পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘জাতিসংঘের মহাসচিব, দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী যাই হও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সইয়ের টাকা ছাড়া চলতে পারবে না। দেশের ভিক্ষুক থেকে শুরু করে উঁচুতলার ব্যবসায়ীদের হাতে যে টাকা তা গভর্নরের সই দিয়েই তৈরি। যার সইয়ে দেশের টাকা তৈরি হয়, সেই গভর্নর হওয়া চাট্টিখাটি কথা নয়। সবার ভাগ্যে সে পদ জোটে না।’ বলেই চায়ে চুমুক দিলেন ভদ্রলোক। অতঃপর বললেন, ওই পদের মহাসম্মানিত হয়েও ড. আতিউর রহমান শুধু রবীন্দ্র গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সাহিত্যচর্চা আর ব্যাংকিং এক জিনিস? গতকাল শাপল চত্বরের ফুটপাতে চায়ের দোকানে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মচারী। তার সঙ্গী বললেন, হাজার কোটি টাকা চুরি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে নানা মন্তব্য আসছে। গোয়েন্দায় অফিস ভরে যাওয়ায় এখন আমরা সাধারণ কর্মচারীরা বিপদের মধ্যে আছি। অন্য যারা চা খাচ্ছিলেন তারাও যেন কান খাড়া করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তার কথা শোনার জন্য। গরমের দিনে মতিঝিলে পথচারীদের গা ঠা-া করার অন্যতম জায়গা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের গাছ। শাপলা চত্বরের পাশের ওই গাছের নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই গা জুড়িয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন বিল্ডিংয়ের প্রবেশমুখে নতুন টাকা বিক্রির হাট বসে। চা-পান-সিগারেট-পিঁয়াজু-পুরি-সিঙ্গারা-ছোলাবুটের পসরা বসে নিত্যদিন। যারাই ওই পথে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন, তারা কয়েক মিনিটের জন্য হলেও গা ঠা-া করতে দাঁড়িয়ে যান। চৈত্র আসার আগেই গরম পড়ায় গতকালও ঠা-া বাতাসে দাঁড়াতেই চোখে পড়লে বেশ মানুষ ভিড় করছেন। জোড়া জোড়াভাবে দাঁড়িয়ে কেউ গল্প করছেন, কেউ চা-পিঁয়াজু নিয়ে ব্যস্ত। কেউ সিগারেট ফুঁকছেন। নতুন টাকা বিক্রেতা এক মহিলা কাছে আসতেই একজন খেকিয়ে উঠলেন, গ্রাহকরা নতুন টাকা পায় না, অথচ চোরাপথে নতুন টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। নতুন এ টাকা ব্যাংকের সিন্ডিকেট করে দেয়; প্রশাসন জানে না? সঙ্গী বললেন, দূর মিয়া রাখো। নতুন টাকা, হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে, অথচ ব্যাংকের দায়িত্বশীলরা চোর ধরার বদলে খবর গোপন রেখেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিবকে খবর জানানো হয়নি। এই এক মাসে কয়েকটি নীতিনির্ধারণী বৈঠক হয়েছে। কিন্তু টাকা চুরির বিষয় তোলা হয়নি। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনিরাপদ, অথচ গভর্নর আছেন রবীন্দ্র বন্দনা নিয়ে। এক মাস আগে হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছে, অথচ তিনি গেছেন ভারতে রবীন্দ্র বন্দনা করতে। এটা কি দায়িত্বশীলতার পরিচয়? ব্যাংকের প্রতি মানুষ আস্থা রাখবে কেমন করে?
