পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। সর্বশেষ গোডাউনে গোডাউনে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এতকিছুর পরও বাজার নিয়ন্ত্রণ পরের কথা এখন টাকা দিয়েও চাল পাওয়া যাচ্ছে না বলে খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষে অভিযোগ উঠেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চালের দাম বৃদ্ধি পেলেও আমদানী শুল্ক কমানোর পর বাজার স্থিতিশীল হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। চাল ব্যবসার সাথে জড়িত একজন ব্যবসায়ী বললেন ব্যবসায়ীদের দিকে নজর দেয়ার আগে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির দিকে নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তার মতে সরকারি, বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যবসায়ীদের সহজশর্তে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেই টাকায় ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টন ধান ও চাল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। তার মতে বড় বড় মিলার ও ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের ঘরে চালের চেয়ে ধানের মজুদ বেশী রয়েছে। অথচ চাল নিয়ে হৈ চৈ হলেও ধান নিয়ে কিছু হচ্ছে না। ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের টাকায় মজুদদারী ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠায় গত কয়েক বছরে হাসকিং মিল বন্ধ রেখে মজুদদারী ব্যবসাকে বেছে নিয়েছে অনেকেই। পরিস্থিতির আলোকে বড় বড় মিলার ও মজুতদার ট্রেডিং ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে সিন্ডিকেট করেই বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। এ অবস্থায় অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে সিসি ও প্লেজ ঋন সেবা গ্রহনকারী ট্রেডিং ব্যবসায়ী ও মিলারদের তালিকা নিয়ে অভিযান চালালে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরের বাজারে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে থেকে ১০ থেকে ১২ টাকা। চালের মুল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায় থেকে বড় বড় মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করা হচ্ছে। এ জন্য গুদামজাতকারী মিল মালিকদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে প্রশাসন। যদিও মিল মালিকরা এই অভিযোগ মানতে রাজী নয়। তাদের মতে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি ও আমদানী নির্ভরতা বেড়ে যাওয়াকে চালের দাম বাড়ার কারন হিসাবে উল্লেখ করেছে। এক সপ্তাহ আগে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল মিল মালিকরা বিক্রি করছিলো ২,৪০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা। এখন তা বিক্রি করছে ২,৭৫০ থেকে ২,৯০০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিআর-২৮ চাল ২,৩৫০ টাকার স্থলে ২,৬০০ টাকা, স্বর্ণা ২,১০০ টাকার স্থলে ২,৩৫০ টাকা, হাইব্রিড মোটা ১,৮০০ টাকার স্থলে ২,২০০ টাকা এবং বিআর-২৯ চাল এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২,৩০০ টাকার স্থলে ২,৫৫০ টাকায় বিক্রি করছে মিল মালিকরা। মিল মালিকদের সোজা হিসাব বাজারে ধানের দাম বাড়লে চালের দাম বাড়বেই। কারন ধান থেকেই চাল হয়।
অপরদিকে বাজার ও অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত মহলের মত ভিন্ন। সরকারী ও বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংকগুলি’র কথিত অর্থনৈতিক সেবাকে পুজি করে মিলার ও মৌসুমী ট্রেডিং ব্যবসায়ীরা ঘরে বসে কেটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে। মফস্বল অঞ্চলে সরকারী ও বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংকগুলির দেয়া সিংহ ভাগ ঋন সিসি ও প্লেজ খাতে।্ উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে ঋনের পরিমান মোট ঋনের ৫ শতাংশ নয়। আর যে টুকু উৎপাদনমুখী শিল্প ঋন রয়েছে তার পূরোটাই সরকারী ব্যাংকগুলি। লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে সরকারী ও বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংকগুলি ঋনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আবার বিভিন্ন অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলি বাৎসরিক নবায়নের নামে সহজ শর্তে কোটি কোটি টাকা ঋন প্রদান করছে। ফলে মৌসুমের শুরুতেই কৃষকের কাছে থেকে ধান ক্রয় করে গুদামজাত করছে বড় বড় মিলার ও ট্রেডিং ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট হচ্ছে মিলার ও মজুদদারদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানালেন, দিনাজপুরের বেসরকারী ব্যাংকগুলি বেঁচে আছে সিসি ও প্লেজ ঋনের উপর। ব্যাংকগুলির সিংহভাগ টাকা ব্যবহৃত হচ্ছে ধান, ভুট্টা মজুদে। মৌসুম শুরুর পর ৪ থেকে ৬ মাস মজুদকৃত ধান ও ভুট্টা বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়ে ব্যাংকের সুদ পরিশোধ করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা হয়ে থাকে। একজন ধান ব্যবসায়ী জানালেন চলতি বছর যে দামে ধান কিনেছেন বর্তমানে যা দাম তাতে এক বস্তা ধানে লাভ হয়েছে ৭ থেকে ৮’শ টাকা। তাদের মতে বাজারে সংকট না হলে দাম বাড়ে না। তাই মৌসুমের শুরুতেই তাদের ধান কিনে রাখতে হয়। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধান ব্যবসায়ী সোহরাব আলী জানান, তাদের কাছে বোরো মৌসুমে এবার ৭৫ কেজির প্রতিবস্তা মিনিকেট ধান ১,৭০০ টাকা, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ ধান ১,৬০০ টাকা এবং হাইব্রিড মোটা ধান ১,৫০০ টাকা দরে ক্রয় করেছে মিল মালিকরা। এই হিসেবে মিলের উৎপাদন খরচসহ প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৩৬ টাকা, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চাল ৩৩ টাকা এবং প্রতিকেজি হাইব্রিড মোটা চাল ৩০ থেকে ৩২ টাকার বেশী হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বর্তমানে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল ব্যবসায়ীদের বস্তার হিসেবে অনুযায়ী প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৫৫ টাকা, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চাল ৫১ টাকা এবং হাইব্রিড মোটা চাল কিনতে হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। মিল মালিকরা তাদের বাজার থেকে ধান কেনা ও উৎপাদন খরচ ধরে বস্তার হিসেব অনুযায়ী প্রতি কেজি চাল গড়ে প্রায় ২০ টাকা বেশী দরে বিক্রি করায় বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে চালের দাম।
একটি সুত্র মতে দিনাজপুরের বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, কাহারোল, ফুলবাড়ী, হাকিমপুর উপজেলা, ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গি উপজেলাসহ বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁ জেলাতে বিপুল পরিমান ধান মজুদ রয়েছে। বড় বড় মিলারদের গোডাউনে থাকা ধান ও ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের গোডাউনে মজুদ থাকা ধান বাজারে আসলে তাৎক্ষনিকভাবে সংকট কিছুটা হলেও কেটে যাবে। তবে গোডাউনের ধান বাজারে আনতে নিরপেক্ষতার পরিচ্ছ দিতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে। কেননা হাজার হাজার টন ধান মজুদের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন অবগত রয়েছে। প্রভাবের কারনে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে তাদের সংখ্যতাও রয়েছে। তাই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলেও প্রকৃত মজুদদার টিকিটিও নাড়া সম্ভব হয়নি। তারা ও তাদের গোডাউন রয়েছে বহাল তবিয়তে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।