে বাধ্য করেন। অধস্তন কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে আতিউর ও বড় আমলা গংরা পুরস্কার/পদক এবং নাম কেনার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে অবিলম্বে তা বন্ধ না করলে জাতির কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।”
ফেসবুকে এই স্টাটাস লেখার ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম নীতি নির্ধারক নুহ-উল আলম-লেনিন লিখেছেন, কোনো দলীয় অবস্থান থেকে নয়, একজন ‘সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক’ হিসেবে নিজের এই অভিমত প্রকাশ করলাম। সংশ্লিষ্ট কারও সাথে আমার কোনো শত্রুতা বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই। সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থে আমি জেনে বুঝে আমার অভিমত প্রকাশ করছি।
প্রসঙ্গত: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ওই বছর ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আতিউর রহমান। এরপর ১০১৩ সালের এপ্রিলে সরকার তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি বছরের ২ আগস্ট আতিউর রহমানের অবসর সীমার ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তার এ পদে থাকার কথা।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ারার ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে প্রথম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি দুটি দেশেই ব্যাপক আলোচনায় আসে। ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত বিশ্বে ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে ‘অন্যতম বড়’ বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতেই অর্থ চুরির বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানতে হয় প্রায় এক মাস পর। তিনি পত্রিকা পড়ে এ বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছে তাকে ‘অযোগ্যতা’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থ চুরির বিষয়টি চেপে রাখার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুহিত বলেছেন, এই ‘স্পর্ধার’ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
ঘটনা জানাজানির পর থেকেই বিএনপি গভর্নরের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করে তাদের দু’জনের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুদিন আগে বলেছেন, গভর্নরকে অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।