ব্যাক্তিগতভাবে ড. আতিউর রহমান সজ্জন মানুষ। গরিব ঘরে জন্ম নেয়া এই অর্থনীতিবিদ অস্ত্রহাতে রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। প্রখ্যাত রাজনীতিক অলি আহাদের ব্যক্তিগত সহকারী মুন্সি আবদুল মজিদ আর আতিউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের সময় তোলা ছবি দেখেছি। ১৯৫১ সালে জামালপুরে জন্ম নেয়া আতিউর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়া শেষ করে ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি করেন। বিআইডিএসের গবেষক হিসেবে কাজের পর পালন করেছেন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের পহেলা মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব নেন। পরে সে দায়িত্ব আবার বৃদ্ধি করা হয় দলীয় আনুগত্যের যোগ্যতায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার আগে একটি এনজিওর হয়ে বাংলা ভিশনে ‘নদীপারের মানুষের জীবনচিত্র’ নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করতেন। প্রকৃতিপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনা হিসেবে পরিচিত আতিউর রহমান সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণের বিপ্লব নিয়ে গবেষণামূলক লেখা লিখেছেন। তার লেখা ‘রবীন্দ্র চিন্তায় দারিদ্র্য ও প্রগতি’ প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক। তিনি রবীন্দ্রনাথকে গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল হিসেবে গণমানুষের সামনে দাঁড় করিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর্থসামাজিক ভাবনা-বিষয়ক চিন্তা-চেতনা নিয়ে রবীন্দ্র রচনা সংকলন ‘তব ভুবনে তব ভবনে’ রচনা করেছেন। গত বছর সিরডাপ মিলনায়তনে রবীন্দ্র নাথের ওপর লেখা এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় তিনি বলেছেন, আমার এ গ্রন্থ ১৫ বছরের কর্মপ্রচেষ্টার ফসল। রবীন্দ্রনাথ উৎপাদন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, গ্রামীণ কৃষি ও কৃষক অকৃষির সম্পূরক উন্নয়নে বিশ্বাসী ছিলেন। তা এ রচনা সংকলনে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। ওই অনুষ্ঠানে অ্যামিরেটস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, লেখিকা সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদসহ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা আলোচনায় বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা নিয়ে এ সংকলন রবীন্দ্র গবেষকদের কার্যকরী ফসল। এবারে একুশে বই মেলায় গেলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত সেদিনের নিয়মিত অনুষ্ঠানে আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতাউর রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন। রবীন্দ্রচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারায় গর্ববোধ করে তিনি বলেন, রবীন্দ্র নাথ আমার ধ্যান-জ্ঞান। আমি শয়নে-স্বপনে রবীন্দ্র নাথকে দেখি, তাকে বোঝার চেষ্টা করি। আমি রবীন্দ্র নাথকে নিয়ে রয়েছি বলে আমি গর্ব করি।
গরিবের ঘরে জন্ম নেয়ায় প্রতিবেশী ও দানশীলদের টাকায় লেখাপড়া করে বড় বিদ্বান হওয়া এবং ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, ধীরস্থির, স্টাইলিস্ট ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পর হৈচৈ পড়ে যায়। মানুষ তাকে নিয়ে ধন্য ধন্য করেন। তার পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এত বড় অঘটন ঘটার পরও তিনি ভারত সফরে গেছেন? এমন নানা আবোল-তাবোল চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ঠা-া বাতাসে শরীর বেশ ঠা-া হয়ে গেছে। চায়ে চুমুক দিয়ে অফিসের পথে পা বাড়াব এমন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গেটের দাড়োয়ানদের শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকের বড় কোনো কর্মকর্তার গাড়ি এসেছে; ভিতরে ঢুকবে। তাই হঠাৎ তাদের ব্যস্ততা। গাড়ি যাওয়ার জায়গা করে দিতে কিছুদূর সরিয়ে এক পথচারী বললেন, টাকা চুরি করে ব্যাংক ফোকলা করা হয়েছে, আর ব্যাংক অফিসারদের ঠাটবাট! পাশে ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সিগারেট ফুকছিলেন। তিনি বললেন, ভাই জানেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সর্বক্ষণ রবীন্দ্রচর্চা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে তিনি রবীন্দ্রচর্চার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করেছেন। ব্যাংকের ভিতরে রবীন্দ্রচর্চার জন্য অফিস পর্যন্ত করতে চান। সাহিত্যচর্চা আর ব্যাংকিং কি এক জিনিস? রবীন্দ্র নাথের সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকায় ব্যাংকের যা হওয়ার তাই হয়েছে। ওই ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গী (তিনিও বাংকের) সহকর্মীর কথার সঙ্গে যোগ করেন, আরে এই গভর্নর আসার পর থেকে ব্যাংক রবীন্দ্র নাথের নাট্টশালায় পরিণত করেছেন। তিনি সারাক্ষণ নাকি রবীন্দ্র নাথের সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন। সভা সমাবেশে তিনি রবীন্দ্র নাথের উক্তি দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন; শেষ করেন ওই রবীন্দ্র নাথের উক্তি দিয়ে। কি অফিসের বৈঠক কি বাইরের অনুষ্ঠান সর্বত্রই একই অবস্থা। আর এত সংবর্ধনা, পুরস্কার, তিনি যে নেন তার ১০ ভাগের এক ভাগও অন্যান্য গভর্নররা নেননি। পুরস্কার আর সংবর্ধনা নেয়ার পাগল গভর্নর। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে সংবর্ধনা নিয়েছেন। আবার এশিয়ার সেরা গভর্নর নির্বাচিত হওয়ায় ভারতের নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাকে এ সংবর্ধনা দেন, যার নেতৃত্বাধীন ব্যাংকে হাজার কোটি টাকা চুরির পরও মুক্ত বিহঙ্গের মতো হিল্লি-দিল্লি ঘুরে বেড়ান তিনিই সেরা গভর্নর! আবার তিনি ভারত গেছেন। অফিসের সময় শুরু হয়ে গেছে। তাই দ্রুত অফিসের পথে পা...।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।